Ajker Patrika

নাব্যতা বৃদ্ধি

ড্রেজিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাশ্রয় ১৮ কোটি টাকা

  • কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং, নাব্যতা বেড়েছে।
  • সহজ হয়েছে বড় ও লাইটার জাহাজের চলাচল।
  • প্রকল্পের নির্ধারিত ব্যয় ছিল ২৯৫ কোটি টাকা, হয়েছে ২৭৭ কোটি।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩: ০৯
কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে বেড়েছে নাব্যতা। সেই সঙ্গে সক্ষমতা বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। সদরঘাট থেকে বাকলিয়াচর পর্যন্ত নদীর গভীরতা বাড়ায় সহজ হয়েছে সব ধরনের জাহাজের চলাচল। ছবি: আজকের পত্রিকা
কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে বেড়েছে নাব্যতা। সেই সঙ্গে সক্ষমতা বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। সদরঘাট থেকে বাকলিয়াচর পর্যন্ত নদীর গভীরতা বাড়ায় সহজ হয়েছে সব ধরনের জাহাজের চলাচল। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বন্দরের নাব্যতা বাড়াতে কর্ণফুলী নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে বড় জাহাজ আর লাইটার জাহাজের চলাচল এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়েছে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়াচর পর্যন্ত নদীর গভীরতা বেড়েছে ৪ মিটার। ফলে জেটিতে বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে। নদীতে আরও বেশিসংখ্যক লাইটার জাহাজও স্বাচ্ছন্দ্যে নোঙর করছে।

প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত ব্যয় ছিল ২৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭৭ কোটি টাকা। এতে বন্দরের সাশ্রয় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। নদীর নাব্যতা বাড়ানো এবং বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করাই ছিল এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

ড্রেজিং প্রকল্পের প্রথম দফা শুরু হয় ২০১১ সালে। মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন (এমএমডিসি) কাজের দায়িত্ব পায়। স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে ছিল প্যাসিফিক মেরিন সার্ভিস। কিন্তু ঠিকাদারের অসফলতার কারণে চুক্তি বাতিল করতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি আইনি জটিলতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তোলায় প্রকল্প প্রায় পাঁচ বছরের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে।

২০১৮ সালে দ্বিতীয় দফার নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। দেশীয় প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের সহযোগী ই-ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ শুরু করে। সদরঘাট থেকে বাকলিয়াচর পর্যন্ত নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, মাটি উত্তোলন ও খনন কার্যক্রম ছিল প্রধান লক্ষ্য। প্রকল্পে ৬২ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের মে পর্যন্ত। কাজ চলাকালে নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিক ও গৃহস্থালির বর্জ্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

ড্রেজিংয়ে মোট ২০-২৫টি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০টির বেশি গ্র্যাব ড্রেজার ব্যবহার করা হয়। প্রথমে নদীর তলদেশে জমে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিক ও গৃহস্থালির বর্জ্য সরানো হয়েছে। এরপর ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপে বিশেষ নজর দিতে হয়েছে। এই কাজের ফলে নদীর গভীরতা ৪ মিটার বেড়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের প্রজেক্ট ম্যানেজার রেজাউল করিম বলেন, এই কাজে ২০-২৫টি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং ১০টিরও বেশি গ্র্যাব ড্রেজার ব্যবহার করা হয়েছে। পলিথিন, প্লাস্টিক ও গৃহস্থালির বর্জ্যের স্তূপ সরানোর পর ওই স্থানে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীর গভীরতা বাড়ানো ও বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিই মূল লক্ষ্য ছিল। ভবিষ্যতেও নিজস্ব উদ্যোগে ড্রেজিং কার্যক্রম চলবে। চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্প শেষ হলেও আমরা সারা বছর নির্দিষ্ট অংশে ড্রেজিং চালিয়ে যাব। ওপর থেকে মাটি এসে যাতে নদীর গভীরতা কমাতে না পারে।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। পলিথিন ও বর্জ্যের স্তর বেশি থাকায় খননকাজ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়। ঠিকাদারেরা প্রযুক্তি, জনবল ও পরিকল্পনা কাজে লাগিয়ে এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠে। নদীর তলদেশ খনন ও নাব্যতা বৃদ্ধির ফলে বিশেষজ্ঞরা প্রতি ধাপে সমীক্ষা করে কাজ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত