Ajker Patrika

পরবর্তী সংঘাতের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত-পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
কাশ্মীর অঞ্চলে লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে নজর রাখছে ভারতীয় এক সেনা। ছবি: এএফপি
কাশ্মীর অঞ্চলে লাইন অব কন্ট্রোলের কাছে নজর রাখছে ভারতীয় এক সেনা। ছবি: এএফপি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। চলতি মে মাসের ৭ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত আকাশপথে সংঘর্ষের পর দুই দেশের মধ্যে এখনো বিরাজ করছে উদ্বেগ ও অস্থিরতা। বিশ্লেষকদের মতে, এমন অস্থিরতা হয়তো দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের জন্য এমন একটি নতুন পরিস্থিতি—যেখানে যে কোনো উসকানিই যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এখনো শেষ হয়নি। কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে চালানো এই অভিযানের পর আরও দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। অপরদিকে, সাম্প্রতিক সংঘর্ষকে একটি সফল প্রতিরক্ষা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। তারা সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারাও প্রস্তুত আছেন। কিন্তু যুদ্ধ বেঁধে গেলে তা পরমাণু সংঘর্ষেও রূপ নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ দুটির মধ্যে ভবিষ্যতের যে কোনো সংঘর্ষ হবে আরও প্রযুক্তিনির্ভর এবং বহুমুখী। সাম্প্রতিক সংঘর্ষে স্থল ও নৌবাহিনী তেমন কার্যকর ছিল না। তবে ভবিষ্যতে সেসব অংশও জড়িত হতে পারে। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে আরও আক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে সংঘর্ষ বাঁধলে পাকিস্তানে অবস্থিত কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করার জন্য ‘সোয়ার্ম ড্রোন’ বা ঝাঁক বেঁধে চলা ড্রোন ব্যবহার করতে পারে ভারত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালিত এই ধরনের আক্রমণে গোপন লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট আঘাত হানা সম্ভব। এতে দেশটির মানুষ চালিত বিমান ব্যবহারের প্রয়োজন কমবে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সংঘাতে কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারানোর পর ভারতের কাছে এই বিকল্পটি সর্বোত্তম মনে হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান অবশ্য ‘হাইব্রিড কৌশল’ বেছে নিতে পারে। বিশেষ করে, সীমান্ত পোস্টে সস্তা, অস্ত্রধারী ড্রোন হামলা এবং কাশ্মীর অঞ্চলে পোর্টেবল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমসহ গেরিলা গোষ্ঠীর সহায়তা দেওয়া এই কৌশলের অংশ হতে পারে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বর্তমানে উভয় দেশই তাদের মজুত বাড়ানো ও আধুনিকায়নে বিদেশি সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ভারত। আর পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো চীন। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের ক্ষেত্রেই এখন ড্রোন, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান প্রতিরক্ষা ও জ্যামিং প্রযুক্তিতে ‘আগ্রাসী কেনাকাটার’ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ আবদুল বাসিত বলছেন—দুই দেশই এখনো ব্যবহার হয়নি এমন প্রযুক্তি মাঠে নামাতে পারে, যা প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে ও কৌশলে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে। উভয় দেশের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডার আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। তবে ভারত তাদের কৌশলগত অংশীদারত্বের কারণে স্বল্পমেয়াদে চূড়ান্ত সুবিধা পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এমকিউ-৯বি ড্রোনের জন্য অস্ত্র সরবরাহ দ্রুত বাড়াতে পারে। ভারতকে নিজেদের মজুত থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাতে পারে ফ্রান্সও। অন্যদিকে, পাকিস্তান চীননির্ভর হওয়ায় কিছুটা পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বেইজিং নিজস্ব কৌশলগত সংযম বজায় রাখবে।

তবে চীনা প্রযুক্তি ও অস্ত্রের সফল ব্যবহারে অনেক পূর্বধারণাই বদলে যাচ্ছে। চীন থেকে আমদানি করা পাকিস্তানের জে-১০সি ও জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের রাফাল ও মিরাজের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি একাধিক সূত্রের দাবি, অন্তত একটি রাফাল বিমান চীনের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় ভারত-পাকিস্তানের শত্রুতা আজ একটি বড় ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান এখন চীনের জে-৩৫ স্টিলথ জেট সংগ্রহের পথে এগোচ্ছে এবং তুরস্কের সঙ্গে ফিফথ জেনারেশনের কেএএএন যুদ্ধবিমান তৈরির চুক্তিও করছে।

এই সব প্রতিযোগিতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের নিজস্ব কৌশলগত হিসাব-নিকাশে নিয়োজিত। যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত যেন পাকিস্তান নয়, বরং চীনকে প্রতিপক্ষ ধরে অগ্রসর হয়। তবে চীন চায় এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে। কারণ ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়লে বেইজিংকে দ্বিমুখী সংঘাতে পড়তে হতে পারে, যা তাদের জন্য বিপজ্জনক।

সার্বিকভাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় দুটি পারমাণবিক শক্তির এই উত্তেজনা একদিকে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অস্ত্র বিক্রির বাজার খুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে একটি বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিকে ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ দেওয়ার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত