অনলাইন ডেস্ক
আট বছর বয়সী টিমি মাথা হাতে চেপে ধরে বসে আছে, চেষ্টা করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত দাবাড়ু রোবটকে হারাতে। এই চিত্রটি কোনো এআই গবেষণাগারের নয়, এই রোবটটি টিমির সঙ্গী হয়ে বেইজিংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টেই থাকে। প্রথম যে রাতে রোবটটিকে আনা হয়, সে রাতে টিমি ঘুমানোর আগে রোবটটিকে জড়িয়ে ধরে। সে বলে, ‘এটা যেন এক ছোট্ট শিক্ষক বা বন্ধু।’ যাই হোক খেলার একপর্যায়ে রোবটটি ঘোষণা করে, ‘অভিনন্দন টিমি! তুমি জিতেছ। তোমার দক্ষতা দেখেছি, আমি পরেরবার আরও ভালো করব।’
এই ছোট্ট দাবাড়ু রোবটটি চীনের এই প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের ছোট্ট একটি উদাহরণ। চীন দ্রুত এআই প্রযুক্তিতে এগিয়ে চলেছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তির পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। গত জানুয়ারিতে ডিপসিক নামের এক উন্নত চ্যাটবটের উন্মোচন দেশটির উচ্চাকাঙ্ক্ষারই ইঙ্গিত।
চীনে এআইভিত্তিক ব্যবসা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান এআই নিয়ে কাজ করছে। বেইজিংয়ের স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য এআই কোর্স চালু করা হবে, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এআই শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজ করে চলছে।
চীনের এই অগ্রযাত্রা ২০১৭ সালে দেশটির শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল, এআই হবে চীনের অগ্রগতির চালিকাশক্তি। অর্থনৈতিক মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এআইতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আগামী ১৫ বছরে চীন ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে এআই তহবিল আরও বাড়ানো হয়, যা জানুয়ারিতে ঘোষিত ৬০ বিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের এআই বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা। ওই ঘোষণার কয়েক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে। তবে ‘ডিপসিক’ দেখিয়েছে যে, চীন এসব বাধা অতিক্রমের সক্ষমতা অর্জন করেছে। বিষয়টি বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি জগতের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত সিলিকন ভ্যালিকে বিস্মিত করেছে।
দাবাড়ু রোবটটির বিক্রেতা টমি টাং বলেন, ‘অভিভাবকেরা দাম জানতে চান, এরপর জানতে চান আমি কোথা থেকে এসেছি। তারা ধরে নেন—আমি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে এসেছি। যখন আমি বলি যে, আমি চীনের। তখন এক-দুই সেকেন্ডের জন্য নীরবতা নেমে আসে।’ তাঁর কোম্পানি সেন্সরোবট এরই মধ্যে ১ লাখের বেশি রোবট বিক্রি করেছে এবং বৈশ্বিক পণ্য বিক্রেতা চেইনশপ ‘কস্টকো’র সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। যাতে বিশ্বজুড়ে এই রোবট বিক্রি করা যায়।
চীনের এআই সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি তরুণেরা। ২০২০ সালে দেশটি থেকে ৩৫ লাখ স্টেম সাবজেক্ট তথা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ের স্নাতক বের হয়েছে। যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। সি চিন পিং শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রতিভার বিকাশে শক্তি অর্জন করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।’
১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে চীন অর্থনীতি উন্মুক্ত করার পর থেকে প্রযুক্তি ও প্রতিভা সংগ্রহ করেছে। হোয়েলসবট নামের একটি এআই খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাবট লিউ বলেন, ‘এআই যুগে আমাদের প্রচুর প্রকৌশলী আছে, আর তাঁরা কঠোর পরিশ্রমী।’
অ্যাবটের পেছনেই সাত বছরের এক শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে একটি খেলনা ডাইনোসরে কোডিং করার চেষ্টা করছিল। কোম্পানিটি তিন বছর বয়সী শিশুদের জন্যও কোডিং শেখানোর খেলনা তৈরি করে, যার সর্বনিম্ন দাম ৪০ ডলার। লিউ বলেন, ‘অন্যান্য দেশেও এআই শিক্ষামূলক রোবট আছে, তবে প্রতিযোগিতার দিক থেকে আর স্মার্ট হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে।’
ডিপসিক—এর সাফল্য কোম্পানিটির সিইও লিয়াং ওয়েনফেংকে জাতীয় নায়কে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করেছে যে, এআই শুধু একটি ধারণা নয়, এটি আক্ষরিক অর্থেই মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। এটি জনগণের কৌতূহল জাগিয়েছে।’
চীনের ছয়টি দেশীয় এআই প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেটে ‘চীনের ৬ ছোট ড্রাগন’ নামে ডাকা হচ্ছে। এগুলো হলো—ডিপসিক, ইউনি-ট্রি রোবোটিকস, ডিপ রোবোটিকস, ব্রেইনকো, গেম সায়েন্স ও মেনিকোর টেক। সাংহাইয়ের একটি এআই প্রদর্শনীতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করে। যার মধ্যে ছিল উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত রোবট আর ব্যাকফ্লিপ বা ডিগবাজি দিতে সক্ষম কুকুরের মতো রোবট অন্যতম।
২৬ বছর বয়সী প্রকৌশলী ইউ জিংজি বলেন, ‘ডিপসিক প্রমাণ করেছে যে, আমরা এখনো এগিয়ে আছি।’ তবে এআই-এর তথ্য ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। চীনের প্রায় ১০০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর কারণে দেশটির তথ্যভান্ডার বিশাল। পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বিগ্ন যে, ‘ডিপসিক’ আর টিকটকের মতো চীনা অ্যাপগুলো কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ব্যবহারকারীদের তথ্য শেয়ার করতে পারে। কারণ, চীনের জাতীয় গোয়েন্দা আইন কোম্পানিগুলোকে সরকারের অনুরোধে সহায়তা করতে বলে।
তবে টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স দাবি করেছে, আইনটি বেসরকারি কোম্পানিগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। তবুও যুক্তরাষ্ট্র টিকটক নিষিদ্ধ করেছে, আর দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া ‘ডিপসিক’-এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
গোপনীয়তা নিয়ে সচেতনতা প্রসঙ্গে টমি টাং বলেন, ‘গোপনীয়তা আমাদের কোম্পানির জন্য একটি বিপৎসীমা।’ বেইজিংও এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বেইজিং ডেইলি লিখেছে, ‘ডিপসিকের দ্রুত উত্থান পশ্চিমাদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’ সংবাদমাধ্যমটি সতর্ক করেছে যে, ‘চীনের এআই মডেলের জন্য উন্নয়ন পরিবেশ এখনো অনিশ্চিত।’
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বাস করে, কম খরচে উদ্ভাবন তাদের সাফল্য নিশ্চিত করবে। ডিপসিক—এর দাবি, এটি চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে, তাও অনেক কম খরচে। ডিপসিক এআই শিল্পকে হতবাক করেছে। টমি টাং বলেন, এটি আমাদের জন্য ‘মিশন ইম্পসিবল’ ছিল।
টমি টাং—এর কোম্পানি দেখেছিল যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত দাবাড়ু রোবটের রোবটিক আর্ম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই বিষয়টির কারণে দাম ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারত। কিন্তু এআই ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে মাত্র ১ হাজার ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটিই উদ্ভাবন। কৃত্রিম প্রকৌশল এখন উৎপাদন প্রক্রিয়ার অংশ।’
চীনের এআই-ভিত্তিক দক্ষতা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে দেশটির উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এমন কারখানা দেখানো হয়, যেখানে মানবাকৃতির রোবট কাজ করছে। জানুয়ারিতে সরকার ঘোষণা দেয়, দেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এআই রোবট তৈরি করা হবে। সি চিন পিং ‘প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার’ ওপর জোর দিচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও উন্নত চিপ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছেন।
চীনের এআই শিল্প এখনো উদীয়মান। তবে বেইজিং ডেইলি এখনই ‘এআই বিজয়োল্লাস’-এর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট সি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস আর উন্নত প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদি বাজি ধরেছেন, চীনকে এমন এক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করছেন। তিনি আশা করেন, শেষ পর্যন্ত এই দৌড়ে চীনই জিতবে।
বিবিসি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
আট বছর বয়সী টিমি মাথা হাতে চেপে ধরে বসে আছে, চেষ্টা করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত দাবাড়ু রোবটকে হারাতে। এই চিত্রটি কোনো এআই গবেষণাগারের নয়, এই রোবটটি টিমির সঙ্গী হয়ে বেইজিংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টেই থাকে। প্রথম যে রাতে রোবটটিকে আনা হয়, সে রাতে টিমি ঘুমানোর আগে রোবটটিকে জড়িয়ে ধরে। সে বলে, ‘এটা যেন এক ছোট্ট শিক্ষক বা বন্ধু।’ যাই হোক খেলার একপর্যায়ে রোবটটি ঘোষণা করে, ‘অভিনন্দন টিমি! তুমি জিতেছ। তোমার দক্ষতা দেখেছি, আমি পরেরবার আরও ভালো করব।’
এই ছোট্ট দাবাড়ু রোবটটি চীনের এই প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের ছোট্ট একটি উদাহরণ। চীন দ্রুত এআই প্রযুক্তিতে এগিয়ে চলেছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তির পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। গত জানুয়ারিতে ডিপসিক নামের এক উন্নত চ্যাটবটের উন্মোচন দেশটির উচ্চাকাঙ্ক্ষারই ইঙ্গিত।
চীনে এআইভিত্তিক ব্যবসা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান এআই নিয়ে কাজ করছে। বেইজিংয়ের স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য এআই কোর্স চালু করা হবে, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এআই শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজ করে চলছে।
চীনের এই অগ্রযাত্রা ২০১৭ সালে দেশটির শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টির ঘোষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই ঘোষণায় বলা হয়েছিল, এআই হবে চীনের অগ্রগতির চালিকাশক্তি। অর্থনৈতিক মন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এআইতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আগামী ১৫ বছরে চীন ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে এআই তহবিল আরও বাড়ানো হয়, যা জানুয়ারিতে ঘোষিত ৬০ বিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের এআই বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা। ওই ঘোষণার কয়েক দিন পরই যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে। তবে ‘ডিপসিক’ দেখিয়েছে যে, চীন এসব বাধা অতিক্রমের সক্ষমতা অর্জন করেছে। বিষয়টি বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি জগতের প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত সিলিকন ভ্যালিকে বিস্মিত করেছে।
দাবাড়ু রোবটটির বিক্রেতা টমি টাং বলেন, ‘অভিভাবকেরা দাম জানতে চান, এরপর জানতে চান আমি কোথা থেকে এসেছি। তারা ধরে নেন—আমি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে এসেছি। যখন আমি বলি যে, আমি চীনের। তখন এক-দুই সেকেন্ডের জন্য নীরবতা নেমে আসে।’ তাঁর কোম্পানি সেন্সরোবট এরই মধ্যে ১ লাখের বেশি রোবট বিক্রি করেছে এবং বৈশ্বিক পণ্য বিক্রেতা চেইনশপ ‘কস্টকো’র সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। যাতে বিশ্বজুড়ে এই রোবট বিক্রি করা যায়।
চীনের এআই সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি তরুণেরা। ২০২০ সালে দেশটি থেকে ৩৫ লাখ স্টেম সাবজেক্ট তথা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ের স্নাতক বের হয়েছে। যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। সি চিন পিং শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রতিভার বিকাশে শক্তি অর্জন করা আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।’
১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে চীন অর্থনীতি উন্মুক্ত করার পর থেকে প্রযুক্তি ও প্রতিভা সংগ্রহ করেছে। হোয়েলসবট নামের একটি এআই খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাবট লিউ বলেন, ‘এআই যুগে আমাদের প্রচুর প্রকৌশলী আছে, আর তাঁরা কঠোর পরিশ্রমী।’
অ্যাবটের পেছনেই সাত বছরের এক শিশু স্মার্টফোন ব্যবহার করে একটি খেলনা ডাইনোসরে কোডিং করার চেষ্টা করছিল। কোম্পানিটি তিন বছর বয়সী শিশুদের জন্যও কোডিং শেখানোর খেলনা তৈরি করে, যার সর্বনিম্ন দাম ৪০ ডলার। লিউ বলেন, ‘অন্যান্য দেশেও এআই শিক্ষামূলক রোবট আছে, তবে প্রতিযোগিতার দিক থেকে আর স্মার্ট হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে।’
ডিপসিক—এর সাফল্য কোম্পানিটির সিইও লিয়াং ওয়েনফেংকে জাতীয় নায়কে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করেছে যে, এআই শুধু একটি ধারণা নয়, এটি আক্ষরিক অর্থেই মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। এটি জনগণের কৌতূহল জাগিয়েছে।’
চীনের ছয়টি দেশীয় এআই প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেটে ‘চীনের ৬ ছোট ড্রাগন’ নামে ডাকা হচ্ছে। এগুলো হলো—ডিপসিক, ইউনি-ট্রি রোবোটিকস, ডিপ রোবোটিকস, ব্রেইনকো, গেম সায়েন্স ও মেনিকোর টেক। সাংহাইয়ের একটি এআই প্রদর্শনীতে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করে। যার মধ্যে ছিল উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত রোবট আর ব্যাকফ্লিপ বা ডিগবাজি দিতে সক্ষম কুকুরের মতো রোবট অন্যতম।
২৬ বছর বয়সী প্রকৌশলী ইউ জিংজি বলেন, ‘ডিপসিক প্রমাণ করেছে যে, আমরা এখনো এগিয়ে আছি।’ তবে এআই-এর তথ্য ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। চীনের প্রায় ১০০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীর কারণে দেশটির তথ্যভান্ডার বিশাল। পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বিগ্ন যে, ‘ডিপসিক’ আর টিকটকের মতো চীনা অ্যাপগুলো কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ব্যবহারকারীদের তথ্য শেয়ার করতে পারে। কারণ, চীনের জাতীয় গোয়েন্দা আইন কোম্পানিগুলোকে সরকারের অনুরোধে সহায়তা করতে বলে।
তবে টিকটকের মালিক বাইটড্যান্স দাবি করেছে, আইনটি বেসরকারি কোম্পানিগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করে। তবুও যুক্তরাষ্ট্র টিকটক নিষিদ্ধ করেছে, আর দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া ‘ডিপসিক’-এর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
গোপনীয়তা নিয়ে সচেতনতা প্রসঙ্গে টমি টাং বলেন, ‘গোপনীয়তা আমাদের কোম্পানির জন্য একটি বিপৎসীমা।’ বেইজিংও এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বেইজিং ডেইলি লিখেছে, ‘ডিপসিকের দ্রুত উত্থান পশ্চিমাদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’ সংবাদমাধ্যমটি সতর্ক করেছে যে, ‘চীনের এআই মডেলের জন্য উন্নয়ন পরিবেশ এখনো অনিশ্চিত।’
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বাস করে, কম খরচে উদ্ভাবন তাদের সাফল্য নিশ্চিত করবে। ডিপসিক—এর দাবি, এটি চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে, তাও অনেক কম খরচে। ডিপসিক এআই শিল্পকে হতবাক করেছে। টমি টাং বলেন, এটি আমাদের জন্য ‘মিশন ইম্পসিবল’ ছিল।
টমি টাং—এর কোম্পানি দেখেছিল যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত দাবাড়ু রোবটের রোবটিক আর্ম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই বিষয়টির কারণে দাম ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারত। কিন্তু এআই ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমিয়ে মাত্র ১ হাজার ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটিই উদ্ভাবন। কৃত্রিম প্রকৌশল এখন উৎপাদন প্রক্রিয়ার অংশ।’
চীনের এআই-ভিত্তিক দক্ষতা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে দেশটির উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এমন কারখানা দেখানো হয়, যেখানে মানবাকৃতির রোবট কাজ করছে। জানুয়ারিতে সরকার ঘোষণা দেয়, দেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এআই রোবট তৈরি করা হবে। সি চিন পিং ‘প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার’ ওপর জোর দিচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও উন্নত চিপ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছেন।
চীনের এআই শিল্প এখনো উদীয়মান। তবে বেইজিং ডেইলি এখনই ‘এআই বিজয়োল্লাস’-এর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট সি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস আর উন্নত প্রযুক্তিতে দীর্ঘমেয়াদি বাজি ধরেছেন, চীনকে এমন এক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করছেন। তিনি আশা করেন, শেষ পর্যন্ত এই দৌড়ে চীনই জিতবে।
বিবিসি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত
ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
৬ ঘণ্টা আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১৩ ঘণ্টা আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
২ দিন আগেসংবাদ বা তথ্যের সংলাপমূলক উপস্থাপন চর্চার উত্থানের পাশাপাশি, পাঠকেরা এখন চ্যাটবটকে ফলোআপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, চাহিদামতো সারসংক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেন, এমনকি বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যাও এআই–এর কাছে চাওয়া হয়। ফলে পাঠকেরা সংবাদ পাঠে চিরাচরিত নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে
৩ দিন আগে