Ajker Patrika

বরগুনা-২: ‘বিতর্কিত’ রিমনকে ঠেকাতে নৌকা চান ১৩ নেতা

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ৫৮
বরগুনা-২: ‘বিতর্কিত’ রিমনকে ঠেকাতে নৌকা চান ১৩ নেতা

দলীয় নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগসহ নানা কারণে বিতর্কিত বরগুনা-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ১৩ নেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে লড়তে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাঁরা।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালিকা আগামীকাল ঘোষণা করা হতে পারে। এরই মধ্যে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার সংসদীয় আসনে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তাদের একটি তালিকা গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য রিমনের জায়গায় সংরক্ষিত নারী আসনের (৩১৫, বরগুনা) সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরার নাম। এই তালিকার সূত্র ধরে নির্বাচনী এলাকায় অনেকে উচ্ছ্বসিত। ফেসবুকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন অনেকে; কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণও করেছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য গোলাম সবুর ২০১৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে শওকত হাচানুর রহমান রিমন নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন।

বরগুনা-২ আসনে রিমনের বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ১৩ জন নেতা। এদের মধ্যে আছেন পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন, বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইতুল ইসলাম লিটু, বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম কবীর। এছাড়াও যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সুভাষ চন্দ্র হাওলাদারও প্রার্থী হতে চান। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রিমনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কেন তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কথায় উঠে এসেছে। তবে এ বিষয়ে শওকত হাচানুর রহমান রিমনের মন্তব্য পাওয়া পাওয়া যায়নি। 

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলীয় এমপির বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংখ্যালঘু নারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির গায়ে হাত তোলা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকারি জমি দখলের মতো নানাবিধ অভিযোগে আমরা বিব্রত। গত পাঁচ বছরে তিনি দলীয় কর্মসূচিতেও অনিয়মিত ছিলেন। বরং এলাকায় তিনি নিজস্ব বলয় গঠন করেছেন, যার বেশিরভাগই জামায়াত-বিএনপির সমর্থক। দলীয় এমপি হয়েও দলবিরোধী কর্মকাণ্ড করায় রিমনকে নিয়ে আমরা বিপদে আছি। এসব কারণেই এবার সংসদ সদস্য রিমনের বিপক্ষে ১৩ জন নেতা এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।’ 

মুক্তিযুদ্ধের সময় রিমনের বাবা বরগুনা মহকুমা শান্তি কমিটির কমান্ডার ছিলেন- এ তথ্য তুলে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রিমন মনোনয়ন পাওয়ার পর আমরা বিব্রত ছিলাম। গত পাঁচ বছরে এমপি রিমন অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছেন।’ 

বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার বলেন, রিমন আওয়ামী লীগ করা লোক নন, ছিলেন একজন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল খালেক বলেন, এমপি রিমনের বাবা ‘খলিলুর রহমান বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছেন, অগ্নিসংযোগ-লুটপাট চালিয়েছেন। রিমন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর আমরা ভেতরে-ভেতরে অনেক কষ্ট পেয়েছি এবং ক্ষুব্ধ ছিলাম। রিমন কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোভাবে দেখতে পারতেন না। গত পাঁচ বছরে তিনি দলের অনেক ক্ষতি করেছেন।’ 

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে বরগুনা ২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেই রূপলালের মেয়ের বিয়ে: বাইরে আনন্দ, ভেতরে কষ্ট

শিপুল ইসলাম, রংপুর প্রতিনিধি
নিহত রূপলালের স্ত্রী ও সন্তানেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহত রূপলালের স্ত্রী ও সন্তানেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিন মাস আগে মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য পথ ভুলে যাওয়া ভাগনি জামাইকে এগিয়ে আনতে গিয়ে মবের শিকার হয়ে গণপিটুনিতে প্রাণ হারান রূপলাল রবিদাস। সেই শোক মনে নিয়েই বিয়ে হচ্ছে তাঁর বড় মেয়ের।

রংপুরের তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে রূপলালের বাড়িতে গতকাল সকাল থেকে চলছে ব্যস্ততা। সড়কে রঙিন গেট, উঠানে বাঁশের মাচা, মণ্ডপ, রঙিন কাপড়ের প্যান্ডেল, ধোঁয়া উঠছে রান্নার হাঁড়ি থেকে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, আনন্দঘন উৎসব, কিন্তু একটু কাছে গেলে বোঝা যায়—উৎসবের ভেতর পরিবারের সদস্যদের মনে লুকিয়ে রয়েছে রূপলালকে হারানোর গভীর ব্যথা।

রূপলালের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত ১০ আগস্ট রূপলালের বড় মেয়ে নুপুর রানীর বিয়ের দিন ঠিক করার কথা ছিল মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে। এ জন্য ৯ আগস্ট মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে আত্মীয় রূপলাল দাসের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন ভাগনি জামাই প্রদীপ দাস। তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাঁদের দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে মব তৈরি করে রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় রূপলালের স্ত্রী হত্যা মামলা করলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

বাবার মৃত্যুর পর নুপুর রানীর বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। রূপলালকে হারিয়ে পুরো পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবে রূপলালের পরিবার জানিয়েছে, মেয়ের বিয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ, তারাগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ীরা ৭১ হাজার, উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার, একটি সংগঠন থেকে এক লাখ টাকা টাকা পেয়েছে তারা। এ ছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ব্যক্তি রূপলালের ছেলে জয় রবিদাস ও ছোট মেয়ে রুপার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

রূপলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের ভেতরে কনে নুপুর রবিদাস বসে আছেন বিয়ের শাড়িতে। মুখে বিয়ের সাজ, কিন্তু চোখ দুটো লাল। পাশে মা ভারতী রানী নীরবে অতিথি আপ্যায়নের প্রস্তুতি সামলাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা: খাদ্যগুদামে বদলি-বাণিজ্য

  • দুই বছরের আগেই কর্মকর্তাদের বদলি; তাৎক্ষণিক নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ।
  • মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের পদায়নের অভিযোগ।
  • পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তার স্থলে উপপরিদর্শককে পদায়ন।
সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা 
ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা: খাদ্যগুদামে বদলি-বাণিজ্য

ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় বদলি-বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ‘পারিবারিক সমস্যা’ দেখিয়ে প্রত্যাহারের আবেদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অন্যদের পদায়ন করা হচ্ছে।

সম্প্রতি অন্তত ছয়টি গুদামের কর্মকর্তাদের এভাবে বদলি ও পদায়নের তথ্য পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এই বদলি-বাণিজ্যের মূল হোতা। পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করছেন খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া সদর খাদ্যগুদামে সম্প্রতি মেয়াদ শেষ না হতেই বিধিবহির্ভূতভাবে একজন উপপরিদর্শককে পদায়ন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকার কথা। অভিযোগ ওঠার পর ওই পদায়ন আদেশ পরে বাতিল করা হয়।

এদিকে নেত্রকোনা সদর, ঠাকুরাকোণা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, তারাকান্দা, ধলা ও শ্যামগঞ্জ গুদামে দেখা গেছে, দুই বছর পূর্ণের আগেই কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথ্য-উপাত্ত ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট ময়মনসিংহের তারাকান্দা গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলাল হোসেনকে দুই বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৫ দিন আগেই পারিবারিক সমস্যার কারণে বদলি করা হয় ফুলবাড়িয়ায়। একই দিন তারাকান্দায় পদায়ন করা হয় শাকিল আহম্মেদকে। ২৭ দিন পর আলাল হোসেনকে গৌরীপুর খাদ্যগুদামে পদায়ন করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর শ্যামগঞ্জ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুমকে একই কারণ দেখিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস ৫ দিন আগেই বদলি করে তাঁর স্থলে একই দিনে পদায়ন করা হয় সাজ্জাদ হোসেন খান পাঠানকে। ১৪ সেপ্টেম্বর গৌরীপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনকে পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২৮ দিন আগেই বদলি করে তাঁর স্থলে আলাল হোসেনকে পদায়ন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ত্রিশালের ধলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে একই কারণ দেখিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই বদলি করে তাঁর স্থলে হিমেল চন্দ্র সরকারকে পদায়ন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার ঠাকুরাকোণা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আহমেদকে একই কারণ (পারিবারিক সমস্যা) দেখিয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাস ২০ দিন আগেই বদলি করে তাঁর স্থলে আব্দুল ওয়াহাবকে পদায়ন করা হয়। ৩০ অক্টোবর নেত্রকোনা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম মোহাম্মদকে পারিবারিক সমস্যার কারণে মেয়াদ শেষ হওয়ার ২২ দিন আগে বদলি করে তাঁর স্থলে রেজাউল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস থেকে চাপ দিয়ে পারিবারিক সমস্যার আবেদন করতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতনের কথা না মানলে সমস্যায় পড়তে হবে। তাই সবাই বাধ্য হয়ে আবেদন করেছে। বদলি-বাণিজ্যে এখন প্রতি পদায়নে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। টাকা না দিলে গুদামের দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে না। অনেকের বদলি ও পদায়নের অফিস কপিও লুকিয়ে রাখা হয়েছে; যেটা অফিস ফাইলে থাকার কথা। ওই কর্মকর্তারা বলেন, একসঙ্গে এত কর্মকর্তাকে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে প্রত্যাহার করা এবং ঘুষ নিয়ে নতুনদের বসানো হয়েছে। এর আগে কখনো এমন অনিয়ম দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) আশরাফুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কল দেখে তিনি এ বিষয়টি তাঁর অনিয়মের সহযোগী পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম কামালকে জানিয়ে রাখেন।

খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যারকে কল দিয়েছিলাম; সাংবাদিক কল দিয়েছিল, এটা তিনি আমাকে জানিয়েছেন। স্যার মূলত সচরাচর কারও কল ধরেন না। আমি নিজেই একসময় সাংবাদিক ছিলাম। অভিযোগের বিষয়টা মিথ্যা। ঠাকুরাকোণা গুদামের কর্মকর্তা শামীম তাঁর এক বন্ধুকে এখানে দিয়ে সময়কাল শেষ হওয়ার আগেই তিনি স্বেচ্ছায় আবেদন করে চলে গেছেন। অন্যগুলোও প্রায় একই রকম। কয়েকজন অহেতুক আমাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে। সোর্স লাগিয়ে তাদের খুঁজে বের করতে সময় লাগবে না।’

এ বিষয়ে জানতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

খাদ্যসচিব মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের খাদ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা দুই বছর একটি স্টেশনে থাকবেন। যদি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি না থাকে, তাহলে তাঁকে বদলি করার নিয়ম নেই। আর একসঙ্গে তো এত কর্মকর্তার পারিবারিক সমস্যা হতে পারে না। বিষয়টা তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চবি শিক্ষার্থী-গ্রামবাসী সংঘাত

নিজের খুলি পেলেন মামুন, ফেরার অপেক্ষায় সায়েম

  • গত শনিবার নগরীর পার্ক ভিউ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়।
  • এর আগে ৩০ আগস্ট চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন।
  • মামুনের মাথায় খুলি প্রতিস্থাপন করেছি। এরপর তিনি স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন: চিকিৎসক
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার (বাঁয়ে) পাশে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাঈল হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার (বাঁয়ে) পাশে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাঈল হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’—মর্মস্পর্শী বাক্যটি দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার (২৪) মাথায় চাপ না দেওয়ার সতর্কবাণী ছিল এটি। সমাজতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে মাথার খুলি খুলে ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছিল দুই মাস আগে। অবশেষে গত শনিবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

গত ৩০ আগস্ট এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চবির অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন। গ্রামবাসীর মধ্যেও অনেকে আহত হন। তাঁদের মধ্যে মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মামুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম (২৪)। প্রথমে তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য পরে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাঁদের অস্ত্রোপচার হয়। এর মধ্যে অপারেশনের মাধ্যমে মামুনের মাথার খুলি পৃথক করে রেখে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে মামুন ও সায়েম পার্কভিউ হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন। তবে এখন বেশ উন্নতি হয়েছে। মামুনের চিকিৎসকেরা বলছেন, তিনি প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর সায়েমও (২৪) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ টি এম রেজাউল করিম জানান, ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুই শিক্ষার্থীকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দুজনই এখন সুস্থ। মামুনের মাথায় খুলি আমরা প্রতিস্থাপন করেছি। এরপর মামুন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছেন।’

চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাঈল হোসেন জানান, অপারেশনের দুই মাস পর মামুনের মাথার খুলিটা প্রতিস্থাপন করা হলো। এখন মামুন সুস্থ। আর হামলায় সায়েমের একটি পা অবশ হয়ে যাওয়ায় তাঁকে থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনিও সুস্থ। আরও কিছুদিন তাঁকে থেরাপি দিতে হবে। দুজনই এখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন। হামলার সময় ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মামুনের মাথার পেছনের অংশে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়। অপারেশনের মাধ্যমে তাঁর মাথা থেকে ১৩ টুকরা হাড় বের করা হয়েছিল বলেও জানান এই চিকিৎসক।

মামুনের ভাই মাসুদ রানা বলেন, ‘মামুনের সুস্থতার জন্য আমরা সবার কাছে ঋণী।’

তথ্যমতে, মাথার খুলি রেখে দেওয়ার ঘটনা এটি প্রথম নয়। এর আগে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি আকিব মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত পান। দুদিন পর তাঁর মাথায় অপারেশন করা হয়। তখনো খুলি রেখে দিয়ে ব্যান্ডেজের ওপর লিখে দেওয়া হয়েছিল—‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে ‘বই পড়ি, স্বপ্ন আঁকি’ স্লোগানে বুক অলিম্পিয়াড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

শিশু-কিশোরদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করার লক্ষ্যে ‘বই পড়ি, স্বপ্ন আঁকি’ স্লোগানে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড। গতকাল শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে মুক্ত আসরের উদ্যোগে বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটি এই আয়োজন করে।

বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান রাজু।

অধ্যাপক রহমান রাজু বলেন, বুক অলিম্পিয়াড একটি স্বপ্ন অভিযাত্রা, যেখানে স্বপ্নের ডানা মেলার আয়োজন নিহিত রয়েছে। এই আয়োজনের মধ্যে লুকিয়ে আছে আগামীর সম্ভাবনার বীজ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাঠপ্রেম জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি এটি সমাজে জ্ঞাননির্ভর, প্রগতিশীল ও মানবিক মনন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। চিন্তা ও বুদ্ধির সমন্বয়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে এবং নির্মাণের পথে এগিয়ে নিতে বুক অলিম্পিয়াড এক অনন্য উদ্যোগ।

রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান দীপু বলেন, বুক অলিম্পিয়াড বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার এক অসাধারণ উদ্যোগ। ক্লাসের বই অনেক সময় বাধ্য হয়েই পড়া হয়, কিন্তু বুক অলিম্পিয়াড শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের গণ্ডি পেরিয়ে জ্ঞানের নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে। এই বই পড়া অভ্যাসই তাদের মানবিক ও চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

নওহাটা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ওমর আলী আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ জাগিয়েছে, যা ভবিষ্যতে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘সারা দেশে বুক অলিম্পিয়াডের আলোকছটা ছড়িয়ে দিতে আমরা রাজশাহীতে এই আয়োজন করেছি। বইয়ের ভেতরেই লুকিয়ে আছে জ্ঞানের আলো আর সেই আলোকে প্রতিটি শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক অঞ্চলে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান দীপু, নওহাটা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, জালাল উদ্দিন, আকতার ফারুক, সার্ক কৃষিকেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ও বাংলাদেশ বুক অলিম্পিয়াডের যোগাযোগবিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক আবুল বাশার মিরাজ, লেখক সুফিয়া ডেইজি প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটির সহযোগী হিসেবে ছিল স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন, বইচারিতা, কাঠবিড়ালি প্রকাশন ও শব্দঘর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত