Ajker Patrika

নেহায়েত বাচ্চা হে!

সম্পাদকীয়
নেহায়েত বাচ্চা হে!

আর একটু হলেই শেষ হয়ে যেত সুফিয়া কামালের পড়াশোনা! শায়েস্তাবাদের জুবিলি স্কুলে প্যারিলাল মাস্টার সবাইকে পড়াতেন। ভাইদের সঙ্গে আচকান পায়জামা পরে সুফিয়াও যেতেন পড়তে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পর ভাইয়েরা তো চলে গেল বরিশাল জিলা স্কুলের বোর্ডিংয়ে। দমলেন না মা। তিনি মেয়েকে পুঁথি সাহিত্যের পাঠ দিতে লাগলেন। শায়েস্তাবাদের জমিদারবাড়িতে নারীদের মধ্যে সুফিয়ার মা সৈয়দা সাবেরা খাতুনই প্রথম বাংলা চর্চা শুরু করেছিলেন।

ভাইদের মাধ্যমে সুফিয়ার বাড়িতে গোপনে বাংলা বইয়ের আমদানি হতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের লেখার সঙ্গে সেখানেই পরিচিত হন সুফিয়া কামাল। ১৩ বা ১৪ বছর বয়সে বরিশালে আসেন তিনি। সুফিয়ার আত্মীয় সৈয়দা মোতাহেরা বানুই প্রথম সুফিয়ার মধ্যে কাব্যপ্রতিভা লক্ষ করেন। তখন বরিশাল থেকে প্রকাশিত ‘তরুণ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকায় সুফিয়ার প্রথম লেখা ‘সৈনিক বধূ’ প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের উৎসাহ ছিল।

সুফিয়ার ছোট মামা সৈয়দ ফজলে রাব্বি ঢাকায় পড়তেন। নজরুল ঢাকায় এলে তিনি নজরুলের হাতে তুলে দেন সুফিয়ার কিছু লেখা। লেখা পড়ে মুগ্ধ হন নজরুল। ঢাকাতেই ‘অভিযান’ পত্রিকায় সুফিয়ার কয়েকটি লেখা ছেপে দেন। সুফিয়ার কলকাতা যাওয়ার কথা শুনে নজরুল বললেন, ‘কলকাতাতেই দেখা হবে।’

কলকাতায় একদিন নজরুল এলেন সুফিয়াকে দেখবেন বলে। জমিদার বংশের পুত্রবধূ তো এভাবে হাজির হতে পারেন না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অগত্যা আপাদমস্তক ঘোমটায় ঢাকা সুফিয়া এসে দাঁড়ালেন নজরুলের সামনে। নজরুলের সে কী আনন্দ। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি বুঝি মোটাসোটা গোছের গিন্নি মানুষ! কিন্তু এ দেখি, নেহায়েত বাচ্চা হে!’

সুফিয়ার সঙ্গে নজরুলের প্রথম সাক্ষাৎকারের পর থেকেই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে সুফিয়ার নাম। কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে দেরি হয় না। 

সূত্র: সিরাজুদ্দীন হোসেন ও সারা কে বোল্টন, মহীয়সী নারী, পৃষ্ঠা ৭০-৭২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত