Ajker Patrika

ঝড়ের রাতে জন্মানো সিডরের জীবনে ঝড় আজও থামেনি

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
ঝড়ের রাতে জন্মানো সিডরের জীবনে ঝড় আজও থামেনি

২৪০ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিঝড়; ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। সাড়ে তিন হাজার মানুষের মৃত্যু। আহত ৫৫ হাজার, ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৮৫ লাখ মানুষ। আজ থেকে ঠিক ১৪ বছর আগে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতের কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের উপকূলীয় ১১ জেলা। 

সিডর নামের ওই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হেনেছিল বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদ দিয়ে। এরই পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোংলার চিলা গ্রাম। সেই দিন বিকেলে শত শত মানুষের সঙ্গে জীবন বাঁচাতে স্থানীয় সেন্ট মেরিস গির্জাসংলগ্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা সাথী সরকার ও তাঁর স্বামী জর্জি সরকার। তীব্র প্রসববেদনার মাঝেও অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে এখানে ছুটে এসেছিলেন এই মা। সূর্যোদয়ের আগে তাঁর কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক শিশু। ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসলীলার মধ্যে নতুন প্রাণের বার্তা বয়ে আনল যে শিশুটি, সাথী দম্পতি তার নাম রাখলেন সিডর; সিডর সরকার। উপকূলীয় এলাকার মানুষের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠল সিডর। ঘূর্ণিঝড়ের ১৪ বছর পূর্তির সঙ্গে সিডরও ১৪ বছরে পা দিল। 

জীবনের এ ১৪ বছরেও সিডর দেখেছে তাঁর পরিবারের টিকে থাকার সংগ্রাম। প্রকৃতির রুদ্ররোষ মাথায় নিয়ে যে শিশু পৃথিবীতে এসেছিল সে কী করে সংগ্রাম ছাড়া চলবে? উপকূলীয় আর দশটি পরিবারের মতো নিদারুণ অভাব পিছু ছাড়েনি সিডরের পরিবারের। বাবা জর্জি সরকারের একমাত্র অবলম্বন মাত্র তিন কাঠা জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটি টিনের ঘর। 

১৪ নভেম্বর রোববার সকালে সিডরদের বাড়িতে গেলে সিডরের দাদি রিভা সরকার জানালেন, সিডরের বাবা জর্জি মাছ ধরতে সাগরে গেছেন। নিজের নৌকা না থাকায় তিনি এখন অন্যের কাছ থেকে নৌকা ধার করে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া ধরতে যান। খেয়ে না খেয়েই চলছে তাঁদের জীবন। সিডরের মা সাথী সরকার একমাত্র সন্তানকে ছেড়ে ঢাকায় একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। সিডর এত দিন পাশের খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। করোনার কারণে সে এখন মোংলায় বাড়িতে থাকে। এখন মোংলায় থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। ২০২২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হবে। 

আজকের পত্রিকার সাংবাদিক এসেছে শুনে সিডর পাশের মাঠে খেলা ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়াল। প্রকৃতির মতোই দুরন্ত সে। ‘কেমন আছ’? একগাল হাসিতে উত্তর, ‘ভালো আছি’। পড়াশোনা কেমন হচ্ছে? ‘ভালো। ভালো করে না পড়লে তো বাবার মতো জেলে হতে হবে।’ হাসতে হাসতে উত্তর দিল সে। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছে করে না? হাসিমুখটা হঠাৎই গম্ভীর হয়ে গেল। অভিমান ভরা উত্তর, ‘মা-তো অনেক দূরে কাজ করে। আসতে তো পারে না।’ 

উপকূলীয় মানুষের সংগ্রাম আর জীবনের প্রতীক সিডর মা-বাবার আদর-ভালোবাসা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। এই ১৪ বছর বয়সেই সে বুঝে গেছে, উপকূলের মানুষের প্রকৃতি আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়; তাকেও সংগ্রামই করতে হবে। তার দুঃখ, প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর এলেই পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হয়; টিভি চ্যানেলেও দেখানো হয়। কিন্তু তার ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ এগিয়ে আসে না।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদিজি—বিহারে কোনো বাংলাদেশি নেই, তবে দিল্লিতে আপনার বোন বসে আছেন: ওয়াইসি

অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হলো কলেজ থেকে

গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ: নবনির্বাচিত ভিপি মৃদুল, জিএস রায়হান

বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি কবে— জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হবে তুরস্ক, চুক্তি স্বাক্ষর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত