Ajker Patrika

কলকাতা বন্দরে আটকা জাহাজ: ৭ মাসেও ফেরেনি ৬ নাবিক, উৎকণ্ঠায় পরিবার

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
কলকাতা বন্দরে আটকা জাহাজ: ৭ মাসেও ফেরেনি ৬ নাবিক, উৎকণ্ঠায় পরিবার

কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দরে দুর্ঘটনায় কাত হয়ে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘মেরিন ট্রাস্ট-১ এর ছয় নাবিকের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। কখন তারা দেশে ফিরে আসবেন, সেটি নিশ্চিত করে জানাতে পারছে না কেউ। জাহাজ মালিকেরা খোঁজ খবর রাখছেন বললেও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এসব নাবিকদের পরিবার। পরিবারের লোকজন বলছেন, ‘আটক নাবিকেরা সেখানে কষ্টে জীবন যাপন করছেন।’

কলকাতার সিমেন্স হোস্টেলে আটক থাকা মেরিন ট্রাস্ট-১ দ্বিতীয় প্রকৌশলী শাহ পরান খানের বড় ভাই নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা জুম্মান খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাত মাসের বেশি সময় আমার মা-বাবা চিন্তায় রয়েছে। গত দুটি ঈদেও আমার ভাই পরিবারের কাছে আসতে পারেনি।’

এর আগে গত ২৪ মার্চ কন্টেইনার বোঝাই করার সময় কলকাতায় শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দরের ৫ নম্বর বার্থে কাত হয়ে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজটি। এ সময় জাহাজটিতে ১৫ জন ছিলেন। গত ২৯ আগস্ট ১৫ নাবিকের মধ্যে ৯ জন নাবিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি ৬ জন নাবিক ৭ মাস ধরে কলকাতার সিমেন্স হোস্টেলে আটক আছেন। যদিও দুর্ঘটনার কারণে বাংলাদেশি জাহাজের ওপর চার্জ আরোপ ও তদন্তের স্বার্থে তাঁদের সেখানে আটকে রাখছে বলে দাবি করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনায় কাত হয়ে পড়া মেরিন ট্রাস্ট-১ জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে। এখন অন্য জাহাজ দিয়ে টেনে নিয়ে আসার জন্য কলকাতা বন্দরের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু আটক বাংলাদেশি নাবিকেরা কখন দেশে আসবে তা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এতে তাদের পরিবার পরিজন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।

দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজ মেসার্স মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাকেবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের জাহাজটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কলকাতায় আটকা পড়া বাকি ৬ জন নাবিক কখন দেশে ফিরে আসবে তা বলা যাচ্ছে না। তাদের মুক্তি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে। আমরা কলকাতায় শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।

এই বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশের নৌ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভারতে নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর দেওয়া এক পত্রে বাংলাদেশি নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়। এরপর ১১ মে কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজটির দুর্ঘটনার কারণে তাঁদের প্রতিদিন ৪৬ লাখ রুপি ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজটি থেকে নিঃসরিত তেলে সেখানকার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জাহাজটির বাংলাদেশি মালিকপক্ষ বিনা পয়সায় বন্দর থেকে সার্ভিস চাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জাহাজটি সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০ এপ্রিল (আরেক পত্রে) দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজটির মালিক মেসার্স মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডকে চিঠি দিয়ে কলকাতা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, জাহাজটির দুর্ঘটনার কারণে সকল দায় ও ক্ষতিপূরণ মালিককে পরিশোধের জন্য বলেছে। ওই চিঠিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাগাদা দেওয়া হয়েছিল।

২৪ মে কলকাতার শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি বন্দরের সচিব কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনারকে দেওয়া পত্রে ১৫ জন নাবিকের মধ্যে ৬ জনকে রেখে দিয়ে ৯ জনকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মেরিন ট্রাস্ট-১ কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টকে ব্যবস্থা নিতে ২ জুলাই পত্র দেয়। মেরিন ট্রাস্ট-১ কর্তৃপক্ষ গতকাল কলকাতার শ্যামা প্রাসাদ মুখার্জি বন্দরের ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়া পত্রে সব নাবিকের মুক্তি চেয়েছে।

কলকাতার মেরিন ক্লাবে থাকা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন একে এম মুছা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে প্রায় সাত মাসের বেশি সময় আমাদের কলকাতার মেরিন ক্লাবে রাখা হয়েছে। এখানে থাকা খাওয়া নিয়ে আমাদের কোনো কষ্ট হচ্ছে না। তবে পরিবার পরিজনের কাছে যেতে পারছি না, এটা অনেক কষ্টের। ঈদের সময়ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারিনি।’ তিনি দুদেশের মধ্যে আলোচনা করে ৬ জন নাবিককে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানান। 

ক্যাপ্টেন একেএম মুছার সঙ্গে কলকাতার মেরিন ক্লাবে আটকে থাকা অন্যরা হলেন মাস্টার মো. আসগর আলী, অনিমেষ সিকদার, ফাহিম ফয়সাল, শাহ ফরান খান, মো. ফরহাদ সিকদার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনা চোরাচালান: অপহৃত পাঁচজন ২৩ দিন পর উদ্ধার, একজনের ৪ আঙুল কাটা

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সোনা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরণের ২৩ দিন পর পাঁচ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আজ বুধবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একটি নির্জন খামারবাড়ি থেকে তাঁদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা-পুলিশ। পাঁচজনের শরীরেই নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এমনকি একজনের হাতের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে অপহরণ চক্রে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল ও পুলিশ সুপারের বিশেষ টিমের সমন্বয়ে এই অভিযান চালানো হয়। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আজ সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ জানায়, আজ সকাল ৭টায় ঝিকরগাছার হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের রেজাউল ইসলামের খামারবাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এই খামারবাড়ির গুদামেই অপহৃত ব্যক্তিদের আটক রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় ভিকটিমদের পাহারারত অবস্থায় থাকা মো. বিল্লাল হোসেন (৪০) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. সাগরিকা খাতুনকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অপহৃত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া পল্লিচিকিৎসক বিকাশ দেবনাথকেও (৩০) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে খামারবাড়ির মালিক রেজাউল ইসলাম ও আব্দুল গফ্ফার অভিযানের আগেই পালিয়ে যান। 

পুলিশ জানায়, মূলত সোনা চোরাচালান ও ৫০ পিস সোনার বার খোয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই অপহরণের ঘটনা। অপহৃত ব্যক্তিদের অমানসিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সবচেয়ে নির্মম বিষয়টি হলো, সোনা পাচারকারী ও অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মো. শফিকুল ইসলামের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে। সোনার বার উদ্ধারের জন্যই মালিকপক্ষের নির্দেশে এই নির্যাতন চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, গত ১২ ও ১৩ অক্টোবর গোয়ালপাড়া (মাঠপাড়া) গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফি (৩৫), আনারুল ইসলাম (৫০), হাসান মিয়া (২৬), আবুল হোসেন (২৭) ও স্বপন ইসলাম (৪৪)—এই পাঁচজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম হাসান মিয়ার বাবা শওকত আলী বাদী হয়ে আবদুল মজিদ, মিজানুর রহমান রুবেল, লালন মণ্ডল, আবদুস সামাদ, বিপ্লব হোসেন ও শাহীনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় অপহরণ মামলা করেন।

মামলায় আসামি করা হয় স্থানীয় আবদুল হাকিম ফকিরের তিন ছেলে আবদুল মজিদ (৪০), আবদুস সামাদ (৪৫) ও বিপ্লব হোসেন (৫০); মনসুর আলীর ছেলে লালন মণ্ডল (৪২); বাবলুর ছেলে শাহিন (৩২) এবং মো. বারির ছেলে রুবেলকে (৩০)। 

বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না। এই মামলার মূল আসামিরা এখনো পলাতক। উদ্ধার করা ভিকটিমদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এই অপহরণ ও নৃশংস নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইটনায় সরকারি চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত

কিশোরগঞ্জের ইটনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ইটনা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার জানু মিয়ার ছেলে।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ট্রলারে করে তাড়াইল উপজেলায় নেওয়ার সময় ৭২ বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

পরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল আকরাম বাদী হয়ে ইটনা থানায় ডিলার জানু মিয়া ও তাঁর ছেলেসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ইটনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর থেকে দেলোয়ার হোসেন পলাতক ছিলেন। আজ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই মামলায় ৮ আসামির মধ্যে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এ সময় প্রাথমিক শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে রাজধানীর পল্টন ঘুরে এসে শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘একদিকে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিলের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকে শিক্ষক কমানোর জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা সাম্প্রদায়িকতার কারণে উপদেষ্টারা বাতিল করেছে। এ ধরনের বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আলাদা করে ওই বিষয়ের ওপর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। এমনকি চারুকলার জন্যও শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সভাপতি সালমান রাহাত বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা, সেখানে বৈষম্য সৃষ্টি করে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক বছর পার হওয়ার পরও নতুন অবস্থায় এসে বৈষম্য থাকবে, এটা দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ও চারুকলার ওপরে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের যে কর্মসংস্থান করার কথা ছিল, সেটি আপনারা (সরকার) বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রাথমিকে এই সাবজেক্টগুলো যদি না থাকে, তাহলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সাবজেক্টের শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে আপনারা নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করি।’

সালমান রাহাত একটি দলের উদ্দেশে বলেন, ‘কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট চায়, অথচ সেখানে কি ভোট আছে? অনেকে আবার জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে এই বলে যে—ভোট না দিলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে প্রচার করে আপনারা শিক্ষাব্যবস্থাকে পায়ের তলায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এসব না করে শিশুদের বিকাশে এসব বিষয়ের ওপর শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এসব সাবজেক্ট খুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’ বড় বড় অবকাঠামো বা দালান না করে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি বিমল মজুমদার বলেন, ‘দেশে যেকোনো সংকট দেখা দিলেই উদীচীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিদাওয়া দেখতে পাচ্ছি। আজ তাঁরা রাস্তায় থাকলে শিশুদের পড়াবে কে? বিতর্কিত সিদ্ধান্ত একের পর এক নিচ্ছে এই সরকার। শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতের মও শিক্ষক নিয়োগের এই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থাকলেও তাঁরা কার্যকর করছেন না। শরীরচর্চা করলে শিশুদের বিকাশ ঘটে, চিত্রাঙ্কন করে, গান শুনে শিশুদের মানসিকতা উন্নতি হয় ও উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকার, তাতে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বিমল মজুমদার জানান, এই সরকারের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ফরিদপুরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এনজিও চালানো আর দেশ চালানো এক জিনিস নয়। আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান, তাতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের অধিকার ফিরে পাক।’

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক প্রিজম ফকিরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরের ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ খান আদর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অপর ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক) সৈয়দা মিনহাজ উম মুনীরা এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের পেশকার ফজলু মিয়া জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামের বাসিন্দা মজই উল্লার পুত্র আনকার উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামের ইলাক উদ্দিন, আনছার উদ্দিন, নুরুল হক, জসিম উদ্দিন, মো. আব্দুস ছোবহান, মো. আব্দুস ছোবহানের স্ত্রী সাহিদা বেগম, সেগুন বিবি, সাইরুন বেগম, সাহিনা বেগম ও মো. মঈন উদ্দিন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৭টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামে রিফা বেগমের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী উল্লিখিত আসামিদের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আসামি আনকার উদ্দিনের আঘাতে রিফার পিতা ছুফি মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, ‘এই রায়ে আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত