Ajker Patrika

অক্সিজেনের সংকটে পড়লে যেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে যেতে পারে

আপডেট : ২৬ জুন ২০২১, ১৫: ৫৯
অক্সিজেনের সংকটে পড়লে যেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধসে যেতে পারে

ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অক্সিজেনের সংকটে পুরোপুরি ধসের হুমকিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এমনটি জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হ্রাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা দ্য এভরি ব্রেথ কাউন্টস কোয়ালিশন, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা পাথ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা মার্কিন সংস্থা ক্লিনটন হেলথ অ্যাকসেস ইনিশিয়েটিভের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটি জানিয়েছে তারা।

দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম বলছে, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আর্জেন্টিনা, ইরান, নেপাল, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর এবং দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের ১৯টি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ঝুঁকি গত মার্চ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। এসব দেশে ২০ শতাংশের কম মানুষ কোভিড টিকা পেয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, লাওসের মতো এশিয়ার দেশগুলো এবং আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, মালাবি, জিম্বাবুয়ের মতো দেশেও অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। এসব দেশে সামান্য অক্সিজেনের সংকটও বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।

নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমানো নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে দ্য এভরি ব্রেথ কাউন্টস কোয়ালিশন। সংস্থাটির সমন্বয়ক লেইথ গ্রিনস্লেড বলেন, বৈশ্বিক মহামারির আগেই এসব দেশের মধ্যে অনেকটিই অক্সিজেনের সংকটে ভুগছিল। আর এখন অক্সিজেনের অতিরিক্ত চাহিদা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে।

গ্রিনস্লেড আরও বলেন, ব্রাজিল ও পেরুতে গত বছর এবং আবার এ বছরের জানুয়ারিতে যা ঘটল তা থেকে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কেউ সতর্ক হয়নি। আমাদের বোঝা উচিত ছিল লাতিন আমেরিকার মতো পরিস্থিতি ভারতেও ঘটতে পারে।

আন্তর্জাতিক ওষুধ সহায়তা সংস্থা ইউনিটয়েডের অপারেশন প্রধান রবার্তো মাতিরু বলেন, যেসব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আগে থেকেই নড়বড়ে ছিল, সেসব দেশে করোনার শীর্ষ সংক্রমণের সময় আমরা স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরো ধসে যেতে দেখেছি।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে খাবি খাচ্ছে ভারত। দেশটির হাসপাতালগুলোয় দেখা দিয়েছে তীব্র অক্সিজেনের সংকট। চলতি মাসের মাঝামাঝি ভারতে করোনার রোগীদের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ দশমিক ৫ ঘনমিটার অক্সিজেন। এই চাহিদা চলতি বছরের মার্চ থেকে ১৪ গুণ বেশি ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকার বাধ্য হয়ে লিকুইড এবং সিলিন্ডার অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশ যারা অক্সিজেনের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তারা এতে বিপাকে পড়তে পারে। মার্কিন সংস্থা ক্লিনটন হেলথ অ্যাকসেস ইনিশিয়েটিভের জরুরি ওষুধ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাচারি কাৎজ বলেন, ভেবে দেখেন, যদি এসব দেশেও ভারতের মতো সংকট দেখা দেয় তাহলে পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে যেতে পারে! কারণ ভারতেরই এখন অক্সিজেন আমদানি করতে হচ্ছে।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপালেও অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দেশটিতে চলতি মাসে অক্সিজেনের চাহিদা গত মার্চ থেকে ১০০ গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কায়ও অক্সিজেনের চাহিদা গত মার্চ থেকে সাত গুণ বেড়েছে। করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ সামলাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটিতে গত গ্রীষ্মে করোনা রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল। সেই সময়ের তুলনায় এবার ৬০ শতাংশের বেশি রোগী হাসপাতালগুলোয় অক্সিজেন নিয়েছেন।

এ নিয়ে করাচির চিকিৎসক ড. ফিয়েজাহ জেহান বলেন, ``আমরা ভারতের পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমরা দোয়া করছিলাম যেন অলৌকিক কিছু ঘটে। তবে পাকিস্তানের চলতি লকডাউন নতুন সংক্রমণ কমাতে পারে।'

দ্য এভরি ব্রেথ কাউন্টস কোয়ালিশনের সমন্বয়ক লেইথ গ্রিনস্লেড বলেন, `গরিব দেশগুলো অক্সিজেনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী হিসেবে প্রাধান্য দেয়নি। যদি আমরা ভারতের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধু অক্সিজেনের অভাবে।'



বৈশ্বিক গ্যাসের বাজার বিশ্লেষক সংস্থা গ্যাস ওয়ার্ল্ড বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের মতে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের সম্পূর্ণটিই যদি শুধু হাসপাতালে সরবরাহ করে তবুও অনেক দেশ অক্সিজেন সংকট কাটাতে পারবে না।

ইরাকের গ্যাস কোম্পানিগুলো দৈনিক ৬৪ হাজার ঘনমিটার তরল অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। যা দেশটির করোনা রোগীদের চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। অপরদিকে কলম্বিয়ার গ্যাস কোম্পানিগুলো দিনে ৪ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। যা দেশটির করোনা রোগীদের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ।

পেরুতে গ্যাস কোম্পানিগুলো যদি সব গ্যাস হাসপাতালে দিয়ে দেয় তাহলেও দেশটির করোনা রোগীদের অক্সিজেনের চাহিদা ৮০ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে পেরুর রাজধানী লিমার একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ড. জেসাস ভালভার্দে হুয়ামেন বলেন, বর্তমানে পেরুতে করোনা রোগীর সংখ্যা কমছে। তবে এখনো আমাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে।

দ্য এভরি ব্রেথ কাউন্টস কোয়ালিশনের সমন্বয়ক গ্রিলস্লেড বলেন, আমাদের একটি জটিল প্রশ্নকে সামনে আনতে হবে: কেন খনি, স্টিল, গ্যাসের কাজে অক্সিজেন বরাদ্দ করে রাখতে হবে? যেখানে দরিদ্র দেশগুলোতে শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বৃদ্ধরা প্রয়োজনে অক্সিজেন পাচ্ছে না। কীভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অক্সিজেন উৎপাদনে বিনিয়োগ করা যায় ওই দেশগুলোকে সেদিকে নজর দিতে হবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পাঠিয়ে সহায়তা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা। তবে দেশগুলোর উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, অক্সিজেন উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ঋণ ব্যবস্থা চালু থাকলেও অনেক দেশ তা নেয়নি। গত বছর বিশ্ব ব্যাংক করোনা মহামারির প্রস্তুতির জন্য ১৬০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। চলতি মাসে এটি আরও ১২ বিলিয়ন ডলার বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিকি চোপড়া বলেন, দেশগুলো ভেন্টিলেটর এবং পিপিইর জন্য ঋণ নিচ্ছে, কিন্তু অক্সিজেনের জন্য নয়।

দ্য এভরি ব্রেথ কাউন্টস কোয়ালিশনের সমন্বয়ক গ্রিলস্লেড এ নিয়ে বলেন, যখন কোনো সংকট দেখা দেয় তখনই সরকারগুলো এ নিয়ে হইচই শুরু করে। কিন্তু তাদের অবশ্যই এর চেয়ে অগ্রসর চিন্তা করতে হবে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত