Ajker Patrika

প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভরতা কমাতে কতটা সক্ষম ইউরোপ

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপের উচিত যত দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউরোপের উচিত যত দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প ও তাঁর দলের বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বড় অংশ বহনে রাজি নয়। এমনকি ইউক্রেনকে কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতেও রাজি নয়। এই অবস্থায় ইউক্রেনকে রক্ষার দায় ইউরোপের কাঁধেই পড়েছে। আর এ জন্য ইউরোপকে তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।

এই বিষয়ে এস্তোনিয়ান একাডেমি অব সিকিউরিটি সায়েন্সেসের ভিজিটিং লেকচারার জানিকা মেরিলো বলেন, ইউরোপের বাস্তবসম্মত কৌশল প্রণয়নের এখনই সময়। যথাযথ বাজেটের মাধ্যমে এই কৌশলকে এগিয়ে নিতে হবে এবং নতুন ও উদ্ভাবনী সমাধানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে, আধুনিক যুদ্ধ হলো—একটি হাইব্রিড যুদ্ধ, যার কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই।’

ইউরোপজুড়ে রুশ সাইবার হামলার প্রভাব মূল্যায়ন করে জানিকা মেরিলো বলেন, ‘রুশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সাইবার হামলাগুলো ইউক্রেনের মিত্রদের ওপর নির্বিচারে আঘাত হানছে, অর্থনৈতিক ক্ষতি করছে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করছে। আমরা প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ করে যাচ্ছি, কিন্তু এই নতুন ধরনের যুদ্ধে আমাদের নিজস্ব সিস্টেম ও রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় যে উদ্ভাবনী সমাধানগুলো প্রয়োজন, সেগুলোর বিকাশ ও প্রসারের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত কর্মপরিকল্পনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। আমরা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হতে পারি না, হওয়া উচিতও নয়।’

জানিকা মেরিলো বলেন, ‘এটি আশাব্যঞ্জক যে, বাল্টিক দেশগুলো পোল্যান্ডের সঙ্গে মিলে ইউরোপের প্রথম প্রতিরক্ষা প্রাচীর গঠন করেছে। তারা বিপদের পরিপূর্ণ মাত্রা উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং কেবল বাজেট ও প্রচলিত যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়ানোর দিকেই নয়, ড্রোন, নজরদারি, গোয়েন্দা কার্যক্রম ও সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উদ্ভাবনকে কীভাবে সমর্থন করা যায়, সে বিষয়েও ভাবতে শুরু করেছে। ইউরোপের প্রচলিত প্রতিরক্ষা শক্তিগুলোকে অবশ্যই এই উদ্যোগ অনুসরণ করতে হবে।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যাটো গঠনের পর পরবর্তী ৭ দশকের বেশি সময় ইউরোপ নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হয়ে ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর নাটকীয়ভাবে ইউরোপের সামষ্টিক নিরাপত্তার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়েছে। তবে ইউরোপের যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্ল্যাটফর্ম গঠনের অভিজ্ঞতা আছে, তাই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া তারা তাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইউকে ইন আ চেঞ্জিং ইউরোপের পরিচালক আনন্দ মেনন বলেন, ‘কথা বলা বা আলোচনা করা খুবই ভালো একটি কৌশল। ইউরোপ সম্ভবত এটিই সবচেয়ে ভালো পারে, বিশেষ করে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে কথার কমতি ছিল না। কিন্তু বাস্তবতায় সবাই অনেকটাই পিছিয়ে।’

মেনন বলেন, ‘যদি সত্যিই ইউরোপ এই নির্বাচনী ফলাফলের জন্য প্রস্তুতি নিত, তাহলে তা ট্রাম্প প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হতো। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা গড়ে তুলতে দীর্ঘ সময় লাগে, তা এক দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। শুধু বেশি খরচ করাই যথেষ্ট নয়। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় কিছুটা বাড়িয়েছে। তবে প্রয়োজন এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা, যাতে পুনরাবৃত্তি এবং বিভক্তি এড়ানো যায়। কিন্তু এটি এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে পড়ে সরকারগুলো নিজেদের স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়, তা যতই প্রতিযোগিতাহীন হোক না কেন।’

এই বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেন, ‘ইউরোপীয়রা বহুবার ঘোষণা দিয়েছে যে, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার তারা আরও উদ্যোগী হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, ট্রাম্প যদি সত্যিই সিদ্ধান্ত নেন যে—ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর মার্কিন সামরিক নির্ভরতার যুগ শেষ হওয়া উচিত, তাহলে এখন এই সদিচ্ছাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

ইউরোপীয়রা যদি কথার সঙ্গে কাজটাও ঠিকমতো করত তবে হয়তো তাদের এখন এসে এই দিন দেখতে হতো না। ইউরোপের দেশগুলো কেন এত দিনেও নিজেদের প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করতে পারেনি সেটার কারণ খুঁজতে গিয়ে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট মঁতেনের সিনিয়র ফেলো এবং আন্তর্জাতিক অধ্যয়নবিষয়ক উপপরিচালক জর্জিনা রাইট বলেন, ‘ইউরোপীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক সাহসের অভাব রয়েছে।’

জর্জিনা আরও বলেন, ‘তারা এখন পর্যন্ত সাহসী ও সম্মিলিত কৌশলগত চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতেও সক্ষম হয়নি। এটি বদলাতে হলে নেতাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং নাগরিকদের কাছে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের সুফল ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে খোলাখুলি বলতে হবে। গণতান্ত্রিক সমর্থন নিশ্চিত করতে হলে, দেশে যারা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর বিরোধিতা করেন, তাদের সঙ্গে বিতর্কে নামতে নেতাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। পোল্যান্ড এবং বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলো ইতিমধ্যে এটি করেছে। এমনকি ডেনমার্ক ও লুক্সেমবার্গের মতো দেশেও ভাষাগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ফ্রান্স ও জার্মানি পিছিয়ে আছে।’

রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর ইউরোপের হাতে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৩ বছর সময় ছিল। কিন্তু তবুও তারা পিছিয়ে আছে। এই বিষয়ে জর্জিনা বলেন, ‘এখানে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া প্রয়োজন: ক্রয় বাড়ানো, চাহিদা মেটাতে ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করা—যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলের নিশ্চয়তা দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা; ইউরোপীয় অস্ত্র কেনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তবে প্রয়োজন হলে বিদেশি অস্ত্র কেনার জন্যও প্রস্তুত থাকা; এবং সম্মিলিত উদ্যোগে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তার বাজেট বা বন্ড ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া।’

তবে কেবল অর্থনৈতিক দিকটা দেখলেই চলছে না। পুরো প্রক্রিয়া ভালোভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ইউরোপ থেকে সরে গেছে। জর্জিনা বলেন, ‘মজার বিষয় হলো, যদি আমরা দেখাতে পারি যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমাদের কার্যকর অবদান রাখার সামর্থ্য আছে, তাহলে ওয়াশিংটন বরং ইউরোপে তাদের নিরাপত্তা ছাতা বজায় রাখার বিষয়ে আরও আগ্রহী হবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ইউরোপ সেগুলো উপেক্ষা করে গেছে। এর ফলে, ইউরোপ আজ এমন এক পরিস্থিতিতে পড়েছে যেখানে রাশিয়ার ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের মাঝে তারা ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা সহায়তার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের ব্যাপক নির্বাচনী জয় ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র যখন কৌশলগত মনোযোগ ও রিসোর্স বা সম্পদ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে, তখন ইউরোপ আর আগের মতো পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার নীতি অনুসরণ করতে পারবে না।

এই বিষয়ে মার্কিন কৌশলগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোনব্রিজ গ্রুপ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক ব্র্যাটবার্গ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াও—যেমন ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির প্রেক্ষাপটে (ইউরোপের তরফ থেকে) ইউক্রেনকে আরও বেশি সহায়তা দেওয়া, প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির অন্তত ৩ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কিংবা ১০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি ইইউ প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনে একমত হওয়া—সম্ভবত কঠিন হয়ে পড়বে।’

তিনি বলেন, যেখানে পোল্যান্ড এবং নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেখানে জার্মানি অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে আছে, ফ্রান্সের আর্থিক সামর্থ্য নেই, আর যুক্তরাজ্য এখনো ইউরোপের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থির করেছেন, কিন্তু ইইউর ভেতরে ঐক্যের অভাব আছে।

ব্র্যাটবার্গের মতে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্রুত একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত, যাতে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, ‘এর লক্ষ্য হওয়া উচিত, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত রাখা। পাশাপাশি, ইইউ-এর প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা ও ইউরোপের প্রধান মিত্রদের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে ন্যাটোর ভেতরে একটি শক্তিশালী ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তোলা।’

তবে ব্র্যাটবার্গসহ বিশ্লেষকেরা যেসব বিষয় বাস্তবায়নের কথা বলছেন, সেগুলো মূলত অর্থের বিষয়। এই বিষয়ে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড ফেলো ওয়ানা লঞ্জেস্কু বলেন, ‘এটি মূলত অর্থের বিষয়। বেশির ভাগ ন্যাটো রাষ্ট্র তাদের জিডিপির অন্তত ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে এক দশক সময় নিয়েছে। কিছু দেশ—যেমন স্পেন, ইতালি ও বেলজিয়াম—এখনো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি, আবার কিছু দেশ—যেমন জার্মানি—এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’

ইউরোপীয় নেতাদের অবশ্যই তাদের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, বর্তমান বিশ্ব কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় গড়ে জিডিপির ৪ শতাংশ ছিল। এখন কেবলমাত্র পোল্যান্ড এই ব্যয় বজায় রেখেছে।

লঞ্জেস্কু বলেন, ‘ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত দ্রুত জিডিপির ৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়া। এটি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানোর জন্য নয় যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করছে, বরং ন্যাটোর নতুন উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ইউরোপ ও ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যও প্রয়োজন। ন্যাটো-ইইউ সহযোগিতার ঘনিষ্ঠতা, যা উভয় সংস্থার নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করেছে, অবশ্যই ইতিবাচক।’

লঞ্জেস্কুর মতে, ইউরোপ একা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ইউরোপীয়দের স্বার্থ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো নয়, বরং ইউরোপ ও আমেরিকাকে একত্রে রাখার জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ করা।

ইউরোপের নিরাপত্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টের দয়া বা চিন্তার ওপর নির্ভর করতে পারে না বলে মনে করেন জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষণা প্রধান নিকোলাই ভন ওন্ডারজা। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তা প্রতি চার বছর পর পর কয়েক হাজার মার্কিন সুইং-স্টেট ভোটারের ওপর নির্ভর করতে পারে না।’

বারবার সতর্ক সংকেত পাওয়ার পরও ইউরোপ শিক্ষা নেয়নি উল্লেখ করে ওন্ডারজা বলেন, ‘নিষ্ক্রিয়তা, আর্থিক চাপ, যৌথ অর্থায়নের প্রতি অনাস্থা, পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত এবং ন্যাটো ও ইইউকে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার প্রবণতার কারণে ইউরোপ এখনো ২০১৬ সালের তুলনায় নিজ নিরাপত্তা রক্ষায় খুব একটা সক্ষম হয়ে ওঠেনি।’

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে ইউরোপীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির সরকার দুর্বল, যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে গেছে, আর পোল্যান্ডসহ নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলেও তারা পশ্চিম ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আরও অবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে।

ওন্ডারজা বলেন, ‘ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপ পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে বিচ্ছিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার হবে। ইউরোপের দেশগুলো এককভাবে ট্রাম্পের আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টা করবে। এই প্রবণতা এড়াতে হলে ইউরোপীয় নেতৃত্বের এক অভূতপূর্ব কৌশলগত ঐক্য দরকার—যেখানে ইইউ-ন্যাটো বিভাজন দূর করা হবে, আর্থিক শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় আনা হবে এবং ইউক্রেন ও সামগ্রিক সামরিক সক্ষমতায় যৌথ বিনিয়োগ করা হবে।’

তবে ইউরোপীয়রা ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে কি না এই বিষয়ে সন্দিহান কার্নেগি এনডাওমেন্ট-ইউরোপের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘না, ইউরোপীয়রা পারবে না, আর তারা চাইবেও না। তারা চাইবে না, কারণ বড় দেশগুলো—জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি—তাদের নিজ নিজ অস্ত্রশিল্প রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দীর্ঘদিন ধরে সম্পদ ভাগাভাগি ও যৌথ ক্রয় নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে অগ্রগতি খুব সামান্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পোল্যান্ডের কথাই ধরুন। তারা দ্রুত প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তুলছে, কিন্তু প্রধানত মার্কিন অস্ত্র কিনেই। যখন তারা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেছিল, তখন ওয়াশিংটন থেকে তীব্র চাপ আসে। এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে প্রতিরক্ষায় আরও দায়িত্ব নিতে বলছে, কিন্তু তারা এটিও বলে দিচ্ছে যে, ইউরোপের এই উদ্যোগ যেন মার্কিন সামরিক শিল্পের ক্ষতি না করে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বহু দেশের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রধান সরবরাহকারী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং ইউরোপের অভিন্ন প্রতিরক্ষা ও ক্রয়নীতি গড়ে তোলার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।

জুডি ডেম্পসি বলেন, ‘কিন্তু ইউরোপীয়রা সেই পথ ধরবে না। সদস্য দেশগুলো এখনো অস্ত্র ব্যবস্থা একীভূত করতে রাজি নয়—যেমন ট্যাংক, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, এমনকি সরবরাহ ব্যবস্থাও বিশৃঙ্খল। আরও গভীরতর সমস্যা হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর হুমকি উপলব্ধির মধ্যে কোনো ঐক্য নেই, এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের পরও। নিরাপত্তা ও কৌশল নিয়ে অভিন্ন চিন্তা না থাকার ফলে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’

ইউরোপ নিজের নিরাপত্তা ব্যয় নির্বাহের জন্য যথেষ্ট ধনী। ভোটাররা সচেতন যে, প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় করা জরুরি। এ ছাড়া, কার্যকর পরিকল্পনাও বিদ্যমান। তবু, এখন পর্যন্ত ইউরোপের প্রচেষ্টা খণ্ডিত ও অপ্রতুল কেন?—এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এডিটোরিয়াল ডিরেক্টর ও সিনিয়র ফেলো জেরেমি ক্লিফ।

তিনি বলেছেন, ‘এর মূল কারণ, নেতৃত্বের অভাব। ইউরোপকে আত্মনির্ভরশীল করতে দরকার—একজন বা একাধিক শক্তিশালী নেতা, কিছু বড় রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি কার্যকর চালিকাশক্তি এবং জনগণকে বোঝানোর জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক বার্তা। বর্তমানে এগুলোর কোনোটিই যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।’

তবে সম্ভাবনা পুরোপুরি নেই—এমনও নয়। মাখোঁ ও শলৎস দুর্বল হলেও উরসুলা ভন ডার লেয়ন ইউরোপীয় কমিশনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট। ফ্রান্স-জার্মান জোট দুর্বল হলেও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন নিয়ে একটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে তোলা সম্ভব।

ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাতজা বেগো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপ থেকে সরে যাওয়ার মাত্রা এখনো অজানা, তবে ইউরোপকে একটি খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মানে হলো, ইউরোপকে ধারণা করতে হবে যে—শিগগিরই তাদের ইউক্রেনকে সমর্থন করার পুরো দায়িত্ব নিতে হবে, নিজেদের প্রতিরক্ষা পরিচালনা করতে হবে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বৈত বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে।’

এই চিত্র খুবই হতাশাজনক এবং আগামী বছরগুলো হবে ইউরোপের জন্য কষ্টকর ও বিপজ্জনক। তবে আশার কিছু কারণও আছে। কঠিন হলেও, ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভিত্তি পুনর্গঠন ও একত্রিত ফ্রন্ট তৈরির দিকে অর্থবহ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, ইউরোপীয় কমিশন নতুনভাবে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমন্বয়মূলক চিন্তাধারা চ্যালেঞ্জ করার জন্য বাড়তি গতি পাচ্ছে।

তবে আরও বেশি কিছু দরকার। প্রতিরক্ষা খাতে ২ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রাথমিক আলাপ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিরক্ষা সংহতকরণের জন্য সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ইউরোপীয় জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের চেয়ে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নদের নির্বাচন করতে হবে এবং মহাদেশের শিল্প ভিত্তিকে যুদ্ধের প্রস্তুতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ‘আমরা হয়তো যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী না, তবে যুদ্ধ আমাদের প্রতি আগ্রহী।’

ইউরোপীয়রা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নিরাপত্তা নির্ভরতা কীভাবে কমাতে পারে সে বিষয়ে ইউরোপীয় থিংক ট্যাংক ডেমোক্রেটিক স্ট্র্যাটেজি ইনিশিয়েটিভের পরিচালক বেঞ্জামিন টালিস বলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী, সক্ষমতার ভিত্তিতে এবং সেই অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ইউরোপীয় স্তম্ভ গড়ে তুলতে পারি, যাতে ন্যাটোকে আবার একটি জোট হিসেবে পুনর্নির্মাণ করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে নয়। আমাদের নিজেদের শক্তি তৈরি করতে হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরতা কমাতে হবে। এটি আমাদের সেই সক্ষমতা দেবে যা আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু এটি সময় নিবে, আর তাই আমাদের একটি স্মার্ট কৌশল প্রয়োজন আমাদের স্বল্পমেয়াদি ত্রুটিগুলি পূর্ণ করতে, নতুন সামরিক প্রযুক্তি, ইইউ তহবিল এবং নতুন প্রতিরক্ষা কমিশনারকে ত্বরান্বিতকারী হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের অবশ্যই সেই মিত্রদের সঙ্গে কঠিন আলোচনা করতে হবে যারা পিছিয়ে আছে—খারাপ সিদ্ধান্ত বা খারাপ বিশ্বাসের কারণে—এবং তাদের বলতেই হবে তারা বা চেষ্টার সঙ্গে এগিয়ে আসুক, না হয় তারা অন্যদের সঙ্গে চলে যাক। খেলা শেষ। বাস্তব নেতৃত্ব এবং কৌশল দরকার যাতে সাহস এবং ইচ্ছাশক্তির অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যায়, এবং তাই আমাদের কৌশলগত নেতাদের অনুসরণ করতে হবে, পুরোনো শৃঙ্খলাবদ্ধ রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

ইউরোপের দেশগুলোকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে বলে মত দেন ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ডিফেন্স ও মিলিটারি অ্যানালাইসিসের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এস্টার সাবাটিনো। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল সম্ভাবনার প্রশ্ন নয়; ইউরোপীয় দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো উচিত।’

সাবাটিনো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের নিরাপত্তা মানে কি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবে এতে সম্ভবত আরও লেনদেনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে। এ জন্য ইউরোপীয়দের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেখাতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তথ্যসূত্র: কার্নেগি এনডাওমেন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /পাকিস্তানকে এফ–১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের প্রযুক্তি দিয়ে ভারতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান আধুনিকীকরণের প্রযুক্তি দিয়ে ভারতের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।

মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাঁধে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো

ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য—পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণেই কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুপক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’

সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) গত ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।

ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক–১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২ +’ মডেলের বিমান রয়েছে।

এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম—যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।

এফ-১৬ এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।

বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে—ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রর তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক-ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।

ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬ এর ভূমিকা কী ছিল

এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নয়টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর পরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।

পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।

পাকিস্তানকে এফ–১৬ এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে

হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রর সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল, ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।

ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’

যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীন-এর পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’

পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা—যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়—নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।

দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে, এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে—পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’

তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত—যদিও কম উদার—মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে

কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও, এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশেরও বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংক ট্যাংক সিআইপিআরআই-এর এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।

দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’


আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।

মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।

যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।

ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।

১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।

‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তামিল নাড়ুর কারুর শহরে একটি ডেটা অ্যানোটেশন সেন্টারে কাজ করছেন কর্মীরা। ছবি: নিক্কেই এশিয়া
তামিল নাড়ুর কারুর শহরে একটি ডেটা অ্যানোটেশন সেন্টারে কাজ করছেন কর্মীরা। ছবি: নিক্কেই এশিয়া

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।

এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।

এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।

এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।

তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।

এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।

এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।

একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।

নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।

নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।

তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।

চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।

তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।

দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।

তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।

চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

ওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।

পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।

সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।

এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।

একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।

ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় বিএনপির প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত