Ajker Patrika

নাইজারের ইউরেনিয়ামে নজর পড়েছে রাশিয়ার, সব হারাতে বসেছে ফ্রান্স

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দীর্ঘদিন ধরে নাইজার তাদের ইউরেনিয়াম ফ্রান্সে রপ্তানি করে আসছিল। ছবি: এএফপি
দীর্ঘদিন ধরে নাইজার তাদের ইউরেনিয়াম ফ্রান্সে রপ্তানি করে আসছিল। ছবি: এএফপি

সাহারা মরুভূমির প্রান্তবর্তী ইউরেনিয়ামে সমৃদ্ধ দেশ নাইজারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে চায় রাশিয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরইমধ্যে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিও হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা রোসাটম এবং নাইজার কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি নাইজারকে চিকিৎসাক্ষেত্রে পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও স্থানীয় জনশক্তি প্রশিক্ষণেও সহযোগিতা করবে রাশিয়া। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটি হবে পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

তবে, এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এটি রাশিয়ার একটি ভূ-রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। পশ্চিমা প্রভাব মোকাবিলায় এ পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে মস্কো। বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে যদিও নাইজার এখনো আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার এ পরিকল্পনা বাস্তবে কতটা এগোবে, তা স্পষ্ট নয় বলেই মত অনেকের।

দীর্ঘদিন ধরে নাইজার তাদের ইউরেনিয়াম ফ্রান্সে রপ্তানি করে আসছিল। তবে নতুন সামরিক সরকার সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর পরিস্থিতির বদলেছে। গত জুনে ফরাসি পারমাণবিক জ্বালানি কোম্পানি ওরানো পরিচালিত একটি খনি জাতীয়করণ করেছে নাইজার। যা রাশিয়ার জন্য অংশীদার হওয়ার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

ওরানো (পূর্ব নাম আরেভা) গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে নাইজারের ইউরেনিয়াম খনি পরিচালনা করেছে, যা ফ্রান্সের জ্বালানি কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তবুও ফ্রান্স কখনোই তাদের আফ্রিকান অংশীদারকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তি দেয়নি। ফলে নাইজার আজও প্রধানত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নাইজেরিয়া থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল।

নতুন প্রেক্ষাপটে নাইজারের সামনে পারমাণবিক শক্তির দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে রাশিয়া। গত জুলাইয়ে নাইজারের রাজধানী নিয়ামে সফরকালে রুশ জ্বালানি মন্ত্রী সের্গেই সিভিলেভ বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু ইউরেনিয়াম খনন নয়, বরং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা তৈরি করা।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়া যে নাইজারকে পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় এর পেছনে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ বড় প্রভাব হিসেবে কাজ করছে। রাশিয়ার লক্ষ্য বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইউরেনিয়াম ভাণ্ডার ইমুরারেন খনির উন্নয়ন করা। এই সাইটটি উন্নয়নের ফরাসি পরিকল্পনা প্রথমে আটকে যায় ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামের চাহিদা হ্রাস পাওয়ায়। পরে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি আবারও উদ্যোগ নেওয়া হলেও কয়েক সপ্তাহ পর ক্ষমতা দখল করা সামরিক জান্তা ওরানোর ইমুরারেন খনির অধিকার বাতিল করে দেয়। যদি রাশিয়া এই সম্পদ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, তবে বৈশ্বিক ইউরেনিয়াম সরবরাহে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

এ ছাড়া আরলির সোমিনাক খনিতে জমে থাকা প্রায় ১ হাজার ৪০০ টন আধা-প্রক্রিয়াজাত ইউরেনিয়ামও (ইয়েলোকেক) রাশিয়া তুলনামূলক কম দামে কিনে নিতে পারে। যদিও আগে চীন ও ইরানও আগ্রহ দেখিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে তা আর এগোয়নি।

এ ছাড়া অন্য প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। প্রকল্পটি প্রযুক্তিগতভাবে জটিল, অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল এবং নিরাপত্তার দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। মালি, বুরকিনা ফাসো ও পশ্চিম নাইজারের বহু এলাকা বর্তমানে সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় পুরো সাহেল অঞ্চলকে অস্থিতিশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রাশিয়া যেটি কাজে লাগিয়েছে, তা হলো ফরাসিদের বিরুদ্ধে নাইজারবাসীর ক্ষোভ। নাইজারের বাসিন্দাদের ভাষ্য—দীর্ঘদিন ধরে নাইজারকে কাঁচামাল সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে ফরাসিরা। ফরাসিদের ধারণা নাইজার শুধু কাাঁচামালই সরবরাহ করবে, কখনোই শিল্পায়নের যুগে প্রবেশ করবে না। এই ক্ষোভটাকেই কাজে লাগিয়েছে রাশিয়া।

পাশের দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সামরিক সরকার ইতিমধ্যেই তাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত—সোনার খনিতে নতুন নিয়ম চালু করেছে। এসব নিয়মে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাধ্য করা হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়িক অংশীদারদের বড় ভূমিকা দিতে এবং উৎপাদনের একটি অংশ স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে। ফলে চাকরি ও মুনাফার বড় অংশ দেশেই থাকছে। এমনকি রাজস্ব নিয়ে বিরোধের জেরে কয়েক মাস ধরে কানাডীয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করে রেখেছে মালি।

এবার একই পথে হাঁটছে নাইজারও। ওরানোর কার্যক্রম বন্ধ ও জাতীয়করণের ঘটনায় কোম্পানির সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছে নাইজার সরকার। প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রধান ইব্রাহিম কুরমোকে চলতি বছর মে মাসে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়। সামরিক জান্তা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ফরাসিদের নাইজার থেকে ইউরেনিয়াম নেওয়ার যুগ শেষ। এক সরকারি কর্মকর্তা ফরাসি দৈনিক ‘লে মোঁদ’-কে বলছেন, ‘ওরানো আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জম্মু-কাশ্মীরে ধ্বংস করা হলো ৪৪ হাজার কেজি রসগোল্লা

সরকারের কমিটি পছন্দ হয়নি, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ‎প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত