Ajker Patrika

প্রাণী, প্রকৃতি ও মানবতার আলোকবর্তিকা জেন মরিস গুডঅল

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত
জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত

শিম্পাঞ্জিদের সঙ্গে নানা ভঙ্গিমায় তোলা ছবির জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত তিনি। এটিই তাঁকে চেনার প্রথম পাঠ অনেকের কাছে। একটা জীবন কাটিয়ে দিলে তেমন অনেক ছবিই তোলা যায়। কিন্তু জীবনটা কাটাতে হয়। ১৯৩৪ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করা জেন মরিস গুডঅল সেই জীবন কাটিয়েছেন। তানজানিয়ার গোম্বে অরণ্যে শিম্পাঞ্জিদের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার কারণে তিনি শুধু বিজ্ঞানী নন, বরং মানবতা ও পরিবেশ রক্ষার অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠেন। জেন গুডঅল ইনস্টিটিউট ও রুটস অ্যান্ড শুটস প্রোগ্রামের মাধ্যমে তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছেন। জাতিসংঘের শান্তির দূত হিসেবে সারা জীবন ভ্রমণ ও বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এই আলোকবর্তিকা ১ অক্টোবর লস অ্যাঞ্জেলেসে মারা যান।

বেড়ে ওঠা

ডেম জেন মরিস গুডঅল। জন্ম ৩ এপ্রিল, ১৯৩৪, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।

ছোটবেলায় খেলনা পুতুলের পরিবর্তে প্রাণী এবং তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণে বেশি সময় কাটে ছোট্ট জেনের। স্কুল শেষ করার পর অর্থাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারায় তিনি টাইপিং, শর্টহ্যান্ড ও বুককিপিং শিখে উপার্জিত অর্থ জমিয়ে আফ্রিকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ১৯৫৭ সালে কেনিয়ায় তিনি বিশ্বখ্যাত জীবাশ্মবিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ড. লুই লিকির সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর সহায়তায় তিনি ১৯৬০ সালে তৎকালীন টাঙ্গানিকার (বর্তমানে তানজানিয়া) গোম্বে স্ট্রিম ন্যাশনাল পার্কে শিম্পাঞ্জিদের ওপর তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা শুরু করেন। জেনের কাজের গুরুত্ব বুঝে লিকি তাঁকে উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন। ১৯৬২ সালে তাঁর সহায়তায় কোনো স্নাতক ডিগ্রি ছাড়াই জেন গুডঅল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির সুযোগ পান।

জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত
জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর কাজ

জেন গুডঅল আফ্রিকার তানজানিয়ার গোম্বে অরণ্যে শিম্পাঞ্জিদের ওপর ৬০ বছর ধরে গবেষণা করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, শিম্পাঞ্জিরা মানুষের মতো যন্ত্র তৈরি ও ব্যবহারে সক্ষম, আবেগ প্রকাশ করতে পারে এবং পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন গড়ে তোলে। তাঁর গবেষণা শুধু প্রাণিজগৎ নয়, মানব আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও নতুন দিক উন্মোচন করে। পরে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ, বন্য প্রাণী রক্ষা এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করে বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জন করেন।

জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত
জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত

যত অর্জন

জেন গুডঅল জাতিসংঘের শান্তির দূত ছিলেন। কিয়োটো প্রাইজ, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির হাবার্ড মেডেল, গাঁধী/কিং পুরস্কার, টাইলার প্রাইজসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেন। এর বাইরে তিনি পেয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের ডজনের বেশি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি।

শিম্পাঞ্জি, ইনস্টিটিউট ও আন্দোলন

১৯৭৭ সালে জেন গুডঅল নিজের নামে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যার কাজ ছিল শিম্পাঞ্জি নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ।

তবে এই ইনস্টিটিউট শুধু প্রাণী রক্ষায় সীমাবদ্ধ না থেকে স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সংরক্ষণকেও সমান গুরুত্ব দেয়।

জেন গুডঅল ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রুটস অ্যান্ট শুটস নামের একটি আন্দোলন। এখন শতাধিক দেশে লাখ লাখ তরুণ এর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা, প্রাণীর কল্যাণ ও মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত।

জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত
জেন মরিস গুডঅল। ছবি: সংগৃহীত

মুভিতে

জেন গুডঅলের জীবন ও কাজ নিয়ে ২০১৭ সালে ‘জেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পায়। রেডফোর্ড কোলিনস ছিলেন এর পরিচালক।

প্রেরণামূলক বক্তব্য

জেন গুডঅল নিজের কাজ এবং জীবনের দর্শন নিয়ে অসংখ্য প্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সেসব বক্তব্যের সারকথা হলো প্রকৃতিপ্রেম এবং তার প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। শিম্পাঞ্জি গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি দেখিয়েছেন, প্রাণীও অনুভব করে, শেখে

এবং সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়গুলো মানুষের সঙ্গে তাদের গভীর সাদৃশ্য ফুটিয়ে তোলে।

সূত্র: জেন গুডঅল ডট ওআরজি, গুডরিডস ডট কম, আর্থ ডট ওআরজি, রিলিজ শিম্পস ডট ওআরজি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ, শান্তি রক্ষা মিশনের এক-চতুর্থাংশ ছাঁটাই করছে জাতিসংঘ

১২ অক্টোবর থেকে ৫ কোটি শিশুকে বিনা মূল্যে টাইফয়েড টিকা, টাকা চাইলে ব্যবস্থা

গাজায় থেমে গেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান–কামানের গর্জন, ২ বছর পর শান্তির ঘুমে গাজাবাসী

৯ গোলের দুঃস্বপ্ন থেকে মশার যন্ত্রণা, বাংলাদেশ-হংকং লড়াইয়ে আরও যা ঘটেছে

সবচেয়ে প্রভাবশালী ৪ মিডিয়ার লাগাম এখন ৪ শীর্ষ ধনীর হাতে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত