Ajker Patrika

দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ /হুতিদের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘শান্তিচুক্তি’, ইসরায়েল কি একা হয়ে পড়ছে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১১: ২৬
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

ইয়েমেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘অপ্রত্যাশিত শান্তি চুক্তি’ আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সাত সপ্তাহ ধরে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হাজারের বেশি বোমা বর্ষণের পর, হঠাৎ করেই সেই অভিযান বন্ধ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। গত ৬ মে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, হুতিদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর কারণেই এই বোমা বর্ষণ বন্ধ করা হয়েছে।

ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি, যিনি এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন, তিনি এক টুইটে জানান, লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতার বিনিময়ে হুতিরা জাহাজে আক্রমণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে।

ট্রাম্পের এই নীতি পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথমত, এই সামরিক অভিযানের খরচ ছিল প্রায় ১০০ ডলার, যা আমেরিকার জন্য একটি বড় বোঝা। দ্বিতীয়ত, এই আক্রমণগুলো হুতিদের দমাতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয়ত, প্রেসিডেন্ট যখন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সফর করছেন, তখন এই সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

এদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ হুতিদের ‘সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ইরানকে ‘মূল্য দিতে হবে’ বলে সতর্ক করার পর ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছিল। ৪ মে, হুতিদের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে তেল আবিবের প্রধান বিমানবন্দরের উপকণ্ঠে আঘাত হানে। এর জবাবে ইসরায়েল ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দর, রাজধানী সানার বিমানবন্দর, তিনটি বেসামরিক বিমান এবং দুটি বড় সিমেন্ট কারখানা ধ্বংস করে দেয়। এতে আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিপরীতে ইরান ও তার মিত্রদের পুরোনো মধ্যপ্রাচ্য ফিরে আসার আশঙ্কা দেখা দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাম্প হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই আপাত শান্তির প্রধান সুবিধাভোগী হলো ইরান। হুতি সমস্যা সমাধান করে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছেন। ইরান কয়েক দিনের মধ্যে চতুর্থ দফা আলোচনা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। একটি খসড়া চুক্তি এরই মধ্যে প্রচারিত হয়েছে, যেখানে ইরান এবং আমেরিকা ৪৫ বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে পারে।

যদি এটি বাস্তবায়িত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কারিগরি দলগুলো এমন একটি চুক্তি চূড়ান্ত করবে, যা ইরানকে স্থায়ীভাবে নিম্ন স্তরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেবে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) উপসাগরীয় দেশগুলো সফর শুরু করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘খুব বড় ঘোষণা’ আসছে। ইরান এবং আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা একজন পর্যবেক্ষক বলেন, ‘বিষয়গুলো খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’

হুতিরাও তাদের বিজয় উদ্‌যাপন করছে। ট্রাম্প বলেছিলেন তারা আত্মসমর্পণ করেছে, কিন্তু বিদ্রোহীরা জোর দিয়ে বলছে, আমেরিকা পিছু হটেছে। আমেরিকার হামলা হুতিদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুতের ক্ষতি করেছে, কিন্তু পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারেনি। তারা এখনো ইয়েমেনে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি। ইরান-সমর্থিত হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতারা যখন দুর্বল, তখন আব্দুল-মালিক আল-হুতি এখনো টিকে আছেন। ইয়েমেনের বিশ্লেষক আব্দুল-গণি আল-ইরিয়ানি বলেন, ‘আমরা আশা করিনি যে ট্রাম্প হুতিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের বিজয় উপহার দেবেন।’

অন্যদিকে, এই চুক্তির ফলে ২ কোটি ৫০ লাখ ইয়েমেনিকে হুতিদের নিয়ন্ত্রণে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে এক দশক ধরে বিমান হামলায় দেশটির অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। হুতিরা প্রচুর কর আদায় করে, কিন্তু পরিষেবা প্রদানে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। তারা তাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করা, নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করার দিকেই বেশি মনোযোগ দেয়।

হুতিদের ইয়েমেনি প্রতিদ্বন্দ্বীরাও ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে হতাশ। অনেকে আশা করেছিলেন, আমেরিকার চাপে হুতিরা অবশেষে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তিতে রাজি হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে রাজধানী সানায় ফিরে আসতে দেবে। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, আমেরিকা স্থল অভিযান আবার শুরু করবে। এখন তারা আশঙ্কা করছেন, এতে হুতিরাই এগিয়ে যেতে পারে। ইয়েমেনের অন্য কোনো বাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। ২০১৫ সালে সানা দখলের পর থেকে তাদের বাহিনী ১২ গুণ বেড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে। ইয়েমেনে বিরোধীদের বিপরীতে, তারা অনেক সুশৃঙ্খল এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। ইয়েমেনের পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, মা’রিব এবং শাবওয়ার তেলক্ষেত্রে হুতিদের হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ না নিয়ে তারা থামবে না।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ট্রাম্প সম্ভবত ইসরায়েলকেও পরিত্যাগ করেছেন। হুতিরা যখন ইসরায়েলে নতুন করে হামলা শুরু করে, তখন তিনি ইয়েমেনে অভিযান শুরু করেছিলেন। কিন্তু এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুতিদের হামলা ঠেকাতে কোনো কাজে আসবে না। হুতিরা বারবার বলে আসছে, ইসরায়েল গাজায় অবরোধ বহাল রাখা পর্যন্ত তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

এই অবস্থান সম্ভবত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ট্রাম্পের হতাশারই ইঙ্গিত দেয়। অথবা ইরানের সঙ্গে চুক্তি করার দৃঢ় সংকল্পের বহিঃপ্রকাশও হতে পারে। সে যাই হোক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসরায়েলকে এই চুক্তির বাইরে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

বাহাত্তরের সংবিধান, জুলাই সনদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে আইন উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত