Ajker Patrika

‘পদ-বাণিজ্য’: বরগুনা বিএনপির ৪ নেতার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ 

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮: ২৩
‘পদ-বাণিজ্য’: বরগুনা বিএনপির ৪ নেতার বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ 

বরগুনা জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ জেলার শীর্ষস্থানীয় চার নেতার বিরুদ্ধে পদ পাইয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার ব্যবসায়ী স্থানীয় এক বিএনপি নেতা এই অভিযোগের সমর্থনে লেনদেনের তথ্যও সরবরাহ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসব টাকা লেনদেন হলেও সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হয়। এর মধ্যে ৩ ইউনিটের কমিটির বিপরীতে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ মিললেও ১০ ইউনিটে কোটি টাকার পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। 

গত বছর বরগুনা-২ আসনের বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুর পর বরগুনার বামনা উপজেলা বিএনপির ৩ নম্বর সদস্য জাকির হোসেন খান নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ী ওই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি ঢাকার আশকোনা এলাকায় বসবাস করেন এবং রাজধানীতে সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। নিজের অনুসারীদের বরগুনা-২ আসনের আওতাধীন বামনা-পাথরঘাটা-বেতাগী উপজেলা ও পৌর ইউনিটে পদ পাইয়ে দিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা, সদস্যসচিব প্রয়াত (৭ জানুয়ারি ২০২৩) তারিকুজ্জামান টিটু, দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক ও তালিমুল ইসলাম পলাশকে ‘ম্যানেজ’ করতে ১০ লাখ টাকা দেন তিনি।

চার নেতার নামে ইস্যু করা চেক। ছবি: আজকের পত্রিকাজাকির খানের হয়ে বিএনপি নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করেন পাথরঘাটা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আউয়াল। টাকা নিয়ে জাকির খানের অনুসারী বেতাগী উপজেলায় রিয়াদ খানকে সদস্যসচিব, পৌর শাখায় মিজান খানকে সদস্যসচিব, উপজেলায় মো. দুলাল হোসেনকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, অধ্যাপক শাহীনকে বেতাগী উপজেলায় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, বামনা উপজেলার মোরশেদ খন্দকারকে সদস্যসচিব, পাথরঘাটায় কামরুল ইসলামকে সদস্যসচিব, একই উপজেলায় মো. সোয়েনকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের বিএনপি নেতাদের অভিযোগ। 

ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকার দক্ষিণ খানের আশকোনা শাখা থেকে ২০২২ সালের ৩ জুলাই চার নেতার নামে আট লাখ টাকা দেওয়া হয়। একই বছরের ৪ জুলাই ২৯১৬৫৯৩ নম্বর চেকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা তুলে নেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলম ফারুক মোল্লা। ২৯১৬৫৯৫ নম্বর চেকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা তোলেন সদস্যসচিব তারিকুজ্জামান টিটু।

সালেহ ফারুক ও তালিমুল ইসলাম পলাশের নামে ইস্যু করা চেক। ছবি: আজকের পত্রিকা২৯১৬৫৯৬ নম্বর চেকে ৫০ হাজার টাকা নেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ ফারুক এবং ২৯১৬৫৯৪ নম্বর চেকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেন যুগ্ম আহ্বায়ক তালমিল ইসলাম পলাশ। পদ-বাণিজ্যে জড়ানো বিএনপি নেতাদের ২৪টি ফোনালাপের অডিও ক্লিপ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। যেখানে বিকাশের মাধ্যমে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক মোল্লাসহ কয়েক নেতাকে লাখ লাখ টাকা ও স্মার্টফোন উপহার দেওয়ার তথ্য রয়েছে।

বরগুনা জেলা বিএনপির শীর্ষ পদের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক মোল্লার ভাতিজা। তিনি কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভীকে “ম্যানেজ” করে গত বছরের ১৫ এপ্রিল আগের কমিটি (নজরুল-হালিম) ভেঙে রাতের আঁধারে ফারুক মোল্লাকে আহ্বায়ক করে কমিটি এনেছেন।’

সেই নেতা আরও বলেন, আহ্বায়ক কমিটি গত ১৮ জুন বিএনপির বরগুনা জেলার উপজেলা পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এর উদ্দেশ্য ছিল নতুন ইউনিট গঠনের নামে পদ-বাণিজ্য। আর সেটাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি করেছে। টাকা নিয়েই জেলার ইউনিট কমিটিগুলো করা হয়েছে। এই ১০টি ইউনিট কমিটি গঠনে প্রায় এক কোটি টাকার পদ-বাণিজ্য হয়েছে। বিষয়টি গত বছরের অক্টোবরে লিখিতভাবে কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে ১০৮ পৃষ্ঠার তথ্য-উপাত্তও দেওয়া হয়েছে।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন হাসান শাহীন এবং কে এম শফিকুজ্জামান মাহফুজের কাছে ইউনিট কমিটি থেকে বাণিজ্যের অভিযোগ এলে তাঁরা তথ্য-উপাত্তসহ কেন্দ্রে লিখিতভাবে সরবরাহ করেছেন।

বরগুনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব তারিকুজ্জামান টিটু গত ৭ জানুয়ারি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চেকের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আহ্বায়ক মাহবুবুল আলম ফারুক মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি মাদ্রাসার কাজের জন্য আমি জাকির খানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম। এখানে পদ দেওয়ার কোনো বিষয় নেই।’

ব্যাংক স্টেটমেন্ট। ছবি: আজকের পত্রিকা

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ জেড এম সালেহ ফারুক টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশে একটি মাদ্রাসার জন্য ওই টাকা নেওয়া হয়েছে।’ পদ-বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, ‘পদ-বাণিজ্য হলে জাকির খানকেই বামনার আহ্বায়ক করা হতো। সেটা তো করা হয়নি।’

জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমি যদি চেক বা টাকা নিয়ে থাকি, প্রমাণ করতে পারলে সাংগঠনিক ও সামাজিক যে শাস্তি হয় মেনে নেব—এটা ষড়যন্ত্র।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন খানের সঙ্গেও। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘অডিও ক্লিপ, চেক ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেছি। ইতিমধ্যে তৃণমূল বিএনপি নেতারা কেন্দ্রকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীর কিছু অনুসারীকে দলের পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল বিএনপি থেকে আগেই পেয়েছিলাম। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে জানানোর পরামর্শ দিয়েছি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ শুনেছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা তৃণমূলের অভিযোগ ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করছি। সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত