Ajker Patrika

সাউথ-চায়না মর্নিং পোস্টের নিবন্ধ

ভারতের ‘দাদাগিরি’ নেপাল-বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে চীনের দিকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে পুলিশের গাড়িতে নেপালের জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এএফপি
৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে পুলিশের গাড়িতে নেপালের জাতীয় পতাকা হাতে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: এএফপি

সম্প্রতি জেন-জিদের আন্দোলনের কারণে নেপালে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশটির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার সুযোগ পেয়েছে। তবে তারা সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যা ‘বড় ভাই’ বা ‘আঞ্চলিক মোড়ল’ হিসেবে হস্তক্ষেপের ধারণাকে উসকে দেয়। অতীতে ভারতের এমন ‘দাদাগিরি’র কারণেই নেপাল ও বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকেছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক অস্থিরতার জেরে গত সপ্তাহে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। এরপর গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। একই দিনে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী মার্চে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে নেপালের নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘নেপালের ভাই-বোনদের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের এ কূটনৈতিক উদ্যোগ অবশ্যই ‘বড় ভাই’ হিসেবে হস্তক্ষেপমূলক মনে না হওয়ার মতো হতে হবে। কারণ, অতীতে ভারতের এমন আচরণ নেপাল ও বাংলাদেশকে চীনের ঘনিষ্ঠ করেছে।

কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক গবেষণা স্কুলের শিক্ষক ডি বি সুবেদি বলেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি স্থিতিশীল প্রতিবেশী অত্যন্ত জরুরি। দুই দেশের উন্মুক্ত ও অরক্ষিত সীমান্তের কারণে নেপালের যেকোনো অস্থিরতা ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়।

সুবেদি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ‘বড় ভাই’ বা ‘আঞ্চলিক মোড়ল’ (হেজেমন) হিসেবে একটি ধারণা বিদ্যমান। তাই নেপালের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারতকে কূটনৈতিকভাবে সতর্ক হতে হবে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামাবাদ ও ঢাকার সঙ্গে দিল্লির বাড়তে থাকা উত্তেজনার দিকেও ইঙ্গিত করেন।

উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক হামলায় ২৬ জন ভারতীয় নিহত হন। এ ঘটনার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত চলে যাওয়ার পর দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে গত মার্চে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বেইজিং সফরের পর বাংলাদেশ চীনের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। ওই সফরে উভয় দেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কিছু চুক্তি সই করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ চীন থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পায়।

এ ছাড়া গত এপ্রিলে বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, চীন ভারতের পূর্ব সীমান্তের কাছাকাছি লালমনিরহাট জেলায় একটি বিমানঘাঁটি নির্মাণ করতে পারে। এটি ভারতের ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডরের কাছে অবস্থিত।

চায়না অ্যান্ড এশিয়া থিংকট্যাংকের জ্যেষ্ঠ গবেষক ওমকার ভোলে বলেন, নেপালে জেন-জি আন্দোলনের মূল কারণ ব্যাপক দুর্নীতি ও বেকারত্ব। তাঁর মতে, ভারতের উচিত এই দেশগুলোর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করা, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

বেইজিং ইতিমধ্যে কাঠমান্ডুর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছে এবং বলেছে, তারা নেপালের জনগণের স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়া উন্নয়নপথকে সম্মান করে।

ওমকার ভোলে আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা চীনকে ‘তার উপস্থিতি বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে’, যা অবশ্যই ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে বলেন, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের বেইজিংমুখী ঝোঁক ভারতের জন্য, বিশেষ করে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য উদ্বেগের কারণ।

বিশ্লেষকেরা বলেন, ভারত ও চীনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং নেপালের কৌশলগত অবস্থানের কারণে দিল্লির উচিত কাঠমান্ডুর প্রতি তার পররাষ্ট্রনীতি সতর্কতার সঙ্গে সাজানো। ডি বি সুবেদি বলেন, অতীতের শাস্তিমূলক ও প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের পরিবর্তে বর্তমানের সংকট ও অস্থিরতায় ভারতের সবচেয়ে ভালো বিকল্প হবে নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক ও ধারাবাহিক কূটনীতি বজায় রাখা।

২০১৫ সালে নেপালের সংবিধানে মধেশিদের উপেক্ষার অভিযোগ তুলে ভারত চার মাসেরও বেশি সময় অঘোষিত অবরোধ আরোপ করেছিল। এতে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালের অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয় এবং চীনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে কাঠমান্ডু।

বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত গুরুত্বের কারণে ভারতকে সতর্কভাবে কূটনীতি পরিচালনা করতে হবে। শাস্তিমূলক বা প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ না নিয়ে ভারতের উচিত গঠনমূলক ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া।

অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি ভারতীয় থিংকট্যাংকের গবেষক শিবম শিখাওয়াত মনে করেন, ভারতের নীতি হওয়া উচিত উন্নয়ন সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করা। এ ছাড়া দুর্নীতি, বেকারত্ব ও দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করলে তা সাধারণ মানুষের কাছে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।

নেপাল এখন এক বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিক্ষোভকারীদের দাবি মোকাবিলা করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। এমন পরিস্থিতিতে ভারত যদি প্রতিবেশীর মতো আচরণ করে, তবে নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে ‘বড় ভাই’ ভাবমূর্তিকে জিইয়ে রাখলে বা দাদাগিরি করলে উল্টো চীনের প্রভাবই আরও শক্তিশালী হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাসিনার পতনের আগের দিন ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়: নাহিদ

ডিএমপি কমিশনারের বার্তা: ঝটিকা মিছিল হলে ওসি ও পরিদর্শক প্রত্যাহার

কুমিল্লায় ৪ মাজারে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

শেষ ওভারে নবির ছক্কাবৃষ্টি, বাংলাদেশের সমীকরণ কী দাঁড়াল

দিয়াবাড়ির কাশবনে নারীর অর্ধগলিত লাশ, মৃত্যু ১০-১২ দিন আগে: পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত