সিএনএনের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
সিএনএনের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
২১ ঘণ্টা আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
৩ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
৩ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
৩ দিন আগেকাঠমান্ডু পোস্টের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
এর আগে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ঋণ সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফের সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতও এখন জিডিপির ৮০ শতাংশ সমপরিমাণ সরকারি ঋণের বোঝা বহন করছে। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো টিকে থাকতে অনুদানভিত্তিক বা ছাড়সুবিধাযুক্ত ঋণের ওপর নির্ভর করছে।
এই বিপুল ঋণসংকটের ঝুঁকি কেবল এর পরিমাণেই নয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও লুকিয়ে আছে। একদিকে, সীমিত করভিত্তি, অদক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অন্যদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে বাইরের অংশীদারদের ওপর। ঋণের চাপ বাড়ায় উন্নয়ন খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে যাচ্ছে। ফলে জন–অর্থনীতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।
কোভিড–১৯ মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের দেশগুলো ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তীব্র সংকটে পড়ে যায়। ওই সময় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। রিজার্ভে চাপ পড়ায় সরকারগুলো বাধ্য হয় ঋণ নিতে—দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখা ও জ্বালানি–পণ্য মজুত রাখার জন্য।
এর ফলেই পুরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে নয়, বরং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাতের ফল। উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্য বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০২৩ সালে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ‘টাইগার ইকোনমি’ খ্যাত বাংলাদেশেও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। ভারতের বহুমুখী অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড়মূল্যে জ্বালানি চুক্তির সহায়তায় ৩ শতাংশের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জন্য এখন প্রতিটি বৈশ্বিক সংকটের প্রথম আঘাত আসে পেট্রলপাম্পে ও মুদি দোকানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বাস্তবতা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র—যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা—২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এই অঞ্চলের পোশাক ও শ্রমনির্ভর রপ্তানির ওপর। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, শ্রীলঙ্কার অ্যাপারেলস ও ভারতের পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা। কারণ এই শুল্ক তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আরও গভীর করছে।
দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা—যেমন দুর্বল রাজস্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ভর্তুকি—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারকে বাইরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলেছে। এতে আর্থিক খাতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের কথা বলা যায়। দেশটিতে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা বিদ্যুতের দর ‘সার্কুলার ঋণের’ ফাঁদ তৈরি করেছে, যা ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রের ঘাড়েই এসে পড়ে। কারণ, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না, আবার বেশি ভর্তুকি দিতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ করা অর্থও ভর্তুকি মেটাতে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পুরো অঞ্চলেরই চিত্র এক—ভর্তুকি এখন অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তা ছাড়া, দুর্বল করভিত্তি আর্থিক সক্ষমতাকে আরও সীমিত করছে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মাত্র ৩ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ভারতে প্রায় ৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারি অর্থের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এগুলো শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত ভুল সিদ্ধান্তের ফল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি জনপ্রিয় পদক্ষেপই বেশি প্রাধান্য পায়। এই প্রবণতা সংকটকালে সরকারের কার্যকর সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অঞ্চল এখনো বন্যা, তাপপ্রবাহ আর অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টির মতো জলবায়ু-ঝুঁকির প্রবল শিকার। এসব দুর্যোগ ফসল, জীবিকা, মানববসতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান গরমে প্রতিবছর আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে অনিয়মিত জলবায়ুর প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শীতলীকরণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানি ও সরকারি ব্যয়ও বাড়ছে।
এ ধরনের জলবায়ু-দুর্যোগের পর দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ নিতে হয়। কারণ অভিযোজন বা টেকসই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশই ঋণভিত্তিক। ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকারগুলো ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এতে আর্থিক চাপ বাড়লেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি খুব একটা কমে না। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু-ঋণ ফাঁদ’—যেখানে দেশগুলোকে প্রথমে দুর্যোগে এবং পরে ঋণের বোঝায় শাস্তি পেতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণে স্বল্পসুদ বা অনুদানভিত্তিক তহবিল না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বারবার জলবায়ুর চক্রাকারে আঘাতের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।
ঋণমুক্ত সহায়তার পথ যেমন ‘ঋণ-বিনিময়ে জলবায়ু তহবিল’ বা আঞ্চলিক ঝুঁকি-ভাগাভাগি তহবিল দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক জটিলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো খুব ধীর গতির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো বারবার দেউলিয়া পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটি ১৭০ কোটি ডলারের একটি ‘এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’ পেয়েছে, যা দেশটির মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ঋণের চাপ এখনো টেকসই নয়। পাকিস্তান ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েছে আইএমএফ থেকে। এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধেই দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।
বাংলাদেশও ৪৭০ কোটি ডলারের একটি আইএমএফ কর্মসূচি নিয়েছে চলতি হিসাব ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা বিনিময় হার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ধীর গতির। ছোট দেশগুলো—যেমন নেপাল ও ভুটান—সংকীর্ণ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্স ও স্বল্পসুদে ঋণের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে আইএমএফের সহায়তা জরুরি সংকটকালীন সময়ে কিছুটা সময় ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে দেশগুলোর উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
মধ্য মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দরকার একটি সমন্বিত কাঠামো, যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে—ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বর্তমানে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত—এটি বাড়ানো গেলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
একই সঙ্গে একটি ঝুঁকি বিমা তহবিল গঠন জরুরি, যা ক্যারিবীয় অঞ্চলের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স ফ্যাসিলিটি’-এর মতো কাজ করবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, নতুন ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে। এ ধরনের যৌথ ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে টেকসই শক্তিতে রূপ দিতে পারে—যা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে সরকারকে করের আওতা বাড়াতে হবে, রাজনৈতিক কারণে দেওয়া ভর্তুকি কমাতে হবে এবং লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে রাজস্ব ঘাটতি কমানো যাবে, তবে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে জ্বালানি খাতে।
এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা স্বচ্ছভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব প্রকাশ করতে পারে। মধ্যমেয়াদি ব্যয় কাঠামো গ্রহণ এবং বাজেটে জলবায়ু ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ঋণ যেন উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যয় হয়, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—দেশগুলো কি একা লড়াই করবে, নাকি একসঙ্গে মিলে আর্থিক স্থিতি গড়বে। বারবার আইএমএফের সহায়তায় টিকে থাকা নয়, বরং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্থিতিশীলতার দিকেই এগোতে হবে এখন। যৌথ উদ্যোগে এই অঞ্চলই পারে দুর্বলতাকে রূপান্তর করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতে পারে নতুন সূচনা।
লেখক:
বিজ্ঞান বাবু রেজমি, সুইজারল্যান্ডের ইএইচটি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি গবেষক
শিশির ভান্ডারি, নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
এর আগে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ঋণ সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে পাকিস্তান অল্পের জন্য একই পরিণতি থেকে রক্ষা পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল—আইএমএফের সহায়তা চাওয়ার ঘটনাও বাংলাদেশের পরিস্থিতির গভীরতা তুলে ধরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতও এখন জিডিপির ৮০ শতাংশ সমপরিমাণ সরকারি ঋণের বোঝা বহন করছে। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের মতো ছোট দেশগুলো টিকে থাকতে অনুদানভিত্তিক বা ছাড়সুবিধাযুক্ত ঋণের ওপর নির্ভর করছে।
এই বিপুল ঋণসংকটের ঝুঁকি কেবল এর পরিমাণেই নয়, দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও লুকিয়ে আছে। একদিকে, সীমিত করভিত্তি, অদক্ষ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জ্বালানি ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক ব্যবস্থাকে সংকুচিত করেছে। অন্যদিকে, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার সীমাবদ্ধতা দক্ষিণ এশিয়াকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে বাইরের অংশীদারদের ওপর। ঋণের চাপ বাড়ায় উন্নয়ন খাত ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ব্যয় করার মতো অর্থ কমে যাচ্ছে। ফলে জন–অর্থনীতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হচ্ছে।
কোভিড–১৯ মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশ্ববাজারে মূল্য অস্থিরতার ওপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের দেশগুলো ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তীব্র সংকটে পড়ে যায়। ওই সময় জ্বালানি ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। রিজার্ভে চাপ পড়ায় সরকারগুলো বাধ্য হয় ঋণ নিতে—দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখা ও জ্বালানি–পণ্য মজুত রাখার জন্য।
এর ফলেই পুরো অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে। এই মূল্যবৃদ্ধি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে নয়, বরং আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ব্যাঘাতের ফল। উদাহরণ হিসেবে, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কায় ভোক্তা মূল্য বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ। পাকিস্তানে ২০২৩ সালে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ‘টাইগার ইকোনমি’ খ্যাত বাংলাদেশেও ২০২৫ সালে মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। ভারতের বহুমুখী অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল হলেও, রাশিয়ার সঙ্গে ছাড়মূল্যে জ্বালানি চুক্তির সহায়তায় ৩ শতাংশের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কোটি মানুষের জন্য এখন প্রতিটি বৈশ্বিক সংকটের প্রথম আঘাত আসে পেট্রলপাম্পে ও মুদি দোকানে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বাণিজ্যিক বাস্তবতা। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র—যা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা—২০ থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এই অঞ্চলের পোশাক ও শ্রমনির্ভর রপ্তানির ওপর। এতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস, শ্রীলঙ্কার অ্যাপারেলস ও ভারতের পোশাক খাতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য এটি বড় ধাক্কা। কারণ এই শুল্ক তাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে এবং দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতাকে আরও গভীর করছে।
দেশীয় অর্থনৈতিক কাঠামোগত সমস্যা—যেমন দুর্বল রাজস্বব্যবস্থা ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় ভর্তুকি—দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকারকে বাইরের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলেছে। এতে আর্থিক খাতও দুর্বল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের কথা বলা যায়। দেশটিতে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখা বিদ্যুতের দর ‘সার্কুলার ঋণের’ ফাঁদ তৈরি করেছে, যা ঘুরে ফিরে রাষ্ট্রের ঘাড়েই এসে পড়ে। কারণ, সরকার পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না, আবার বেশি ভর্তুকি দিতে গিয়ে অন্য খাতে বরাদ্দ করা অর্থও ভর্তুকি মেটাতে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। পুরো অঞ্চলেরই চিত্র এক—ভর্তুকি এখন অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তা ছাড়া, দুর্বল করভিত্তি আর্থিক সক্ষমতাকে আরও সীমিত করছে। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মাত্র ৩ শতাংশ নাগরিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ভারতে প্রায় ৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সরকারি অর্থের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে। এগুলো শুধু অর্থনৈতিক দুর্বলতা নয়, বরং নীতিনির্ধারণে কাঠামোগত ভুল সিদ্ধান্তের ফল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলার চেয়ে স্বল্পমেয়াদি জনপ্রিয় পদক্ষেপই বেশি প্রাধান্য পায়। এই প্রবণতা সংকটকালে সরকারের কার্যকর সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুনরুদ্ধারের পথকে কঠিন করে তোলে।
জলবায়ু পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আর্থিক সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এই অঞ্চল এখনো বন্যা, তাপপ্রবাহ আর অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টির মতো জলবায়ু-ঝুঁকির প্রবল শিকার। এসব দুর্যোগ ফসল, জীবিকা, মানববসতি ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু পাকিস্তানেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবিকা বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান গরমে প্রতিবছর আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে অনিয়মিত জলবায়ুর প্রভাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, শীতলীকরণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানি ও সরকারি ব্যয়ও বাড়ছে।
এ ধরনের জলবায়ু-দুর্যোগের পর দেশগুলোকে নতুন করে ঋণ নিতে হয়। কারণ অভিযোজন বা টেকসই উন্নয়ন তহবিলের বড় অংশই ঋণভিত্তিক। ফলে টিকে থাকার লড়াইয়ে সরকারগুলো ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে। এতে আর্থিক চাপ বাড়লেও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি খুব একটা কমে না। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলবায়ু-ঋণ ফাঁদ’—যেখানে দেশগুলোকে প্রথমে দুর্যোগে এবং পরে ঋণের বোঝায় শাস্তি পেতে হয়। যথেষ্ট পরিমাণে স্বল্পসুদ বা অনুদানভিত্তিক তহবিল না থাকলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বারবার জলবায়ুর চক্রাকারে আঘাতের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে।
ঋণমুক্ত সহায়তার পথ যেমন ‘ঋণ-বিনিময়ে জলবায়ু তহবিল’ বা আঞ্চলিক ঝুঁকি-ভাগাভাগি তহবিল দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক অর্থায়নের সুযোগ দিতে পারে। তবে রাজনৈতিক জটিলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভাবে এসব উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো খুব ধীর গতির।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো বারবার দেউলিয়া পরিস্থিতি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটি ১৭০ কোটি ডলারের একটি ‘এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’ পেয়েছে, যা দেশটির মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সরকারি ঋণের চাপ এখনো টেকসই নয়। পাকিস্তান ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে আরও ৭০০ কোটি ডলার সহায়তা নিয়েছে আইএমএফ থেকে। এতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সাফল্য এসেছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধেই দেশটির মোট রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।
বাংলাদেশও ৪৭০ কোটি ডলারের একটি আইএমএফ কর্মসূচি নিয়েছে চলতি হিসাব ঘাটতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে, যা বিনিময় হার সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো ধীর গতির। ছোট দেশগুলো—যেমন নেপাল ও ভুটান—সংকীর্ণ রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে বিদেশি সহায়তা, রেমিট্যান্স ও স্বল্পসুদে ঋণের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে। সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে আইএমএফের সহায়তা জরুরি সংকটকালীন সময়ে কিছুটা সময় ও স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে দেশগুলোর উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা ও ঋণ ব্যবস্থাপনাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা।
মধ্য মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার দরকার একটি সমন্বিত কাঠামো, যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াবে। এর একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে—ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ২০৪০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৯০০ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বর্তমানে অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পর্যন্ত—এটি বাড়ানো গেলে বৈশ্বিক সরবরাহ ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
একই সঙ্গে একটি ঝুঁকি বিমা তহবিল গঠন জরুরি, যা ক্যারিবীয় অঞ্চলের ‘ক্লাইমেট রিস্ক ইন্স্যুরেন্স ফ্যাসিলিটি’-এর মতো কাজ করবে। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে, নতুন ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে। এ ধরনের যৌথ ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা অঞ্চলটির অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে টেকসই শক্তিতে রূপ দিতে পারে—যা পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য কার্যকর প্রণোদনা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে সরকারকে করের আওতা বাড়াতে হবে, রাজনৈতিক কারণে দেওয়া ভর্তুকি কমাতে হবে এবং লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করলে রাজস্ব ঘাটতি কমানো যাবে, তবে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে—বিশেষ করে জ্বালানি খাতে।
এ ছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা স্বচ্ছভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও হিসাব প্রকাশ করতে পারে। মধ্যমেয়াদি ব্যয় কাঠামো গ্রহণ এবং বাজেটে জলবায়ু ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত করাও জরুরি। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ঋণ যেন উৎপাদনশীল বিনিয়োগে ব্যয় হয়, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—দেশগুলো কি একা লড়াই করবে, নাকি একসঙ্গে মিলে আর্থিক স্থিতি গড়বে। বারবার আইএমএফের সহায়তায় টিকে থাকা নয়, বরং টেকসই প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক স্থিতিশীলতার দিকেই এগোতে হবে এখন। যৌথ উদ্যোগে এই অঞ্চলই পারে দুর্বলতাকে রূপান্তর করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতায়—যা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হতে পারে নতুন সূচনা।
লেখক:
বিজ্ঞান বাবু রেজমি, সুইজারল্যান্ডের ইএইচটি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির পিএইচডি গবেষক
শিশির ভান্ডারি, নিউইয়র্কভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
কাঠমান্ডু পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১৪ ঘণ্টা আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
৩ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
৩ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধের আড়ালে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ও বিচারসংক্রান্ত সংকট থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর সেসব সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনকি এই যুদ্ধবিরতিকেও তিনি ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যদিও অনেকে একে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপের ফল বলে মনে করছেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালন পিনকাসের ভাষায়, এটি ছিল সাজানো এক সমাপ্তি, যা ওয়াশিংটনের ধৈর্যের শেষ সীমা টেনে এনেছে।
তাহলে যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসছে? নিচে ছয়টি বড় দিক তুলে ধরা হলো—
আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন
ইসরায়েল আজ বিশ্বমঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত দুই বছরে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যত দিন গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে, তত দিন এই বিচ্ছিন্নতা দূর হবে না।
গত সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু ‘সুপার স্পার্টা’ (প্রাচীন গ্রিক সামরিক সাম্রাজ্য) গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে একপ্রকার আত্মনির্ভর, যুদ্ধনির্ভর ইসরায়েলের রূপরেখা দেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেটি ভালোভাবে নেননি। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ধসে পড়ে, শেকেল দুর্বল হয়ে যায়। ইসরায়েলের ব্যবসায়ী সংগঠন ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম স্পষ্ট করে জানায়, ‘আমরা স্পার্টা নই।’
ভেঙে পড়তে পারে ডানপন্থী জোট
গাজা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু তা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।
যুদ্ধকালে তিনি মূলত ডানপন্থী ও ধর্মীয় চরমপন্থীদের ওপর নির্ভর করেছেন। বিশেষ করে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সমর্থনে। তাঁরা যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনো জোটে রয়েছেন।
তবে আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা জোট ছেড়ে দিতে পারেন। সে সম্ভাবনা এড়াতে নেতানিয়াহু নতুন আইনের প্রস্তাব আনছেন, যেখানে উগ্রবাদী ইহুদি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এতে তিনি আশা করছেন, ধর্মীয় দলগুলো আবারও তাঁর জোটে ফিরে আসবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কি দোষী সাব্যস্ত হবেন নেতানিয়াহু
এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা শুনছেন। দোষী প্রমাণিত হলে এর দায়ও পড়বে নেতানিয়াহুর ওপর।
যদিও রায় দিতে এখনো সময় লাগবে। আইসিসির মামলার নিষ্পত্তি অনিশ্চিত আর আইসিজের রায় ২০২৭ সালের আগে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে আইসিসি সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন।
ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে ছেড়ে যাবেন
এ সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তারও সীমা রয়েছে।
২০২১ সালে নেতানিয়াহু যখন জেতার সঙ্গে সঙ্গে জো বাইডেনকে জয়ের শুভেচ্ছা জানান, তখন ট্রাম্প নাকি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
সম্প্রতি দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্প নাকি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সে (নেতানিয়াহু) আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে!’ তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘গাজায় পুনরায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন আমার অনুমতি ছাড়া হবে না।’ সুতরাং, যদি নেতানিয়াহু আবার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেন, ট্রাম্পের সমর্থন হারানো অবশ্যম্ভাবী।
৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ, এর তদন্ত হবে কি
এখন ইসরায়েলে এ বিষয় ক্রমেই সম্ভাব্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মারাত্মক ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। পরে তাদের প্রধানেরা পদত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু নিজের সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার এ তদন্তের বিরোধিতা করেছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, আর তদন্ত ঠেকানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কি জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
হ্যাঁ, সেটি পুরোপুরি সম্ভব। ট্রাম্প নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ আসলে নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতির বিচার থেকে দৃষ্টি সরানোর উপায় ছিল।
নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত—ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে সিগারেট ও শ্যাম্পেইন কেলেঙ্কারির জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া থামেনি এবং যুদ্ধবিরতির পর সেটি আরও গতি পেতে পারে। তাই বলা যায়, নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রেও সে দেশের আইন থেমে থাকবে না।
গাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধের আড়ালে নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ও বিচারসংক্রান্ত সংকট থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর সেসব সমস্যা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনকি এই যুদ্ধবিরতিকেও তিনি ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যদিও অনেকে একে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চাপের ফল বলে মনে করছেন।
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত অ্যালন পিনকাসের ভাষায়, এটি ছিল সাজানো এক সমাপ্তি, যা ওয়াশিংটনের ধৈর্যের শেষ সীমা টেনে এনেছে।
তাহলে যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসছে? নিচে ছয়টি বড় দিক তুলে ধরা হলো—
আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন
ইসরায়েল আজ বিশ্বমঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন। গত দুই বছরে গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, লাখো মানুষ দুর্ভিক্ষে ভুগছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যত দিন গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হবে, তত দিন এই বিচ্ছিন্নতা দূর হবে না।
গত সেপ্টেম্বরে নেতানিয়াহু ‘সুপার স্পার্টা’ (প্রাচীন গ্রিক সামরিক সাম্রাজ্য) গঠনের স্বপ্ন দেখিয়ে একপ্রকার আত্মনির্ভর, যুদ্ধনির্ভর ইসরায়েলের রূপরেখা দেন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেটি ভালোভাবে নেননি। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জ ধসে পড়ে, শেকেল দুর্বল হয়ে যায়। ইসরায়েলের ব্যবসায়ী সংগঠন ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম স্পষ্ট করে জানায়, ‘আমরা স্পার্টা নই।’
ভেঙে পড়তে পারে ডানপন্থী জোট
গাজা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নেতানিয়াহু তা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।
যুদ্ধকালে তিনি মূলত ডানপন্থী ও ধর্মীয় চরমপন্থীদের ওপর নির্ভর করেছেন। বিশেষ করে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সমর্থনে। তাঁরা যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করলেও এখনো জোটে রয়েছেন।
তবে আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরা জোট ছেড়ে দিতে পারেন। সে সম্ভাবনা এড়াতে নেতানিয়াহু নতুন আইনের প্রস্তাব আনছেন, যেখানে উগ্রবাদী ইহুদি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এতে তিনি আশা করছেন, ধর্মীয় দলগুলো আবারও তাঁর জোটে ফিরে আসবে।
আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে কি দোষী সাব্যস্ত হবেন নেতানিয়াহু
এ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা শুনছেন। দোষী প্রমাণিত হলে এর দায়ও পড়বে নেতানিয়াহুর ওপর।
যদিও রায় দিতে এখনো সময় লাগবে। আইসিসির মামলার নিষ্পত্তি অনিশ্চিত আর আইসিজের রায় ২০২৭ সালের আগে আসার সম্ভাবনা নেই। তবে দোষী সাব্যস্ত হলে আইসিসি সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিতে পারেন।
ট্রাম্প কি নেতানিয়াহুকে ছেড়ে যাবেন
এ সম্ভাবনাও বেশ জোরালো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তারও সীমা রয়েছে।
২০২১ সালে নেতানিয়াহু যখন জেতার সঙ্গে সঙ্গে জো বাইডেনকে জয়ের শুভেচ্ছা জানান, তখন ট্রাম্প নাকি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
সম্প্রতি দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্প নাকি চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘সে (নেতানিয়াহু) আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে!’ তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ‘গাজায় পুনরায় ইসরায়েলি সেনা মোতায়েন আমার অনুমতি ছাড়া হবে না।’ সুতরাং, যদি নেতানিয়াহু আবার আগ্রাসী পদক্ষেপ নেন, ট্রাম্পের সমর্থন হারানো অবশ্যম্ভাবী।
৭ অক্টোবরের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ, এর তদন্ত হবে কি
এখন ইসরায়েলে এ বিষয় ক্রমেই সম্ভাব্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মারাত্মক ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। পরে তাদের প্রধানেরা পদত্যাগ করেন।
নেতানিয়াহু নিজের সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বারবার এ তদন্তের বিরোধিতা করেছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, আর তদন্ত ঠেকানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সরকারকে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নেতানিয়াহুর কি জেলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
হ্যাঁ, সেটি পুরোপুরি সম্ভব। ট্রাম্প নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজা যুদ্ধ আসলে নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতির বিচার থেকে দৃষ্টি সরানোর উপায় ছিল।
নেতানিয়াহু বর্তমানে তিনটি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত—ঘুষ, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
এর আগে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে সিগারেট ও শ্যাম্পেইন কেলেঙ্কারির জন্য নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার আহ্বানও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া থামেনি এবং যুদ্ধবিরতির পর সেটি আরও গতি পেতে পারে। তাই বলা যায়, নেতানিয়াহুর ক্ষেত্রেও সে দেশের আইন থেমে থাকবে না।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১৪ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
২১ ঘণ্টা আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
৩ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
এ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পানি সরবরাহকারী সংস্থা, এমনকি প্রেসিডেন্সির সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’
কিন্তু ছয় মাস ধরে ঘোরাঘুরির পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই আন্দোলন দ্রুত হাজারো তরুণের বিক্ষোভে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভের মুখে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পতন ঘটেছে।
উল্কিতে ভরা দুই মুষ্টি তুলে ধরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘ওই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনগুলোর একটি ছিল। এই জয় আমাদের জনগণের জন্য, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।’
তবে পরে কী হবে—সে বিষয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো ও রাজধানীর কেন্দ্রে জমায়েত হাজারো তরুণের এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই, তাঁরা সেটি নিয়ে তেমন চিন্তিতও নন। এতে দেশটির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। যদিও তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।
এর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।
ক্যাপসাট নামে বিশেষ সেনাদলের প্রধান কর্নেল মাইকেল র্যানড্রিয়ানিরিনা জানান, শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ একটি সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান। আফ্রিকান ইউনিয়ন এরই মধ্যে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত’ মাদাগাস্কারের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আগেও আফ্রিকান জোটটি মালি, বুরকিনা ফাসো ও গিনির মতো দেশে একই ব্যবস্থা নিয়েছিল।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাদাগাস্কারের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আরনো লেওনার্দ বলেন, একটার পর একটা সরকার আসে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে তারা অরাজকতা দূর করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি প্রেসিডেন্টই ‘উদ্ধারকর্তা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর প্রতিটি প্রজন্ম রাস্তায় নেমে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এবার শুধু একটাই পার্থক্য, আগে স্লোগান ছাপা হতো লিফলেটে আর এখন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ ঠিক একই রকম রয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত তরুণ আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাশীল। বিক্ষোভে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত সিকার লেব্লাঁ বলেন, ‘আমি বেশ আশাবাদী যে, ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। তাদের হাতে দুই বছর সময়। যদি তারা ব্যর্থ হয়, আমরা তাদেরও তাড়াব।’
তবে দ্বীপ দেশটির সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ ভ্যানিলা রপ্তানিকারক ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই দেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। মাথাপিছু আয় মাত্র ৫০০ ডলারের মতো এবং প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মানুষ দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বৈশ্বিক সমৃদ্ধির মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ১৪ গুণ বাড়াতে হবে।
বিশ্বজুড়ে জেন-জি তরুণদের বিস্ফোরণ
যে জেন-জিদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকারের পতন ঘটেছে, সে বিক্ষোভের ঢেউ এর আগে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও (মরক্কো, বাংলাদেশ, নেপাল, কেনিয়া ও পেরু) দেখা গেছে। তবে দেশগুলোতে এখনো আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এ তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে সহায়তা করছে। অনেকে ‘ওয়ান পিস’ নামের জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমের ‘স্কাল অ্যান্ড বোনস’ লোগো ব্যবহার করে প্রতিবাদের প্রতীক তৈরি করেছে। তবে ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রশ্নে তাঁদের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।
মাদাগাস্কারের পাহাড়ি রাজধানী আনতানানারিভোর ‘মে ১৩ স্কয়ার’ দেশটির ১৯৭২ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিবাহী স্থান। এখানেই জেন-জিরা কর্নেল র্যানড্রিয়ানিরিনার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ বিয়ার খাচ্ছে, কেউ গ্রিল করা স্ন্যাকস খাচ্ছে আর মঞ্চে ব্যান্ড সংগীত গাইছে—পতিত রাজোয়েলিনাকে নিয়ে অশ্লীল ব্যঙ্গাত্মক গান।
শিল্পকলার ছাত্র হেনরি রাফেহিভোলা বলেন, রাজোয়েলিনার মতো লোকজন সবারই বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে। দেশ খারাপ হলে তাঁরা ফ্রান্সে পালিয়ে যান।
রাজোয়েলিনার সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তিনি ফ্রান্সের (সাবেক ঔপনিবেশিক) কাছের মানুষ এবং বিদেশি প্রভাবের কাছে নত।
সরকার পতনের পর মাদাগাস্কারের পানির সমস্যার তড়িত সুরাহা হয়নি। এখন সন্ধ্যা নামলে আন্দ্রিয়ানাইভো ‘মে ১৩ স্কয়ার’ থেকে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মতোই তাঁর বাড়িতেও পানি নেই।
প্রতিদিন তিনি কমিউনিটি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন, যেটি দিনে কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে। দুটি হলুদ জেরিক্যান কাঁধে নিয়ে তিনি সরু গলির ভেতর দিয়ে দুই কামরার টিনশেড বাড়িতে ফেরেন, যেখানে ঝুলছে একটিমাত্র বাল্ব।
আন্দ্রিয়ানাইভোর ৭৮ বছর বয়সী দাদি তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং নাতির আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান। দাদি বলেন, ‘আমি সামরিক শাসন পছন্দ করি না, আগেও তাদের অধীনে থেকেছি।’ আন্দ্রিয়ানাইভো শুধু কাঁধ ঝাঁকান। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পানি ফিরেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের জন্য। এখনো পানি নেই।
নিরুপায় স্বরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর বিশ্বাস করতেই হবে।’
এ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পানি সরবরাহকারী সংস্থা, এমনকি প্রেসিডেন্সির সঙ্গেও কথা বলেছিলাম।’
কিন্তু ছয় মাস ধরে ঘোরাঘুরির পরেও কোনো সাড়া না পেয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই আন্দোলন দ্রুত হাজারো তরুণের বিক্ষোভে রূপ নেয়। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভের মুখে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পতন ঘটেছে।
উল্কিতে ভরা দুই মুষ্টি তুলে ধরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘ওই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিনগুলোর একটি ছিল। এই জয় আমাদের জনগণের জন্য, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।’
তবে পরে কী হবে—সে বিষয়ে আন্দ্রিয়ানাইভো ও রাজধানীর কেন্দ্রে জমায়েত হাজারো তরুণের এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই, তাঁরা সেটি নিয়ে তেমন চিন্তিতও নন। এতে দেশটির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে রাজোয়েলিনা বলেন, তিনি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ আছেন এবং দেশটির নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতেই আছে। যদিও তখন গুঞ্জন ওঠে, তিনি ফরাসি একটি বিমানে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ নাগরিকের বিশ্বাস, রাজোয়েলিনা দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছেন।
এর ঘণ্টাকয়েক পরেই পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এরপর সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে হামলা চালিয়ে সিনেট, সাংবিধানিক আদালত ও জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। কেবল জাতীয় সংসদকে রেখে অন্য সব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করা হয়।
ক্যাপসাট নামে বিশেষ সেনাদলের প্রধান কর্নেল মাইকেল র্যানড্রিয়ানিরিনা জানান, শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেবেন। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপ একটি সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান। আফ্রিকান ইউনিয়ন এরই মধ্যে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত’ মাদাগাস্কারের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আগেও আফ্রিকান জোটটি মালি, বুরকিনা ফাসো ও গিনির মতো দেশে একই ব্যবস্থা নিয়েছিল।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে মাদাগাস্কার অভ্যুত্থানের ইতিহাসে ভরা। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়। তিনি তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সী এক সাবেক ডিজে। পরে সেনাবাহিনী গঠিত একটি ট্রানজিশনাল কাউন্সিল তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ঘোষণা করে। ২০১৮ সালে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের বর্জিত এক ‘নির্বাচনে’ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
মাদাগাস্কারের ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ আরনো লেওনার্দ বলেন, একটার পর একটা সরকার আসে এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে তারা অরাজকতা দূর করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি প্রেসিডেন্টই ‘উদ্ধারকর্তা’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর প্রতিটি প্রজন্ম রাস্তায় নেমে তাদের তাড়িয়ে দেয়। এবার শুধু একটাই পার্থক্য, আগে স্লোগান ছাপা হতো লিফলেটে আর এখন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ ঠিক একই রকম রয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত তরুণ আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থাশীল। বিক্ষোভে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত সিকার লেব্লাঁ বলেন, ‘আমি বেশ আশাবাদী যে, ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী সবকিছু ঠিক করে ফেলবে। তাদের হাতে দুই বছর সময়। যদি তারা ব্যর্থ হয়, আমরা তাদেরও তাড়াব।’
তবে দ্বীপ দেশটির সামনে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। শীর্ষ ভ্যানিলা রপ্তানিকারক ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এই দেশ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি। মাথাপিছু আয় মাত্র ৫০০ ডলারের মতো এবং প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
নিয়মিত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে মানুষ দিনে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বৈশ্বিক সমৃদ্ধির মানদণ্ডে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয় ১৪ গুণ বাড়াতে হবে।
বিশ্বজুড়ে জেন-জি তরুণদের বিস্ফোরণ
যে জেন-জিদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকারের পতন ঘটেছে, সে বিক্ষোভের ঢেউ এর আগে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও (মরক্কো, বাংলাদেশ, নেপাল, কেনিয়া ও পেরু) দেখা গেছে। তবে দেশগুলোতে এখনো আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
এ তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরকে সহায়তা করছে। অনেকে ‘ওয়ান পিস’ নামের জনপ্রিয় জাপানি অ্যানিমের ‘স্কাল অ্যান্ড বোনস’ লোগো ব্যবহার করে প্রতিবাদের প্রতীক তৈরি করেছে। তবে ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রশ্নে তাঁদের স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই।
মাদাগাস্কারের পাহাড়ি রাজধানী আনতানানারিভোর ‘মে ১৩ স্কয়ার’ দেশটির ১৯৭২ সালের ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতিবাহী স্থান। এখানেই জেন-জিরা কর্নেল র্যানড্রিয়ানিরিনার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ বিয়ার খাচ্ছে, কেউ গ্রিল করা স্ন্যাকস খাচ্ছে আর মঞ্চে ব্যান্ড সংগীত গাইছে—পতিত রাজোয়েলিনাকে নিয়ে অশ্লীল ব্যঙ্গাত্মক গান।
শিল্পকলার ছাত্র হেনরি রাফেহিভোলা বলেন, রাজোয়েলিনার মতো লোকজন সবারই বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে। দেশ খারাপ হলে তাঁরা ফ্রান্সে পালিয়ে যান।
রাজোয়েলিনার সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, তিনি ফ্রান্সের (সাবেক ঔপনিবেশিক) কাছের মানুষ এবং বিদেশি প্রভাবের কাছে নত।
সরকার পতনের পর মাদাগাস্কারের পানির সমস্যার তড়িত সুরাহা হয়নি। এখন সন্ধ্যা নামলে আন্দ্রিয়ানাইভো ‘মে ১৩ স্কয়ার’ থেকে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মতোই তাঁর বাড়িতেও পানি নেই।
প্রতিদিন তিনি কমিউনিটি ট্যাপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন, যেটি দিনে কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকে। দুটি হলুদ জেরিক্যান কাঁধে নিয়ে তিনি সরু গলির ভেতর দিয়ে দুই কামরার টিনশেড বাড়িতে ফেরেন, যেখানে ঝুলছে একটিমাত্র বাল্ব।
আন্দ্রিয়ানাইভোর ৭৮ বছর বয়সী দাদি তাঁকে জড়িয়ে ধরেন এবং নাতির আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান। দাদি বলেন, ‘আমি সামরিক শাসন পছন্দ করি না, আগেও তাদের অধীনে থেকেছি।’ আন্দ্রিয়ানাইভো শুধু কাঁধ ঝাঁকান। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার পানি ফিরেছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের জন্য। এখনো পানি নেই।
নিরুপায় স্বরে আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপর বিশ্বাস করতেই হবে।’
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১৪ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
২১ ঘণ্টা আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
৩ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয়ের ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। বেইজিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনে আয়োজিত বহুল আলোচিত বিজয়-উদ্যাপন মিছিলগুলো যেন বন্ধুত্ব আর ধারাবাহিকতার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু এই জাঁকজমকের আড়ালে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা, যা একসময় বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সেই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন পশ্চাদ্গামী। তার জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন এক প্রভাব ও বৈধতার লড়াই। যেখানে ক্রমেই নিজেদের ‘বৈশ্বিক নেতৃত্বের’ দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে চীন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এক ঐকমত্য, যার মূল ভিত্তি ছিল উদার গণতন্ত্র, বহুপাক্ষিকতা ও উন্মুক্ত বাজারনীতি। কয়েক দশক ধরে এই তথাকথিত ‘প্যাক্স আমেরিকানা’ ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্র দেশগুলোকে দিয়েছে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে এগিয়ে নিয়েছে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকেও। তবে এই ব্যবস্থা কখনোই দ্বন্দ্বমুক্ত ছিল না। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইরাক ও আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও দখলদারত্ব—প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকা তার নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট আরও উন্মোচন করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা।
তবে এই ব্যবস্থার আসল ভাঙন শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। জাতীয়তাবাদের চরম হয়ে ওঠা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা এবং আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি—সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকার প্রচলিত বৈশ্বিক নেতৃত্বের ধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়। তাঁর দৃষ্টিতে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্য নয়, বরং এক বোঝা। কারণ, তাঁর মতে, এটি চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে আমেরিকার ক্ষতির বিনিময়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অস্থির আচরণ কিংবা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে দেওয়া তীব্র ভাষার বক্তৃতা থেকে সরলীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বিপজ্জনক হতে পারে। তবু যখন তিনি এক টুইটে ভারত ও রাশিয়াকে ‘চীনের গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, তখন যেন সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমুখতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। যদিও পরে গাজা সংকট নিয়ে ‘শান্তিচুক্তি’র নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি কিছুটা পিছু হটেছেন বলে মনে হয়।
এই চিন্তাগত বিভাজন গভীর প্রভাব ফেলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেগুলোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। এতে বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণাগুলোর জন্য পথ খুলে যায়। আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ থাকা বেইজিং এই সুযোগে নিজেকে বহুপাক্ষিকতা ও স্থিতিশীলতার রক্ষাকর্তা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা শুরু করে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বারবার বলেছেন, ‘জাতিসংঘের কর্তৃত্ব রক্ষা’ ও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন’ প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণাত্মক নীতির বিপরীতে চীনকে এক দায়িত্বশীল বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে।
আজকের দিনে সির এই বার্তা এক দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি সাড়া ফেলছে। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ভারত ও ব্রাজিলের মতো গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোর প্রতি তাঁর প্রশাসনের মুখোমুখি অবস্থান তাদের ওয়াশিংটন থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং বেইজিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে। চীনে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে সি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি পরোক্ষ সমালোচনা করে ‘আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এবং ‘সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতার’ আহ্বান জানান।
এই পুনর্গঠন কেবল প্রতীকী নয়। চীন এখন ১০০ টিরও বেশি দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার, যাদের অনেকেই এসসিও সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই যুগে, ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি ও বাণিজ্যযুদ্ধে মত্ত আমেরিকার তুলনায় চীনের স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি—বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে—আরও আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠছে। যদিও চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক নীতি অনেকাংশে অস্বচ্ছ ও রাষ্ট্রনির্ভর, তবু তা এখন ওয়াশিংটনের অস্থির নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার তুলনায় কম বিপর্যয়কর বলে মনে হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক। ট্রাম্পের নীতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ারকেই দুর্বল করেনি, বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব হিসেবে দেশটির বিশ্বাসযোগ্যতাকেও ক্ষুণ্ন করেছে। ইউএসএআইডি, পাবলিক ডিপ্লোমেসি তথা জনকূটনীতি বিভাগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাঁদা প্রদান এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার—এসব পদক্ষেপ দেশটির সেই কূটনৈতিক কাঠামোকেই ভেঙে দিয়েছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনে প্রভাব বিস্তার করত। এই আত্মঘাতী পশ্চাদপসরণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাহসী করে তুলেছে এবং মিত্রদের অস্থির করে তুলেছে এই বিষয়ে যে—শূন্যতা চীন পূরণ করতে উদ্গ্রীব।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামো ভেঙে পড়লে তা শুধু স্থিতিশীলতার জন্য নয়, কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্যও বিপজ্জনক হবে। যদিও কিছু বিশ্লেষক সর্বনাশা ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে বিরত থাকছেন, তবু অনেকেই একমত যে ট্রাম্পের নীতিগুলো পৃথিবীকে এক বিভক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক নতুন যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নতুন এই যুগকে আর আগের মতো মতাদর্শভিত্তিক জোটে ভাগ করা যায় না; বরং সেটি বাস্তববাদী সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন বোঝাপড়া—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনিশ্চিত নীতির ঝুঁকি, অন্যদিকে চীনের অংশীদার হওয়ার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করছে। অনেক দেশের কাছে বিষয়টি কর্তৃত্ববাদকে সমর্থন করার নয়, বরং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বহুমেরু বিশ্বে কৌশলগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়।
তবে চীনের উত্থানও চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসী ভূমিকা, মানবাধিকার রেকর্ড, ভারতের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনা, পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ এবং দুর্লভ খনিজ সম্পদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা অনেকের উদ্বেগের কারণ। তবুও বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের আকর্ষণ এসব উদ্বেগকে অনেকাংশে আড়াল করে দিচ্ছে। ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বায়নের কাঠামো ভেঙে দিচ্ছেন, তখন বেইজিংয়ের বয়ান আরও প্রভাবশালী হচ্ছে। সবাই যে সেটি গ্রহণ করছে তা নয়, কিন্তু শূন্যস্থানটি চীনের বয়ানই পূরণ করছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা কখনোই অটল বা অপরিবর্তনীয় ছিল না। এটি ছিল সময়ের দাবি অনুযায়ী তৈরি একটি কাঠামো—স্নায়ুযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উদার গণতন্ত্রের অঙ্গীকারে গড়া। আজ সেই অঙ্গীকারই টলমলে। বিশ্ব এখন আর বিংশ শতাব্দীর মতো দুই মেরুভিত্তিক জামানার উত্তেজনায় ফিরছে না, বরং প্রবেশ করছে আরও পরিবর্তনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একপর্যায়ে। যেখানে ক্ষমতা বিভিন্ন কেন্দ্রে বণ্টিত, অংশীদারত্বগুলো স্বার্থভিত্তিক, আর বৈধতা নিয়ে চলছে টানাটানি।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে দুটি পথ। তারা চাইলে আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের পথে হাঁটতে পারে—যা প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রভাব বৃদ্ধি করবে এবং মিত্রদের দূরে সরিয়ে দেবে। অথবা তারা আবারও বিশ্বমঞ্চে সক্রিয় হতে পারে, আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং বহুমেরু বিশ্বের বাস্তবতার সঙ্গে নিজেদের নেতৃত্বকে মানিয়ে নিতে পারে। পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বড় মূল্য চোকাতে হবে, কিন্তু পিছু হটার খরচ তার চেয়েও বড় হতে পারে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১৪ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়া এখন সার্বভৌম ঋণ তথা সরকারের ঋণ ও রাজস্ব ঘাটতির ভারসাম্য রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থায়ী বাজেট ঘাটতির কারণে এ অঞ্চলের ঋণ বিশ্বের অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে সরকারগুলোর গড় ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে মোট জিডিপির ৭৭ শতাংশে।
২১ ঘণ্টা আগেগাজায় বিধ্বংসী যুদ্ধের দুই বছর পর অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। কিন্তু শান্তির এই মুহূর্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য আশীর্বাদ নয়, বরং নতুন ছয়টি বড় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের সূচনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
৩ দিন আগেএ বছরের শুরুতে মাদাগাস্কারের আনতানানারিভো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পানির কল শুকিয়ে যায়। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী মেডিকেল শিক্ষার্থী আনজান্দ্রাইনা আন্দ্রিয়ানাইভো বলেন, ‘এক ফোঁটাও পানি ছিল না, গোসল করার উপায় নেই, টয়লেট ফ্লাশ করা যাচ্ছিল না, এমনকি হাত ধোয়ার পানিও নেই।
৩ দিন আগে