নাজমুল ইসলাম
শিক্ষা প্রসঙ্গটি উঠলে এখনো বাংলাদেশে ঘোড়ার সঙ্গে জুড়িগাড়ির মতো করে ‘সংকট’ শব্দটি লেগে যায়। ৫০ বছর বয়সী একটি দেশে এমন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হচ্ছে। এর পেছনে কোনো একক কারণ চিহ্নিত করা কষ্টকর। অনেকগুলো বিষয় এর সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে। তারপরও যদি কোনো বিশেষ কারণ চিহ্নিত করতে হয়, তবে তা হলো গুরুত্ব। একটি স্বাধীন দেশে শিক্ষা যে অর্থে ও যেভাবে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, ততটা পায়নি। বর্তমান করোনা মহামারির সময় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৫ শতাংশ বাংলা পড়তে পারে। এর অর্থ বাকি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়ে বুঝতে পারে না। ইংরেজি ও গণিতের দুর্বলতা তার চেয়ে ঢের বেশি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছে মাতৃভাষাই যেখানে এতটা দুর্বোধ্য হয়ে আছে, সেখানে ইংরেজি বা গণিতের অবস্থা কতটা শোচনীয়! এর পেছনে খেয়ালি শিক্ষাব্যবস্থার দায় আছে নিশ্চয়ই।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশে শিক্ষার মান অবনমনের বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ নিয়ে নানা মহল, নানা সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ও করছে। এই মান বস্তুটিও আবার সবার কাছে সমান নয়। অর্থাৎ, একজনের কাছে যা মানসম্পন্ন শিক্ষা, তা অন্যের কাছে নয়। এটিই বলে দেয়, এমনকি শিক্ষা নিয়েও আমরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। এখন করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই মানের প্রশ্নটিও আর উঠছে না। উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রসঙ্গ। কারণ, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ৫০০ দিন অতিক্রম করেছে। ফলে যে দেশে শিক্ষার মান নিয়ে এমনিতেই সংশয় রয়েছে, সেখানে টানা ৫০০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর তা কী হবে—সেটা অনুমান করা খুব বেশি কঠিন নয়।
তবে সংখ্যার দিক থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে সেটা বলাই যায়। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার হারও। স্বাধীনতার পর শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের দৃশ্যমান উন্নয়ন মোটামুটি এগুলোই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেই বাস্তবতাকে পাল্টে দিচ্ছে। সরু নালার মতো আমাদের যে উন্নতি হয়েছে, করোনা মহামারি সেখানেও আঘাত হেনেছে। সংখ্যার যে উন্নতি হয়েছিল, তার গতি আবার বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। কারণ, করোনায় অসংখ্য মানুষ দরিদ্র হয়েছে। আশঙ্কা হচ্ছে, এই দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়বে। এরই মধ্যে অনেক শিশু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটি অংশের পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।
এমনিতেই দেশের শিক্ষা কাঠামো দুর্বল। এর মধ্যে বছরব্যাপী বিরতির ধাক্কা এটি কীভাবে সামলাবে, সেটা বোধগম্য নয়। তেমন কোনো পরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন মেয়াদে লকডাউন দেওয়ার মতো করেই বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি। অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষার বিষয়টি সর্বশেষ এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট ফটোকপির দোকানে মেলার খবরেই স্পষ্ট। এদিকে স্বাস্থ্য খাতের দশাও প্রায় একই। নিঃসন্দেহে করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী ভয়াবহ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের এই পরিশ্রম অনেক সময়ই নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। স্বাস্থ্য খাতের কথা এখানে উল্লেখ করার বিশেষ কারণ রয়েছে। কোভিড কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত। আবার কোভিড যে চিরতরে বিদায় নেবে, সেটাও বলা যায় না। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, উল্টোটাই সত্য বলে মনে হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য খাতের যথাযথ উন্নতি ছাড়া রাষ্ট্রের শিক্ষা বা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
কোভিডের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে শিক্ষার ওপর। কোভিড শেষ হওয়ার প্রহর গুণে সবকিছুকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু চাইলেই তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা যায় না। অথচ আমরা তাই করছি, যা বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইউকে–এর সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুদিন আগে এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘লাখো শিশু, বিশেষ করে দরিদ্র ও তরুণীরা তাদের শিক্ষার সুযোগ হারাতে বসেছে, যা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ জীবনের মোড় এরই মধ্যে অনেকের ঘুরে গেছে। শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির যে স্বপ্ন তারা দেখেছে, তা ভেঙে গেছে। শেষ পর্যন্ত যারা টিকে যাবে, তাদের জন্যও আছে বড় ধরনের আশঙ্কা। সেটা কী রকম?
শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অন ইম্প্রুভিং সিস্টেমস অব এডুকেশনের (রাইজ) এ সম্পর্কিত একটি গবেষণার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষায় ছেদ পড়লে শিক্ষার্থীদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা উঠে এসেছ গবেষণাটিতে। ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পর ২০০৯ সালে রাইজ পাকিস্তানের দুই গবেষক জিষ্ণু দাস ও তাহির আন্দরাবি এবং জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেঞ্জামিন ড্যানিয়েলস দুর্গত এলাকায় যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর তাঁরা একটি গবেষণা চালান। তাঁদের গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের পর সেখানকার স্কুলগুলো ১৪ সপ্তাহ বন্ধ ছিল। তারপর স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় চার বছর পর। তাঁরা লিখেছেন, ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, উর্দু ও গণিত বিষয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। দেখা যায়, এই তিন মাসের বিরতির কারণে ৩ থেকে ১৫ বছর শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়ে গিয়েছিল।
এই গবেষণাকে বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, মাত্র এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের শিখন ছয় মাস পিছিয়ে যায়। তাহলে বাংলাদেশে কী হচ্ছে? তবে এই কাঠামোকে ঈশ্বরের বাণীর মতো ধরে নেওয়া যাবে না অবশ্যই। সব তত্ত্বেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। সঙ্গে পরিবেশ–পরিস্থিতির কারণেও এর হেরফের হতে পারে।
যা হোক, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে। অর্থাৎ, আগস্টে খুলছে না নিশ্চিত। সে হিসাবে সাড়ে ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাহলে শিখন বিসর্জনের হিসাব দাঁড়ায়—১০৫ মাসে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, তাদের শিখনের সময় ৬০ মাস। তিন বছরের প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষা ধরলেও তা ৯৬ মাস। এর বেশি নয়। দেখা যাচ্ছে, অর্জনের চেয়ে বিসর্জনের মাত্রা বেশি।
পরের পর্ব পড়ুন
শিক্ষা প্রসঙ্গটি উঠলে এখনো বাংলাদেশে ঘোড়ার সঙ্গে জুড়িগাড়ির মতো করে ‘সংকট’ শব্দটি লেগে যায়। ৫০ বছর বয়সী একটি দেশে এমন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হচ্ছে। এর পেছনে কোনো একক কারণ চিহ্নিত করা কষ্টকর। অনেকগুলো বিষয় এর সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে। তারপরও যদি কোনো বিশেষ কারণ চিহ্নিত করতে হয়, তবে তা হলো গুরুত্ব। একটি স্বাধীন দেশে শিক্ষা যে অর্থে ও যেভাবে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, ততটা পায়নি। বর্তমান করোনা মহামারির সময় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাত্র ৩৫ শতাংশ বাংলা পড়তে পারে। এর অর্থ বাকি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়ে বুঝতে পারে না। ইংরেজি ও গণিতের দুর্বলতা তার চেয়ে ঢের বেশি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছে মাতৃভাষাই যেখানে এতটা দুর্বোধ্য হয়ে আছে, সেখানে ইংরেজি বা গণিতের অবস্থা কতটা শোচনীয়! এর পেছনে খেয়ালি শিক্ষাব্যবস্থার দায় আছে নিশ্চয়ই।
গত কয়েক বছর ধরেই দেশে শিক্ষার মান অবনমনের বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। এ নিয়ে নানা মহল, নানা সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ও করছে। এই মান বস্তুটিও আবার সবার কাছে সমান নয়। অর্থাৎ, একজনের কাছে যা মানসম্পন্ন শিক্ষা, তা অন্যের কাছে নয়। এটিই বলে দেয়, এমনকি শিক্ষা নিয়েও আমরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। এখন করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই মানের প্রশ্নটিও আর উঠছে না। উঠছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রসঙ্গ। কারণ, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় ৫০০ দিন অতিক্রম করেছে। ফলে যে দেশে শিক্ষার মান নিয়ে এমনিতেই সংশয় রয়েছে, সেখানে টানা ৫০০ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর তা কী হবে—সেটা অনুমান করা খুব বেশি কঠিন নয়।
তবে সংখ্যার দিক থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে সেটা বলাই যায়। দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার হারও। স্বাধীনতার পর শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের দৃশ্যমান উন্নয়ন মোটামুটি এগুলোই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেই বাস্তবতাকে পাল্টে দিচ্ছে। সরু নালার মতো আমাদের যে উন্নতি হয়েছে, করোনা মহামারি সেখানেও আঘাত হেনেছে। সংখ্যার যে উন্নতি হয়েছিল, তার গতি আবার বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। কারণ, করোনায় অসংখ্য মানুষ দরিদ্র হয়েছে। আশঙ্কা হচ্ছে, এই দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়বে। এরই মধ্যে অনেক শিশু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ করে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একটি অংশের পুনরায় চালু হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।
এমনিতেই দেশের শিক্ষা কাঠামো দুর্বল। এর মধ্যে বছরব্যাপী বিরতির ধাক্কা এটি কীভাবে সামলাবে, সেটা বোধগম্য নয়। তেমন কোনো পরিকল্পনাও দৃশ্যমান নয়। করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন মেয়াদে লকডাউন দেওয়ার মতো করেই বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটি। অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষার বিষয়টি সর্বশেষ এইচএসসির অ্যাসাইনমেন্ট ফটোকপির দোকানে মেলার খবরেই স্পষ্ট। এদিকে স্বাস্থ্য খাতের দশাও প্রায় একই। নিঃসন্দেহে করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী ভয়াবহ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের এই পরিশ্রম অনেক সময়ই নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে। স্বাস্থ্য খাতের কথা এখানে উল্লেখ করার বিশেষ কারণ রয়েছে। কোভিড কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত। আবার কোভিড যে চিরতরে বিদায় নেবে, সেটাও বলা যায় না। বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, উল্টোটাই সত্য বলে মনে হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য খাতের যথাযথ উন্নতি ছাড়া রাষ্ট্রের শিক্ষা বা অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
কোভিডের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়েছে শিক্ষার ওপর। কোভিড শেষ হওয়ার প্রহর গুণে সবকিছুকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু চাইলেই তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা যায় না। অথচ আমরা তাই করছি, যা বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইউকে–এর সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুদিন আগে এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘লাখো শিশু, বিশেষ করে দরিদ্র ও তরুণীরা তাদের শিক্ষার সুযোগ হারাতে বসেছে, যা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ জীবনের মোড় এরই মধ্যে অনেকের ঘুরে গেছে। শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির যে স্বপ্ন তারা দেখেছে, তা ভেঙে গেছে। শেষ পর্যন্ত যারা টিকে যাবে, তাদের জন্যও আছে বড় ধরনের আশঙ্কা। সেটা কী রকম?
শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অন ইম্প্রুভিং সিস্টেমস অব এডুকেশনের (রাইজ) এ সম্পর্কিত একটি গবেষণার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষায় ছেদ পড়লে শিক্ষার্থীদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে তা উঠে এসেছ গবেষণাটিতে। ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ভূমিকম্প হয়েছিল। এর পর ২০০৯ সালে রাইজ পাকিস্তানের দুই গবেষক জিষ্ণু দাস ও তাহির আন্দরাবি এবং জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বেঞ্জামিন ড্যানিয়েলস দুর্গত এলাকায় যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর তাঁরা একটি গবেষণা চালান। তাঁদের গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের পর সেখানকার স্কুলগুলো ১৪ সপ্তাহ বন্ধ ছিল। তারপর স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় চার বছর পর। তাঁরা লিখেছেন, ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, উর্দু ও গণিত বিষয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়। দেখা যায়, এই তিন মাসের বিরতির কারণে ৩ থেকে ১৫ বছর শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়ে গিয়েছিল।
এই গবেষণাকে বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, মাত্র এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের শিখন ছয় মাস পিছিয়ে যায়। তাহলে বাংলাদেশে কী হচ্ছে? তবে এই কাঠামোকে ঈশ্বরের বাণীর মতো ধরে নেওয়া যাবে না অবশ্যই। সব তত্ত্বেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। সঙ্গে পরিবেশ–পরিস্থিতির কারণেও এর হেরফের হতে পারে।
যা হোক, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে। অর্থাৎ, আগস্টে খুলছে না নিশ্চিত। সে হিসাবে সাড়ে ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাহলে শিখন বিসর্জনের হিসাব দাঁড়ায়—১০৫ মাসে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, তাদের শিখনের সময় ৬০ মাস। তিন বছরের প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষা ধরলেও তা ৯৬ মাস। এর বেশি নয়। দেখা যাচ্ছে, অর্জনের চেয়ে বিসর্জনের মাত্রা বেশি।
পরের পর্ব পড়ুন
আগামী ৩ সেপ্টেম্বর চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অনুষ্ঠিত হবে বড় ধরনের সামরিক কুচকাওয়াজ। এই অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের একসঙ্গে উপস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা দিতে যাচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগেসাহারা মরুভূমির প্রান্তবর্তী ইউরেনিয়ামে সমৃদ্ধ দেশ নাইজারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে চায় রাশিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরইমধ্যে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা রোসাটম এবং নাইজার কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি অনুযায়ী...
১ দিন আগেকিন্তু আরাকান আর্মি এখনো সেই অর্থে সিতওয়ে ও কায়াকফিউতে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালায়নি। কিন্তু কেন? এর পেছনে রয়েছে তিনটি কৌশলগত কারণ—কায়াকফিউতে চীনের বড় বিনিয়োগ, সিতওয়েতে ভারতের বিনিয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের কাছে রাজনৈতিক বৈধতা ও শাসন কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এএ–এর অগ্রাধিকার।
৩ দিন আগেআগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের আগেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নীরবে বড়সড় পরিবর্তন এনেছেন। আগের তুলনায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি এবার অনেকটাই ভিন্ন।
৩ দিন আগে