Ajker Patrika

ট্রাম্প বললেন, এবার আমি বিশ্ব চালাচ্ছি, পরিণতি কী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ১৬
নিউ জার্সির মরিসটাউন থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
নিউ জার্সির মরিসটাউন থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারে তাঁর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রথম মেয়াদকে সীমাবদ্ধ করে রাখা ‘কুটিল লোকগুলো’ থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়বার আমি দেশ ও বিশ্ব চালাব।’

ট্রাম্প এখন বিশ্বব্যাপী এক অগণতান্ত্রিক, খেয়ালি নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন; যিনি মস্কো থেকে নয়াদিল্লি, গাজা থেকে রোম পর্যন্ত প্রতিটি বড় ভূরাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে নিজের প্রভাব রাখার চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্পের অস্থির নেতৃত্বে বিশ্ব কোথায় যাবে

ট্রাম্পের উগ্র জাতীয়তাবাদী, একপেশে পররাষ্ট্রনীতির কারণে বন্ধু ও প্রতিপক্ষ—উভয়ই আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মাজদা রুজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা ছাড়া ইউরোপ কখনো ইউক্রেনকে কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারত না। সে কারণে ট্রাম্প যখন বলেন, ‘আমি দুনিয়া চালাই’, তার ভেতরে সত্যি কিছু আছে।’

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, তিনি কি দুনিয়াকে গঠনমূলক পথে চালাচ্ছেন, নাকি বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন?’

সমালোচনা ও ঝুঁকিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি

ট্রাম্প-সমর্থকেরা মনে করেন, অতীতের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ ছিল। আফগানিস্তান ও ইরাকে পরাজয়, আর ইউরোপের ওপর মার্কিন সামরিক খরচ—এসব তাঁদের ক্ষোভের উৎস। ট্রাম্প তাঁদের পক্ষ থেকেই প্রশ্ন তোলেন—চীনের সঙ্গে কয়েক দশকের সম্পর্ক কি কেবল এক নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী সৃষ্টি করেছে?

তবে ট্রাম্প এসব প্রশ্ন যেভাবে তুলছেন এবং তাঁর যে হঠকারী কৌশল, তা গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করে তুলছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

পুরোনো বন্ধুদের বাদ দিয়ে স্বৈরাচারীদের সান্নিধ্যে

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রথাগত মিত্রদের অবমূল্যায়ন করছেন এবং চীন, রাশিয়া কিংবা ইরানের মতো একনায়ক শাসকদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এটি কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে রাজকীয় ভ্রমণের আমন্ত্রণের প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান নিয়ে চতুর্থবারের মতো জিতে গেছেন। এমনকি ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়া কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পোয়েলিয়েভ্রে তাঁর নিজের আসনই হারিয়েছেন।

ট্রাম্পের ‘সোশ্যাল ডারউইনিজম’ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি

জার্মান সাময়িকী Internationale Politik Quarterly-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নীতি ‘মিত্র না শত্রু’ নয়, বরং ‘শক্তিশালী না দুর্বল’ এমন সিদ্ধান্তের ওপর দাঁড়ানো। তিনি কেবল শক্তিকে মূল্য দেন, নীতিকে নয়।

এই দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সাহায্যভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিকে উল্টে দিচ্ছে। তাই তাঁর নীতিতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নৈতিকতা—এসব গুরুত্ব হারিয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক পথে চালাচ্ছেন, যেখানে বিদেশি সাহায্য কমছে, স্বৈরশাসকদের প্রশ্রয় বাড়ছে এবং বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে।

খেয়ালি মনোভাবের বিপজ্জনক প্রভাব

ট্রাম্পের নেতৃত্বে যেসব সিদ্ধান্ত এসেছে, সেসবের মধ্যে অনেকগুলো হঠকারী ও অব্যবস্থাপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। যেমন তিনি একতরফাভাবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি বরাবরই নমনীয় ছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে বিশ্বব্যাপী মানুষের মনোযোগ দখল করেন; কিংবা নিজের মন থেকে শুল্কহার নির্ধারণ করেন, সেটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির সৌজন্যবোধ ও ধৈর্যের পরিপন্থী।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করছে।

‘নেতৃত্ব’ না ‘নাশকতা’

ট্রাম্প এমন অনেক প্রশ্ন তুলেছেন যা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কি আমেরিকান শিল্প ধ্বংস করেছে? ইউরোপ কি নিজের প্রতিরক্ষা নিজে সামলাতে পারে না? কিন্তু এসব প্রশ্নের সমাধান খোঁজার পদ্ধতিটিই বিশৃঙ্খল, অপরিণামদর্শী এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার কারণ হয়ে উঠছে।

জার্মান মার্শাল ফান্ডের বিশিষ্ট ফেলো ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইয়ান লেসার বলেন, ‘ট্রাম্পের আচরণ প্রথাগত মিত্রদের মতামতকে উপেক্ষা করছে। এটা মাঝেমধ্যে ফল আনতে পারে; কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকি।’

ভবিষ্যতের আমেরিকার জন্য অন্ধকার সম্ভাবনা

বিশ্বজুড়ে মিত্ররা এখন আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতার পথে হাঁটছে। এটা যেমন আমেরিকার সামরিক জোটগুলোর শক্তি কমাতে পারে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টদের জন্য বিশ্বনেতৃত্বের দায়িত্বও কঠিন করে তুলতে পারে।

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি ইউক্রেনে পুতিনের ভূমি দখল মেনে নেওয়ার চিন্তা করছেন, গ্রিনল্যান্ড কিনতে চেয়েছেন, এমনকি আফ্রিকায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করেছেন।

এতে আমেরিকার মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মিত্রদের মধ্যে। এশিয়ার দেশগুলো এখন চিন্তা করছে, চীনের সঙ্গে উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্র আর আগের মতো পাশে থাকবে তো?

ইউরোপের দেশগুলো আবার নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে বাড়তি ব্যয় করতে শুরু করেছে। এতে ন্যাটোর মতো জোট দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

জার্মান মার্শাল ফান্ডের বিশিষ্ট ফেলো ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইয়ান লেসার, ‘ট্রাম্পের বিজয় ইতিহাসকে এক ধাক্কা দিয়েছে, যা আগে দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ ছিল, তা এখন তাৎক্ষণিক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।’

ট্রাম্প নিজেকে এখন বিশ্বের শাসক ভাবতে পারেন; কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের পক্ষে দুনিয়া চালানো আরও কঠিন করে তুলছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত