Ajker Patrika

মুরাদনগরে ধর্ষণ, ভিডিও: ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি

 কুমিল্লা প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: আজকের পত্রিকার ফাইল ছবি
গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: আজকের পত্রিকার ফাইল ছবি

‘আমি মামলাটি করেছি, আমি ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু দিন দিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছি না, মানুষের ভিড়ে ঘরের পরিবেশও অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমার সন্তানেরা ঠিকমতো খেতে পারছে না, কান্না থামছে না।’ এ কথাগুলো কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার নারীর।

ওই নারী আরও বলেন, ‘আমি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি আমি এবং আমার পরিবার যেন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশে বসবাস করতে পারি—এটাই আমার প্রধান দাবি।’

মুরাদনগরে বৃহস্পতিবার রাতের ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। গতকাল সোমবার মুরাদনগর উপজেলার তিতাসপারের ওই গ্রামে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা যায়। নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও ছিলেন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

কেউ নিচ্ছেন সাক্ষাৎকার, কেউবা দিচ্ছেন আশ্বাস। একসঙ্গে এত মানুষের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবার। দুই সন্তান—তিন ও সাত বছরের অবুঝ শিশু আতঙ্কে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছে। বৃদ্ধ নানি চেষ্টা করছেন তাদের শান্ত রাখতে।

গতকাল দুপুর পর্যন্ত ভুক্তভোগীসহ তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও রোববার উচ্চ আদালত ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, ধর্ষণে অভিযুক্ত ফজর আলী ও তাঁর ছোট ভাই শাহ পরান ভুক্তভোগী নারীর পূর্বপরিচিতি এবং তাঁদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন ছিল।

শাহ পরানের মাধ্যমে ফজর আলীর সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ঘটে। ঘটনার দিন ফজর আলীর ওই ঘরে প্রবেশের বিষয়টি আগেই স্থানীয় কিছু যুবক জেনে যান। সেই তথ্য সজীব নামের এক যুবক শাহ পরানকে জানালে তিনি নিজের ভাইয়ের প্রতি ক্ষোভ থেকে তাঁকে আটকে এলাকাবাসীকে ডেকে এনে বিচার করতে বলেন।

অভিযুক্ত ফজর আলীর ভাই শাহ পরান বলেন, ‘আমার সঙ্গে এক বছর এবং ভাইয়ের সঙ্গে ছয় মাস সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে সে বাসায় যাতায়াত করত এবং ভাইয়ের কাছ থেকে ওই নারীর মা ৫০ হাজার টাকা ঋণও নিয়েছিলেন। এতে আমাদের পরিবারেও অশান্তি চলছিল। আমি ঘটনাটি তার শ্বশুরবাড়িতেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ না হওয়ায় ক্ষোভে ছিলাম। সজীব আমাকে জানালে আমি ভাইকে ধরে বিচারের কথা বলি। কিন্তু তাকে এভাবে মারবে বুঝিনি।’

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমার মা-বাবার সঙ্গে ফজর আলীর টাকার লেনদেন ছিল। ঘটনার রাতে মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন না, বাচ্চারা ঘুমিয়ে ছিল। তখন ফজর আলী দরজা খুলতে বলে। আমি না খুলতে চাইলে সে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে জোর করে ঢুকে আমাকে ধর্ষণ করে। এরপর কিছু যুবক ঘরে ঢুকে ভিডিও করে এবং মারধর করে।’

ভুক্তভোগী নারীর ভাই বলেন, ‘ঘটনার সময় বাড়িতে কেউ ছিল না। কিছুক্ষণ পরই যুবকেরা এসে ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়। ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ফজর আলীকে পিটিয়ে আবার ভিডিও ছড়িয়ে আমাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে সাত-আটজন যুবক ফজর আলীকে ধরতে ফাঁদ পাতেন। তিনি ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে তাঁকে আটক করে বেধড়ক পেটানো হয় এবং হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। ওই নারীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ডিসি, এসপির পরিদর্শন

সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন, মুরাদনগর ইউএনও আবদুর রহমান এবং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ কে এম কামরুজ্জামান। তাঁরা ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ঘটনাটিকে ধর্মীয় বা রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই বলেও জানান।

সুবিচার নিশ্চিতের দাবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এবং মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ইউনিটের সিনিয়র আইনজীবী শিল্পী সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রোববার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তাঁরা মুরাদনগর থানায় ভুক্তভোগী, তদন্ত কর্মকর্তা ও ওসির সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুবিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফসা জাহান বলেন, ‘অপরাধী যে দলেরই হোক, আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।’

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ফজর আলী পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসাধীন। ছাড়পত্র পেলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। অন্যদিকে পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলার চার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি পরে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২ বছরেই ফাটল বিদ্যালয়ের ২ কোটি টাকার ভবনে, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর পার হতে না হতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় দুই কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনের বারান্দা, সিঁড়ি, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল ধরায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের বানিয়াখাড়ী সরকারি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ২০২১-২২ অর্থবছরে দুই কোটি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

নিম্নমানের কাজের অভিযোগ এনে স্থানীয় অভিভাবক মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় দুই বছরের মধ্যেই বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণকাজের সময় আমরা মৌখিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারকে অভিযোগ করেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দেননি।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘নতুন ভবনে ক্লাস চালুর দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নিচতলার সিঁড়ির বারান্দায় বড় ফাটল ধরেছে। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষের মেঝে ও পিলারের সঙ্গে দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনি এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছেন।’

চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চিরিরবন্দরের বানিয়াখাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের বারান্দা, মেঝে ও দেয়ালে ফাটল। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা খাতুন বলেন, ‘নতুন বিল্ডিংয়ের দুই বছর এখনো হয়নি, তাতেই মেঝেসহ অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তারা দ্রুত মেরামত করার জন্য আশ্বাস দিয়েছে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার আবেদ আলী মাস্টার বলেন, ‘বিল্ডিং হস্তান্তর করার প্রায় দুই বছর হয়েছে। মেঝেতে শুধু পলেস্তারায় “চিড়” ধরেছে, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমি আমার ম্যানেজারকে পাঠিয়ে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করব।’

এলজিইডির চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মাসুদার রহমান একই সুরে বলেন, ‘বিল্ডিংয়ের মেঝে ও সিঁড়ির কিছু অংশে কেবল পলেস্তারার ওপরে ফাটল বা চিড় ধরেছে। আমি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত মেরামতের জন্য বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেত্রকোনার সীমান্ত গ্রাম ভবানীপুর: পাকা রাস্তা-সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি 
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই ভবানীপুরের বাসিন্দাদের ভরসা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় ভারত সীমান্তঘেঁষা গ্রাম ভবানীপুর। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে আজও এই জনপদ পিছিয়ে আছে অন্ধকারে। এখানকার কয়েক হাজার মানুষের জীবন যেন দুর্গম যাতায়াতে আটকা—নেই কোনো পাকা সড়ক, নেই স্থায়ী সেতু। ভাঙা মাটির রাস্তা আর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠ-বাঁশের সাঁকোই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আনা থেকে শুরু করে গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

গ্রামের একমাত্র সেতুটি ২০১৪ সালের দিকে ভেঙে যাওয়ার পর কাঠ-বাঁশের সেতুই এখন একমাত্র ভরসা। উন্নয়ন যেন এখানকার মানুষের কাছে সোনার হরিণ। কবে মিলবে স্থায়ী সেতু ও পাকা রাস্তা জানেন না কেউই।

স্থানীয় বাসিন্দা সজীব মিয়া বলেন, ‘যুগের পর যুগ কেটে গেলেও আমরা উন্নয়নবঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ গ্রামে কোনো দিন পাকা রাস্তা বা স্থায়ী সেতু হয়নি। গ্রামের দুটি সেতুর মধ্যে একটি কাঠ-বাঁশের আর অন্যটি পাকা হলেও সেটিও সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমেই পথ মেরামত করে যাতায়াত করছি।’

দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই চাকার বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া এই গ্রামে অন্য কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। ছবি: আজকের পত্রিকা

আরেক বাসিন্দা সামছু মিয়া জানান, গর্ভবতী নারী বা রোগীকে জরুরি মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে নদীপথই ভরসা। কৃষিজাত পণ্যও বাজারে নেওয়া কষ্টসাধ্য।

স্কুলশিক্ষার্থী মুর্শিদা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন কাঁচা রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয় স্কুলে যেতে। বর্ষায় কাদা-জলে ভিজে স্কুলে পৌঁছানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের দাবি পাকা রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হোক।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আফসানা বলেন, ‘গ্রামটি দেখেছি। মানুষ সত্যিই কষ্টে আছে। ভবানীপুরের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। শিগগিরই যাতে গ্রামের মানুষ যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত