আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
অনলাইন ডেস্ক
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই ঘোষণার মধ্যে ইসরায়েলের কোনো উল্লেখ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রক্রিয়াটি ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের আঞ্চলিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস এ বিষয়ে আল-জাজিরাকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণের পূর্বশর্ত ছাড়াই সৌদি আরবের সঙ্গে মূল চুক্তিগুলোতে এগিয়ে নিতে ইচ্ছুক। এটি সম্ভবত গাজাসহ পুরো অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রতিফলন।’
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ফেলো ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইসরায়েলের আলোচনায় অস্বীকৃতির কারণে ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে, বাইডেন বারবার জোর দিলেও সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির ‘সঠিক সময়’ এটি নয়।
আল-জাজিরাকে কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘আমি মনে করি হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, এই মুহূর্তে স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আব্রাহাম চুক্তি স্থাপনে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়েই স্বতন্ত্রভাবে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছিল।
তবে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই চুক্তিগুলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করেছিল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ করছিল। ইসরায়েলের এই আচরণ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে আরও ম্লান করে দিয়েছিল।
চুক্তির আপাত দুর্বলতা সত্ত্বেও, বাইডেন সৌদি আরবকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করাকে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রধান লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চলাকালীনও তাঁরা একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। বাইডেন বারবার দাবি করেছেন, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি বানচাল করার জন্য হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। যদিও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁরা হাজির করেননি।
তবে, ক্ষমতা ছাড়ার একদিন আগে, বাইডেন দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি সৌদি আরবসহ সমস্ত আরব প্রতিবেশীর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এবং সংহতির ভবিষ্যতের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন কর্মকর্তা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাইডেনের চুক্তিটি বাস্তবায়িত হয়নি। এই চুক্তিতে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি এবং ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণের বিনিময়ে সৌদি আরবের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে মার্কিন সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। এই প্রচেষ্টার একটি প্রধান বাধা ছিল ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন। এই উদ্যোগে একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে ইসরায়েলের স্বীকৃতি দাবি করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ কাঠামোটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের জ্যাকবস বলেন, ‘এই ইসরায়েলি সরকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাকে মৌখিক সমর্থনও দেবে না, যা সৌদি আরবের পক্ষে স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা অসম্ভব করে তোলে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত বুঝতে পেরেছে যে, এটি অন্তত আপাতত আলোচনার বাইরে রাখতে হবে।’
মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার জন্য একটি চুক্তি ঘোষণা করেছেন। ১৪২ বিলিয়ন ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সংস্থাগুলো থেকে সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হবে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এতে সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা, যার মধ্যে সৌদি পরিষেবা একাডেমি এবং সামরিক চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ চুক্তিগুলো ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়। তেমনটি হলে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে গণ্য করা যেত।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘ঘোষণাগুলো সৌদি ও মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে।’
ট্রাম্পের এই মধ্যপ্রাচ্য সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ইসরায়েল গাজায় বিধ্বংসী হামলা চালিয়ে যাওয়ার এবং সম্প্রসারণের জোরালো ঘোষণা দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫২ হাজার ৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার খালেদ এলগিন্দি বলেন, রিয়াদ গাজার ইসরায়েলি নৃশংসতাকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এলগিন্দি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সৌদিরা তাদের মনোভাব গোপন করছে না; তারা পিছপা হচ্ছে না। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জেনোসাইডের অভিযোগ করার পর তারা এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দিকে যেতে পারে না। এটি হাস্যকর হবে।’
সৌদি আরব সফরের পর, ট্রাম্প তাঁর প্রথম পরিকল্পিত বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন। গত মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরায়েল তাঁর সফর তালিকায় নেই।
কোটস উলরিশসেন এবং অন্যদের মতে, ইসরায়েলকে ট্রাম্পের আপাত উপেক্ষা মার্কিন-ইসরায়েল মৈত্রীতে অস্বস্তির প্রতিফলন।
কোটস উলরিশসেন আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এটি একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, হোয়াইট হাউস এই মুহূর্তে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। কারণ ইসরায়েল এখন সংঘাতে লিপ্ত।’
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহু সরকারের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তেহরানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও, ট্রাম্প নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা দিয়েছেন। এই চুক্তিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইয়েমেনি গোষ্ঠীটির হামলার সমাপ্তির কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রিয়াদে ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হুতিরা ইসরায়েলে আবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দেওয়াই তাদের এই হামলার লক্ষ্য।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিক এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসন কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে কাজ করেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলকে সেই আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলগিন্দি বলেন, ট্রাম্প কথা ও কাজের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে, মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থ এক ও অভিন্ন নয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাইডেন এটি করেননি।
আপাতত, গাজায় বোমাবর্ষণ এবং ত্রাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প ইসরায়েলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর দমন-পীড়নও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবুও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে গিয়ে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে অগ্রাধিকার না দিয়ে, ট্রাম্প এই অঞ্চলের জন্য তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার, ট্রাম্প উপসাগরীয় নেতাদের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই নেতারা এমন একটি মধ্যপ্রাচ্য তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে নগর তৈরি করছে, একে অপরকে বোমা মেরে ধ্বংস করছে না।
এই অঞ্চলে ইসরায়েল যা চাচ্ছে, ট্রাম্পের এই অবস্থান তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই মনে হচ্ছে। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় ইসরায়েল।
কোটস উলরিশসেন বলেন, ‘একটি খুব শক্তিশালী বার্তা। একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য—ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে যা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে—ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে অনেক বেশি কাঙ্ক্ষিত।’
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল ২০২৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মোদির সরকার বর্তমানে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। দিল্লিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব গ্রহণ করতে দিল্লি নারাজ হবে।
১ দিন আগেভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাত প্রায়ই দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে যায়। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলেই উভয় দেশের জনগণ তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। এমনকি কিছু সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার রীতিমতো উসকানিমূলক প্রচার প্রচারণা চালায়।
১ দিন আগেবিজেপির আদর্শগত অবস্থান শুরু থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালে জয়ের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি ২০১৪-এর পর হারিয়ে গেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি সবচেয়ে বড় মিথ্যা। ২০২৩ সালে সংসদে সংবিধানের যে কপি
২ দিন আগেইয়েমেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অপ্রত্যাশিত শান্তি চুক্তি’ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সাত সপ্তাহ ধরে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হাজারের বেশি বোমা বর্ষণের পর, হঠাৎ করেই সেই অভিযান বন্ধ করে দিয়েছেন ট্রাম্প...
২ দিন আগে