Ajker Patrika

তিনি হাসালেন, তিনিই কাঁদালেন

তাসনীম হাসান, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০: ৩৭
তিনি হাসালেন, তিনিই কাঁদালেন

রিয়েলটি শো-বাংলাদেশি আইডলে গিয়ে অ্যান্ড্রু কিশোরের সঙ্গে গান গাইতে চেয়েছিল ছেলেটা। পরোক্ষভাবে কীর্তিমান গায়ককে একটু চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন। নয় বছর আগে সেদিন ছোট্ট কিশোরের এমন কাণ্ডে বিচারকের আসনে বসা অ্যান্ড্রু কিশোর বেশ মজাই পেয়েছিলেন। সেই ভিডিও দেখে হাসেনি এমন মানুষ কমই আছেন। সবাইকে এভাবে হাসানো সিফাত রাব্বী এবার কাঁদালেন সবাইকে। আচমকা ২৮ বছরের এই তরুণ হয়ে গেলেন ‘ব্রেকিং নিউজ।’ গতকাল বুধবার মধ্যরাতের পর থেকে কেবলই ছবি হলেন তিনি।

সিফাত চট্টগ্রাম বন্দরের জুনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গতকাল বুধবার রাতে বন্দরে কনটেইনার ওঠানো যন্ত্রের চাকার নিচে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। বন্দরের চাকরি ছাড়াও সিফাতের আরও একটি বড় পরিচয় ছিল। চাকরির ফাঁকে সময় বের করে মজাদার আর বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের খোঁজে সিফাত ঢুঁ মারতেন এ হোটেলে থেকে, ওই হোটেলে। পরে সেই খাবারের ভিডিও করে তুলে ধরতেন নিজের ‘ক্ষুধার্ত খাদক’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে। এভাবেই দেশের অন্যতম সেরা ফুড ব্লগার হয়ে ওঠেন তিনি। এমন একজন সম্ভাবনাময়ী তরুণের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই কাঁদাচ্ছে সবাইকে। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাজারো মানুষ ফেসবুকে তুলে ধরেছেন তাঁকে নিয়ে নানা স্মৃতি কথা।

আড়াই বছর আগে মারা যাওয়া সিফাতের বাবা আবদুল আউয়ালও বন্দরে চাকরি করতেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সিফাত ছিলেন ছোট। কলেজিয়েট স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে সিফাত ভর্তি হন চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (আইআইইউসি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই প্রাক্তন ছাত্র তিন বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরিতে যোগ দেন। 

সিফাতের দেশের প্রসিদ্ধ ফুড ব্লগার হয়ে ওঠার পথটা সহজ ছিল না, ছিল কাটায় কাটায় ভরা। শরীরের ওজন বেশি হওয়ায় কত বার যে ‘বডি শেমিংয়ের’ শিকার হতে হয়েছে সিফাতকে। অবশ্য সিফাত নিজেও শরীরের ওজন কমানো নিয়ে লেগে ছিলেন। বিশেষ করে বাবার মৃত্যুর পর দুর্দান্ত সব প্রচেষ্টায় ১৫৪ কেজি থেকে গত বছরের শুরুতে শরীরের ওজন নিয়ে এসেছিলেন ৯৯ তে। এরপর আফসোস করে ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘বেশি ওজনের কারণে বাবাকে কবরে নামাতে পারিনি। যদি এক বছর আগে থেকে ওজন কমানোর জার্নিটা শুরু করতাম, তাহলে বাবাকে কবরে শুয়ে দিতে পারতাম। এই আফসোস কখনো ফুরাবে না।’ 

এমন একটা হাসিখুশি মজার ছেলে এভাবে চলে যাবে মানতে পারছেন না কেউ। নিশাত তৃষী নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কত কষ্ট করে শুকিয়েছেন, সুস্থভাবে বাঁচার জন্য। তাহলে কীসের এত তাড়া?’ 

রওনক আশরাফি নামের আত্মীয় ফেসবুকে শোক জানিয়েছেন এভাবে, ‘তোমার বিয়ের ছবি দেখছিলাম ফেসবুকে। তোমার আর তোমার স্ত্রীর ছবি দেখে মনে মনে বলছিলাম ছেলেটাকে কি ভালো লাগছে মেয়েটার পাশে। সেই তুমি নেই বিশ্বাস করতে পারছি না।’ 

মা জেবুন্নেসা আর স্ত্রী ফারহানা ইসলামকে নিয়ে সিফাত থাকতেন চট্টগ্রামের বন্দরের হাইস্কুল কলোনিতে। বিয়ে করেছেন তাও চার মাস আগে গত অক্টোবরে। কদিন আগে দুজনের মেহেদী রাঙা হাতের ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলেন সিফাত। মেহেদীর রং এখনো মোছেনি তাঁর। তার আগেই কিনা জীবন থেকে মুছে গেলেন সিফাত। 

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কথা বলার অবস্থায় নেই তাঁর মায়ের। সে কথাই বলছিলেন সিফাতের বোনের স্বামী শামসুজ্জামান, ‘অফিস থেকে ফেরার আগে স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেছিল-‘কিছু লাগবে’? এর কিছুক্ষণ পরেই আসে ওর মৃত্যুর খবর। এভাবে ও চলে যাবে ভাবতেই পারছি না।’ 

প্রিয় মানুষকে হারিয়ে স্ত্রীও শোকে মুহ্যমান। কদিন আগে স্ত্রীকে রেখে এক জায়গায় যাওয়ায় সিফাত ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘তোমাকে ছাড়া দূরে থাকতে ভালো লাগে না।’ সেই সিফাত কিনা এখন সবার থেকে অনেক দূরে, একেবারে চলে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত