হুসাইন আহমদ

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:

চলতি মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ঘনীভূত হয়েছে। কাশ্মীর সীমান্তে নিয়মিত পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে সরব।
এই উত্তেজনার ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছে পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী ও নীরব সংকট—বেলুচিস্তান। নির্বিচার ধরপাকড়, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অর্থনৈতিক শোষণের নির্মম বাস্তবতার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে সেখানকার মানুষ। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ছায়ায় ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ হয়ে উঠেছে বেলুচিস্তান। ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের মানুষের লড়াইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসও জড়িত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বেলুচ জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান, যা দেশের মোট ভূমির ৪৪ শতাংশজুড়ে বিস্তৃত। তবে এখানকার জনসংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম, যার বড় একটি অংশ বেলুচ জাতিগোষ্ঠী।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা অর্জনের সময়, বেলুচিস্তানের খান (খান অব কালাত) বেলুচকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চেষ্টা চালান। কিন্তু ১৯৪৮ সালে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকার বেলুচিস্তানকে জোরপূর্বক পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করে, যেটাকে বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘জবরদখল’ বলে থাকেন।
এর পর থেকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার প্রশ্নে বেলুচদের সঙ্গে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হয়। ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ এবং ২০০৪ থেকে বর্তমান পর্যন্ত মোট পাঁচটি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখা গেছে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি, অর্থনৈতিক সম্পদে আঞ্চলিক আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের দাবি ছিল প্রতিটি বিদ্রোহের মূল রসদ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দমন-পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন বন্ধ করেছে।
বাংলাদেশ ও বেলুচিস্তান—পথ ভিন্ন হলেও গন্তব্য এক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বেলুচিস্তানের আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর সামঞ্জস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ভাষাগত, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। একইভাবে বেলুচরাও ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অবদমন, সম্পদের শোষণ ও রাজনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনগণ গণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালিয়ে দমন করে, যা গণহত্যায় পরিণত হয়। বেলুচিস্তানেও আমরা দেখি, প্রতিটি আন্দোলনে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বকে অস্বীকার করে সামরিক দমন চালানো হয়েছে; বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের বিদ্রোহের সময় সেনা অভিযানের কথা উল্লেখ না করলে নয়। বেলুচ নেতা আতাউল্লাহ মেঙ্গলের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে দমন-পীড়ন চালায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সরকার, যা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তোলে।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছিল—বিশেষত ভারতের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন। কিন্তু বেলুচদের আন্দোলন এখনো তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি, বরং আঞ্চলিক ভূরাজনীতির খেলায় তাদের সমস্যা উপেক্ষিত রয়েছে।
‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র’ বেলুচিস্তান
এবারের বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এক ভিন্ন বাস্তবতায়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বেলুচিস্তানে পাঁচ শতাধিক গুম, শতাধিক মৃতদেহ উদ্ধার ও অসংখ্য নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে।
খুজদার, তুরবত, পানজগুর ও গওয়াদর—এসব এলাকায় সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ পরিচালনা করছে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই অভিযান আসলে সাধারণ বেলুচদের বিরুদ্ধে দমননীতি চালানোর একটি উপায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তা বাহিনী রাতের আঁধারে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। পরে অনেককে আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের পাওয়া যায়, তারা ফিরে আসে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে বা লাশ হয়ে।
সিইপিসি ও গওয়াদর: উন্নয়নের নামে বিতাড়ন ও শোষণ
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিইপিসি) হলো চীনের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর অন্যতম। চীনের জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে গওয়াদর বন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
বেলুচিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বেলুচদের কাছে প্রকল্পটি উন্নয়নের প্রতীক নয়; বরং এটিকে তারা নিজেদের জমি ও সম্পদ দখলের মাধ্যম হিসেবে দেখছে।
গওয়াদর শহরে স্থানীয় জনগণকে না জানিয়ে এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেলুচদের অভিযোগ, গওয়াদরকে ‘মেগা সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলার নামে বেলুচ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। অথচ চীনা ও পাঞ্জাবি শ্রমিকদের জন্য বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—সবই তৈরি হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়াকে অনেক বেলুচ বিশ্লেষক ‘সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন’ হিসেবে দেখছেন।
সামরিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী প্রতিরোধ
বর্তমানে বেলুচিস্তানে দুই ধরনের প্রতিরোধ আন্দোলন একসঙ্গে চলছে—একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ, অন্যটি অহিংস গণ-আন্দোলন। সশস্ত্র প্রতিরোধে বিএলএ, বিআরএ ও বিএলএফের মতো সংগঠন সক্রিয়ভাবে জড়িত। পাকিস্তান সরকার তাদের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর দমননীতি চালাচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্রসংগঠন, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী বেলুচ সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের কায়েমি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ‘নিখোঁজ ব্যক্তি’ বা গুম ইস্যু এখন বেলুচ জাতীয়তাবাদের প্রধান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমনটি দেখা গিয়েছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে অথবা শেখ হাসিনার আমলে বহু মা-বাবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সন্তানদের সন্ধান দাবি করছেন।
বেলুচিস্তানে ট্রেনে হামলা: বিদ্রোহের নতুন মাত্রা
২০২৫ সালের মার্চে বিএলএর সংঘটিত ট্রেন বিস্ফোরণ বেলুচিস্তানে নিরাপত্তাহীনতার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করে। কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডি অভিমুখী যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেসে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় অনেক লোক নিহত ও আহত হয়। রেললাইনের নিচে স্থাপন করা বোমা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছিল বলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে।
এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিএলএ বিবৃতিতে বলেছে, ‘দখলদার পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দুর্বল করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এই হামলায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, বেলুচ বিদ্রোহীরা শুধু প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নয়, বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের হামলা একদিকে যেমন সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দমননীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে, তেমনি বেলুচিস্তানের সাধারণ জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা এবং ভয় আরও বাড়াবে।
সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি: ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসীও বেলুচিস্তানকে....
এ ঘটনার কিছুদিন পর ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আসিম মুনির ইসলামাবাদে বিএলএসহ বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির এই সন্ত্রাসীদের চুরমার করে দেব...আপনারা কী মনে করেন, বিএলএফ ও বিএলএর মতো সংগঠনের এই ১ হাজার ৫০০ সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে বেলুচিস্তান ছিনিয়ে নিতে পারবে?’
জেনারেল আসিম মুনির আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের শত্রুরা যদি মনে করে যে একটি মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী দল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এমনকি ১০ প্রজন্মের সন্ত্রাসী একত্র হলেও তারা বেলুচিস্তান ও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
জেনারেল মুনির আরও বলেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তি। যারা এ নিয়ে সন্দেহ ছড়াচ্ছে, তারা আসলে পাকিস্তানকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে। বেলুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখাওয়া কিংবা সিন্ধু—সব অঞ্চল পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সেনাবাহিনীর দায়িত্ব।’ শুধু দেশীয় সন্ত্রাসীদের নয়, বরং তাদের পেছনে ইঙ্গিত করেন। বেলুচদের বিদ্রোহকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর পেছনে বিদেশি শক্তির মদদ রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর মূল কারণ, যেমন আর্থসামাজিক বৈষম্য, জাতিগত বঞ্চনা ও রাজনৈতিক নিপীড়ন থেকে নজর ঘুরিয়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের আবরণে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে চাইছে।
দ্বিজাতিতত্ত্বের পুনরুজ্জীবন ও কাশ্মীর
সেই প্রবাসী সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন। এটি শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা কাশ্মীরি ভাইদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারত যদি আমাদের সীমানা লঙ্ঘন করে, তবে তার জবাব দেওয়ার মতো ক্ষমতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রয়েছে।’
জেনারেল আসিম মুনির অভিযোগ করেন, ভারত একতরফাভাবে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অবৈধ দখলদারত্ব জারি রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপন্থী।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে সেনাপ্রধান ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট; যেমন বেলুচিস্তান পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র’ হিসেবে চিত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন।
বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক সংকট যখন আন্তর্জাতিকভাবে নজর কাড়ছে, তখন এ ধরনের বক্তব্য পাকিস্তানি রাষ্ট্রের শক্ত অবস্থান এবং বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে ‘কাশ্মীর পাকিস্তানের শিরার স্পন্দন’ এবং ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিজাতিতত্ত্ব পুনরুজ্জীবনের কথা বলে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাত উসকে দিয়েছেন বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তাঁর এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা এসেছে ভারত থেকে।
কাশ্মীরে হামলা: সীমান্ত উত্তেজনার বিস্তার
ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা ২৬ পর্যটককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ভারত এসব হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তাইয়েবার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। কিন্তু পাকিস্তান অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবু ভারত পানি আটকে দিয়ে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বেশ কিছু পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই পক্ষের মধ্যে টানা কয়েক রাত গোলাগুলির পর অবশেষে গত বুধবার ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বসে।
মঙ্গলবার মাঝরাতের কিছু পরে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ ঘটনায় পাকিস্তানের অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছে এবং পাল্টা হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। দুই পক্ষে এরপর ড্রোন হামলা চলছে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনার মধ্যে বেলুচ বিদ্রোহীরাও পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা: সহিংসতার নতুন মাত্রা
মে মাসে বেলুচিস্তানে একের পর এক প্রাণঘাতী হামলা সংঘটিত হয়েছে, যার জন্য বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এসব হামলা শুধু পাকিস্তানের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেনি, বরং আন্দোলন কতটা সংগঠিত ও সংঘবদ্ধ; তা-ও দেখিয়ে দিয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বেলুচ জনগণের মুক্তির জন্য এই প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাব। সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তান থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান কি বেলুচিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারাল
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি এক বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়।’
শাহিদ খাকান আব্বাসি আরও বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে আমাদের হাতে এখন আর কিছু নেই। বিদ্রোহীরা যেভাবে শহরে এবং গ্রামে প্রবেশ করছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, রাষ্ট্র সেখানে কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।’
আব্বাসি বলেন, ‘আমরা যদি সংবিধান অনুযায়ী বেলুচ জনগণের অধিকার স্বীকার না করি, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংকটের স্বীকারোক্তি হয়, তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক, তা সহজে অনুমান করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা, কৌশল ও দ্বৈত নীতি
কিন্তু বেলুচিস্তান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিক্রিয়া হতাশাজনক। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মাঝেমধ্যে বিবৃতি দিলেও তা কার্যকর রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়নি। মুসলিমপ্রধান দেশগুলো যেহেতু পাকিস্তানের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষে থাকে। ফলে বেলুচদের স্বাধিকার প্রশ্নে তাদের সমর্থন নেই।
একইভাবে চীনের পক্ষেও পুরোনো মিত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিপিইসিসহ নানা স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং সেনা দমনকে নীরব সমর্থন দিচ্ছে দেশটি।
ভারত কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বেলুচিস্তানের মানুষের পক্ষে কথা বলেন। কিন্তু পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখায়। শুধু তা-ই নয়, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর (আরএডব্লিউ) মাধ্যমে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অর্থায়ন করছে বলেও অভিযোগ তোলে দেশটি।
এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা বৃহত্তর সংঘাতে রূপ নেবে। পাকিস্তান যদি একদিকে বেলুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় এবং অন্যদিকে কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্ব—দুই দিক থেকে চরম হুমকির মুখে পড়বে। বেলুচিস্তানের ‘নীরব সংকট’ ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ, নির্যাতিত, বাস্তুচ্যুত ও অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
সামরিক দমন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাকে শুধু গভীরতর করে তুলেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসির মন্তব্য, সাম্প্রতিক বিদ্রোহী হামলা ও আন্তর্জাতিক নীরবতা এই সংকটকে আরও বেশি গভীর করে তুলে ধরছে। মানবাধিকার সংগঠন ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সত্যি স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে বেলুচিস্তানের মতো সমস্যাগুলোর প্রতি আন্তরিক মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, একটি জাতিকে তার ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে শুধু ধর্মের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষা করা যায় না। বেলুচিস্তানের ক্ষেত্রেও তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংলাপ, স্বায়ত্তশাসনের স্বীকৃতি এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ হতে পারে ভবিষ্যতের একমাত্র টেকসই পথ।
লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক
আরও খবর পড়ুন:

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৮ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাতের পেছনে একটি নীরব কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র রয়ে গেছে—বেলুচিস্তান। এই প্রদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন, গুম, অর্থনৈতিক শোষণ ও জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে বেলুচ বিদ্রোহীরা আবারও সশস্ত্র প্রতিরোধে নেমেছে। চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলুচিস্তান শুধু একটি আঞ্চলিক
০৯ মে ২০২৫
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৬ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
৮ ঘণ্টা আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে