Ajker Patrika

সিউল–ওয়াশিংটনের পরমাণু চুক্তিতে কি ডরাবেন কিম জং উন

সিউল–ওয়াশিংটনের পরমাণু চুক্তিতে কি ডরাবেন কিম জং উন

উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া। নতুন চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় পর্যায়ক্রমে পারমাণবিক অস্ত্রসহ সাবমেরিন মোতায়েন করবে যুক্তরাষ্ট্রে। পাশাপাশি সিউলকে পরমাণু পরিকল্পনা কার্যক্রমে যুক্ত করতেও সম্মত হয়েছে ওয়াশিংটন। 

নতুন চুক্তির ফলে দক্ষিণ কোরিয়াকে লক্ষ্য করে কদিন পরপরই যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া সেটি কমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার পদক্ষেপের ফলে উত্তর কোরিয়া যদি হামলা জোরদার করে সে ক্ষেত্রে এটি পরমাণু যুদ্ধকে উসকে দিতে পারে। 

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮১ সালের পর এবারই প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এমন চুক্তি করল যুক্তরাষ্ট্র। ‘দ্য ওয়াশিংটন ডিক্লারেশন’ চুক্তির ফলে প্রতিবেশী সিউলে হামলার আগে এখন পিয়ংইয়ংকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউল বুধবার (২৬ এপ্রিল) এই যুগান্তকারী চুক্তিতে সম্মত হন। জো বাইডেন বলেছেন, ‘দ্য ওয়াশিংটন ডিক্লারেশন’ চুক্তিটি উত্তর কোরিয়ার হুমকি ঠেকাতে মিত্রদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াবে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউলের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউল বলেন, ‘দ্য ওয়াশিংটন ডিক্লারেশন’ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মিত্রদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণ, হামলা প্রতিহত এবং সুরক্ষা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অভূতপূর্ব’ প্রতিশ্রুতি। 

যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়া পরমাণু চুক্তির বিশাল গুরুত্ব রয়েছে বলে সিএনএনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ১৪টি ওহাইও ক্লাস পারমাণবিক শক্তিচালিত ‘ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন’ রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে এবং ৬টি জর্জিয়াতে মোতায়েন করা আছে। 

৫৬০ ফুটের এই সাবমেরিনগুলোকে বলে ‘বুমার’। সাগরে ডুব দেওয়ার সময় এগুলো ১৮ হাজার টনের বেশি পানি অপসারিত করে। শক্তি জোগায় একটি করে পারমাণবিক চুল্লি (নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর)। 

নেভির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যে এগুলো গড়ে টানা ৭৭ দিন সমুদ্রে অবস্থান করতে পারে। এরপর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্দরে কাটায় ৩৫ দিন। ১৫৫ জন ক্রু এতে অনায়াসে অবস্থান করতে পারেন।

ওহাইও ক্লাস সাবমেরিনগুলোতে থাকে সর্বোচ্চ ২০টি করে ট্রাইডেন্ট টু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ওয়্যারহেডে পরমাণু অস্ত্র থাকে এবং এগুলো সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য। এক একটির পাল্লা ৪ হাজার ৬০০ মাইল। অর্থাৎ এটি গভীর প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর অথবা উত্তর মহাসাগর থেকেও উত্তর কোরিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক ব্লেক হার্জিংগার বলেন, হামলা চালাতে হলে যে সাবমেরিনকে উত্তর কোরিয়ার আশপাশেই অবস্থান করতে হবে বিষয়টি এমন নয়। 

সেন্টার ফর নন-প্রলিফারেশন স্টাডিজে পরমাণু হুমকি নিয়ে কাজ করা জেমস মার্টিন বলেন, একেকটি ট্রাইডেন্ট মিসাইল চারটি পারমাণবিক ওয়্যারহেড বহন করতে পারে। অর্থাৎ ২০টি ট্রাইডেন্ট মিসাইলে ৮০টি পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে। 

সুতরাং বলা যায়, মাত্র একটি ট্রাইডেন্ট মিসাইলই উত্তর কোরিয়াকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। 

তবে দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির পর উত্তর কোরিয়া পিছু হটবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। দক্ষিণ কোরিয়া লক্ষ্য করে হামলার মাত্রা আগের চেয়ে আরও বাড়তেও পারে। দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তির পরপরই উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নিয়ে চুক্তির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। চীন বলেছে, সংঘাত উসকে দিচ্ছে ওয়াশিংটন-সিউল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত