Ajker Patrika

চাকমা ভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটি

চাকমা ভাষার পাঠ্যবই যেন ‘পারিবারিক বই’

  • কমিটির আহ্বায়ক প্রসন্ন কুমার চাকমা বইয়ে নিজের ও স্ত্রীর নামে কবিতা ছাপিয়েছেন।
  • ছেলে লিটন চাকমার চিত্রকলার ডিগ্রি না থাকলেও তাঁকে দিয়ে আঁকিয়েছেন ছবি।
  • কমিটির সদস্যদের মতামত গ্রহণ না করার অভিযোগ প্রসন্ন কুমারের বিরুদ্ধে।
হিমেল চাকমা, রাঙামাটি 
চাকমা ভাষার পাঠ্যবইয়ে নিজের লেখা কবিতার পাশাপাশি স্ত্রীর নামেও কবিতা ছাপিয়েছেন। ডিগ্রি না থাকলেও ছেলেকে দিয়ে আঁকিয়েছেন ছবি। এভাবে পাঠ্যবইকে ‘পারিবারিক বই’-এ পরিণত করেছেন চাকমা মাতৃভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রসন্ন কুমার চাকমা। ছবি: সংগৃহীত
চাকমা ভাষার পাঠ্যবইয়ে নিজের লেখা কবিতার পাশাপাশি স্ত্রীর নামেও কবিতা ছাপিয়েছেন। ডিগ্রি না থাকলেও ছেলেকে দিয়ে আঁকিয়েছেন ছবি। এভাবে পাঠ্যবইকে ‘পারিবারিক বই’-এ পরিণত করেছেন চাকমা মাতৃভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রসন্ন কুমার চাকমা। ছবি: সংগৃহীত

নিজের লেখা কবিতার পাশাপাশি স্ত্রীর নামেও কবিতা ছাপিয়েছেন। বিকৃত করেছেন গল্প। চিত্রকলার কোনো ডিগ্রি না থাকলেও ছেলেকে দিয়ে আঁকিয়েছেন ছবি। এভাবেই চাকমা ভাষার পাঠ্যবইকে ‘পারিবারিক বই’-এ পরিণত করেছেন চাকমা মাতৃভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রসন্ন কুমার চাকমা। ২০২৫ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের প্রাক্ ও প্রাথমিক স্তরের চাকমা মাতৃভাষার বইগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পাঠ্যবইয়ে প্রাক্-প্রাথমিকে একটি গল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দুলেই কুমারী’। চাকমা ভাষার প্রশিক্ষকেরা বলছেন, গল্পটি ‘ডুলো হুমুরি’ নামে প্রচলিত। সেটা ‘দুলেই কুমারী’ কীভাবে হলো, তা কেউ বুঝতে পারছেন না।

চাকমা মাতৃভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাকমা ভাষার বইগুলো মানসম্মত না হওয়ার অন্যতম কারণ কমিটির আহ্বায়ক প্রসন্ন কুমার চাকমা। তিনি কারও পরামর্শ গ্রহণ করেন না। তাঁর ছেলে লিটন চাকমার চিত্রকলার কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তাঁর আঁকা ছবিতেই সয়লাব বইগুলো। তাঁর আঁকা ছবিতে মানুষের চেহারা ফুটে ওঠেনি। দ্বিতীয় শ্রেণির বইয়ের ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় সিংহ, ৪২ নম্বর পৃষ্ঠায় বিড়ালের ছবি ছাপা হয়েছে বিকৃতভাবে। এই বইয়ে নিজের নামে কবিতা ছাপিয়েছেন প্রসন্ন কুমার। প্রথম শ্রেণির ১০ ও ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায়ও নিজের নামে কবিতা ছেপেছেন তিনি। তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় স্ত্রী কনক প্রভা চাকমার নামে ছাপিয়েছেন কবিতা।

রাঙামাটি জেলায় চাকমা ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষক অনন্ত রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘চাকমা ভাষার বইগুলো প্রসন্ন কুমার চাকমার পারিবারিক বইয়ের মতো হয়েছে। মানুষের মতামত গ্রহণ তো দূরের কথা, স্বয়ং বই উন্নয়ন কমিটির সদস্যদের মতামত পর্যন্ত নেননি।’

মাতৃভাষা বইয়ের উন্নয়ন কমিটির সদস্য চিত্রশিল্পী উদয় শংকর চাকমা বলেন, ‘বইয়ের ছবিগুলো নিয়ে আমাকে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু ছবিগুলো তো আমার নয়। বইয়ে অধিকাংশ ছবি লিটনের। কোন ছবি ছাপানো হবে সে সিদ্ধান্তও নেন প্রসন্ন কুমার। ছবি ভালো কিংবা খারাপ সব দায় তো আমাকে নিতে হয়। ছবি নিয়ে আমি কোনো কথাই বলতে পারি না। প্রসন্ন কুমার উল্টো ধমক দেন।’

কমিটির আরেক সদস্য দেব কুমার চাকমা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বইয়ের মান উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করলেও পরে দেখা যায় সেটা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বই প্রণয়নের জন্য আমাদের খুব কম সময় দেয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছেলে লিটন চাকমার চিত্রকলার কোনো ডিগ্রি না থাকলেও তাঁকে চিত্রশিল্পী হিসেবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেন প্রসন্ন কুমার চাকমা। এ ব্যাপারে লিটন চাকমা বলেন, ‘চিত্রকলা নিয়ে আমার কোনো ডিগ্রি নেই। তবে ছবি আঁকি। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। চাকমা ভাষার বইগুলোতে আমার একাধিক ছবি আছে।’

কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, বইয়ে কবিতা, ছবি ছাপার জন্য টাকা দেয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এ ছাড়া বিভিন্ন ট্রেনিং এবং আলাদা ভাতাও দেওয়া হয়।

অভিযোগ বিষয়ে প্রসন্ন কুমার চাকমা বলেন, ‘সময় দেওয়া হয় না। তাৎক্ষণিক কবিতা চাওয়া হয়। কবিতা সংগ্রহের সময় পাই না। সে জন্য আমি তাৎক্ষণিক কবিতা রচনা করে জমা দিই। আমার স্ত্রীর নামে কবিতা আছে।’ ছেলে লিটনের ছবিও ছাপিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

বইগুলোতে পরিবার জড়িত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রসন্ন কুমার বলেন, চাকমা ভাষায় পারদর্শী মানুষের অভাব। তারা কবিতা লেখে না, ছবি আঁকে না, সমস্যা এখানে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দক্ষ প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের দিয়ে বইটি যেন সবার গ্রহণযোগ্য হয়, সেটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মাতৃভাষার বইয়ে কোনো পরিবারকে হাইলাইট করার সুযোগ নেই। যদি হয়ে থাকে, তা তদন্ত করে সংশোধন করে স্ব স্ব জাতিগোষ্ঠীর গ্রহণযোগ্য হয় এমন বই করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ‘বইগুলো আমি দেখেছি। মান খারাপ হয়েছে। এগুলো বাচ্চাদের শেখানো হলে ভুল শিখবে। এ ভুল শেখানো ঠিক হবে না। এ বিষয়ে আমরা জেলা পরিষদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত