Ajker Patrika

গভীর নলকূপের কথা বলে টাকা নিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে জাসদ নেতা

পরশুরাম (ফেনী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ মে ২০২৩, ১১: ২৭
গভীর নলকূপের কথা বলে টাকা নিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে জাসদ নেতা

ফেনীর পরশুরামে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন তছলিম আহাম্মেদ নামে উপজেলা জাসদের এক নেতা। দুই বছরেও নলকূপ অথবা সেই টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর তাঁকে আটক করেন ভুক্তভোগীরা। পরে কিছু টাকা দিয়ে এবং বাকি টাকা পরে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা পান।

গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই নেতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জাসদ নেতা তছলিম আহাম্মেদ চৌধুরী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) উপজেলা সহসভাপতি ও ফেনী জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক।

স্থানীয়রা ও একাধিক ভুক্তভোগী জানান, রোববার বিকেলে ইউএনওর অফিসের বারান্দায় জাসদ নেতার পথ রোধ করেন স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী। তাঁকে আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একই অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় আলাউদ্দিন আহামেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের অফিস সহকারী ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরীসহ আরও ১০ জন জড়ো হন। তাঁদের সবার একই অভিযোগ, গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে তছলিম তাদের কাছ থেকে প্রতিটি নলকূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছরেও নলকূপ বরাদ্দ দিতে পারেননি। তাঁকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি কেটে দেন এবং বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করেন।

পরে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একে একে ক্ষতিগ্রস্তরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর তোপের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত দিদারুল আলম ও আমিনুর রহমান নামের দুজনকে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। জাসদ নেতা তছলিম দুজনের কাছ থেকে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। বাকি টাকা কিছুদিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পান।

মনছুর আহাম্মদ নামে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একজন কর্মচারী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও গত দুই বছর ধরে নলকূপ বরাদ্দ না দেওয়ায় রোববার বিকেলে আমি জাসদ নেতাদের ইউএনও অফিসের বারান্দায় পথরোধ করেছিলাম। নলকূপ না দিতে পারলে টাকা ফেরতে দিতে চাপ দেই।’ 

উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলঘোনা গ্রামের দিদারুল আলম বলেন, উপজেলা ও তিনটি ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকায় দুই শতাধিক লোকের কাছ থেকে প্রতিটি নলকূূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। ২০০ জনের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, স্থানীয় ইউপি সদস্য, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের অফিস সহকারী ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী সুজন এবং সাঈদ চৌধুরী, মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ফখরুল ইসলাম ফারুখ, বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডর সদস্যের স্বামী নুর হোসেন অভিযোগ করেন, জাসদ নেতা তছলিম নলকূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। অথচ সরকারিভাবে খরচ হচ্ছে মাত্র ১১ হাজার টাকা।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন উপজেলার জঙ্গলঘোনা গ্রামের দিদারুল আলম ও তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুর রহমান। অভিযোগে তাঁরা জানান, দুজনকে গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে তছলিম আহমেদ চৌধুরী ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু গত দুই বছর অপেক্ষার পরও নলকূপ বরাদ্দ দিচ্ছেন না। নানা অজুহাতে টালবাহানা করছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

রোববার বিকেলে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একই সময় ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী সুজন ও সাঈদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, তাঁদের দুজনের কাছ থেকেও জাসদ নেতারা ৫০ হাজার টাকা করে এবং চারজনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু গত দুই বছরেও তারা নলকূপ বরাদ্দ পাননি।

মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, ‘গত শনিবার (৬ মে) রাতে সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের ছেলে জাসদ নেতা অমিত মনোশিষ মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেখানেও স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁদের অভিযোগ, এমপির কথা বলে গভীর নলকূপ বরাদ্দের নামে টাকা নিয়ে টালবাহানা দেখাচ্ছে।’

পরশুরাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সারা দেশে ৬ লাখ গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। তার মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় ৪৯টি নলকূপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রানা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। কিন্তু ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতারের বরাদ্দকৃত নলকূপের ৪৯ জনের তালিকার মধ্যে বেশির ভাগ লোকের নাম ও ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য ভুল থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।’

অভিযোগের বিষয়ে পরশুরাম উপজেলা জাসদের সহসভাপতি ও ফেনী জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক তছলিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা জাসদের দলীয় কার্যক্রমের খরচ চালানোর জন্য আমাকে শুধু ছয়টি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিয়েছে। সেগুলোর জন্য আমি কয়েকজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিয়েছি। যেহেতু নলকূপ বরাদ্দ দিতে পারি নাই, তাই দুই-এক দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’

পরশুরাম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের কথা বলে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অফিস খরচের কথা বলে জাসদ নেতারা প্রতিটি নলকূপের জন্য ২৫-৩০ হাজার টাকা আদায় করছেন। এতে এমপি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোষাগারে শুধু ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ১১ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর: চবির উপ-উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি 
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল, সে সময় তারা জীবিত থাকবে—না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’

এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করেন।

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘গতকাল টিভিতে দেখলাম, মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান (সদ্য জামায়াতে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি মেজর অব. আখতারুজ্জামান) বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাত বরণ করেছে। এখন আপনি এর বিপরীত রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?

মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়। রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছে, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও চবি জাদুঘরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, চাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি র‍্যালি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

এ দিকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৯
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সিনিয়র সাংবাদিক ও টক শোর আলোচিত মুখ আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

এর আগে রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির একটি জিম থেকে আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) তিনি ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন।

আনিস আলমগীরকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানাব। তাঁর সঙ্গে এখনো কথা বলিনি, আমি ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব, তারপর বিস্তারিত বলতে পারব।’

সাংবাদিক আনিস আলমগীর দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন টক শোতে নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটপাতে দোকান চালানো নিয়ে দ্বন্দ্ব, ভাড়াটে খুনি দিয়ে হকারকে হত্যা

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় ফুটপাত থেকে হকার ইসমাইলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ বলছে, ফুটপাতে দোকান চালানো নিয়ে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে নগরের মেরিনার্স রোডের ইয়াকুবনগর লইট্টাঘাটা এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭। পরে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিনু বৈদ্যর ছেলে রুবেল বৈদ্য (৩১) ও পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ মালিয়ারার রতন নাথের ছেলে রাজু নাথ (৩৮)।

গত ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার কাছে লালদীঘি মোড়ে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে খুন হন ইসমাইল। পুলিশ প্রথমে ঘটনাটি ছিনতাই হিসেবে ধারণা করে। পরে তদন্তে পরিকল্পিত হত্যার তথ্য পায়। পুলিশের হাতে আসা একটি সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবককে হত্যায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় পরদিন কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে নিহত ইসমাইলের স্ত্রী নাহিদা আক্তারের করা মামলায় পুলিশ মনির হোসেন ওরফে নয়ন নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখায়।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ফুটপাতের দোকান নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মূলত ভাড়াটে খুনি দিয়ে মো. ইসমাইলকে হত্যা করা হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা সরাসরি যে তিনজনের জড়িত থাকার তথ্য ছিল, সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। খুনে ব্যবহৃত টিপ ছুরি ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘ঘটনার পর ইসমাইলের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি মনির হোসেন নামের যাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, তাঁকে আমরা প্রথমেই গ্রেপ্তার করি। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের অন্যতম আসামি তিনি। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

গ্রেপ্তার তিনজন মূলত ভাড়াটে খুনি হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের মধ্যে রাজুর বিরুদ্ধে তিনটি ও রুবেল বৈদ্যর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। ডাকাতি, দস্যুতা ও খুনের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছিল।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ইসমাইলের সঙ্গে ফুটপাতের দোকান নিয়ে যাঁর সঙ্গে বিরোধ ছিল, মূলত তিনিই খুনিদের ভাড়া করেছিলেন। ওই ব্যক্তিসহ আরও দুজনের বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন তাঁদের নাম প্রকাশ করছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে হামলা: নিহত শান্তিরক্ষী শামীমের বাড়িতে কান্নার রোল

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
শামীম রেজা। ছবি: সংগৃহীত
শামীম রেজা। ছবি: সংগৃহীত

সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শামীম রেজার রাজবাড়ীর বাড়িতে মাতম চলছে। প্রতিবেশীরা তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কান্না বাঁধ মানছে না।

নিহত শামীম রেজা কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে।

শোকে আচ্ছন্ন শামীমের পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা
শোকে আচ্ছন্ন শামীমের পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা

শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্না-আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরা শামীমের বাবা, ভাইকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শামীমের মা ও স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

শামীমের চাচা আনিস জানান, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন তিনি। গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে সুদানে গিয়েছিলেন।

শামীমের ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘গতকাল টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকেই আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার সে বাড়িতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল।’

বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা। ’

স্থানীয় মাসুদ, শাহজাহান, মাহবুব বিশ্বাস বলেন, ‘এই মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শামীমের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। শামীম ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর পরিবার এখন কীভাবে চলবে? আমরা এলাকাবাসী দাবি জানাই, শামীমের লাশ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে শামীমের ছোট ভাই সোহানকে যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় সরকার।’

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘নিহত শামীমের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। মরদেহ আসার বিষয়ে এখন পর্যন্ত যেটা জানতে পেরেছি, আগামী ১৭ তারিখে আসবে। তবে এখনো নিশ্চিত না। আশা করি, আগামীকাল সঠিক তথ্য জানতে পারব।’

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শামীমসহ ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত