Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

জীবনসাগরে ভেসে বেড়ানো ম্যাডলিনের গল্প

ফিচার ডেস্ক
ম্যাডলিন কুলাব। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাডলিন কুলাব। ছবি: সংগৃহীত

মনে পড়ে গাজার ত্রাণবাহী সেই জাহাজের কথা? যে জাহাজ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাঝ সমুদ্র থেকে। ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ আন্তর্জাতিক সংহতি সংগঠন গাজার অবরোধ ভাঙতে গত ১ জুন ইতালির কাতানিয়া উপকূল থেকে ‘ম্যাডলিন’ নামের একটি জাহাজ পাঠিয়েছিল। আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী অভিযান চালিয়ে জাহাজে থাকা লোকজনকে গ্রেপ্তার করে। শেষমেশ ত্রাণবাহী জাহাজটি গাজা উপত্যকায় ভিড়তে পারেনি। সেই জাহাজের নাম রাখা হয়েছিল একজন মানুষের নামে।

তিনি হলেন গাজার প্রথম নারী মৎস্যজীবী ম্যাডলিন কুলাব।

১৯৯৫ সালে ম্যাডলিনের জন্ম গাজার একটি জেলে পরিবারে। ছয় বছর বয়স থেকে তিনি বাবার সঙ্গে সমুদ্রযাত্রায় যেতেন। ধীরে ধীরে শিখে নেন জাল ফেলা, নৌকা চালানো ও মাছ ধরার কৌশল। ১৩ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে সমুদ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ম্যাডলিন। তাঁর হাত ধরে শুরু হয় গাজার প্রথম পেশাদার নারী জেলের যাত্রা। কঠোর সামাজিক বাধার মুখেও অটল ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি সম্মান অর্জন করেন।

ম্যাডলিনের জেলেজীবনে শুধু সামাজিক বাধাই নয়, ইসরায়েলের নৌ আধিপত্যেরও বাধা ছিল। দেশটির অবরোধের কারণে গাজার জেলেদের সমুদ্রে চলাচল সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। গাজার মানুষদের জন্য বরাদ্দ করা হয় সমুদ্রের মাত্র ৩ নটিক্যাল মাইল। ইসরায়েলের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যেও তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যান। ২০১১ সালে ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অনুদানে ম্যাডলিন একটি ইঞ্জিনযুক্ত নৌকা পেয়েছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে ব্যাংক অব প্যালেস্টাইনের কাছে ঋণ নিয়ে কেনেন একটি পর্যটন নৌকা। সেই নৌকা নারীদের ভ্রমণের জন্য বিশেষভাবে বরাদ্দ করা হয়েছিল।

কিন্তু একা পথ চলতে চাননি ম্যাডলিন। তিনি তাঁর সমাজে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উইমেন্স ফিশিং ক্লাব। সেখানে নারী জেলেদের নৌকা চালানো এবং জাল বোনা শেখাতেন তিনি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজায় ব্যাপক হামলার সময় ম্যাডলিনের বাবা নিহত হন। প্রায় ৯ মাসের গর্ভবতী অবস্থা নিয়ে তাঁর পরিবারকে সেই সময় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে হয়। সেই সময়টাতে তিনি অপর্যাপ্ত চিকিৎসার মধ্যেও কঠিন শরণার্থী জীবন কাটাতে বাধ্য হন।

যুদ্ধ ও অবরোধে নৌকা, জালসহ সম্পদ ধ্বংস, মাছের অভাব ও চরম দারিদ্র্যে আটকে পড়ে এখনো বেঁচে আছেন ম্যাডলিন। কিন্তু কোথায় কীভাবে আছেন, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তাঁর সাহস ও দায়িত্ববোধ গাজার নারীদের কাছে অনুপ্রেরণা আর বিশ্ববাসীর কাছে মানবিক সংহতি জানানোর প্রতীক হয়ে ওঠে। তিনি গাজায় নারীদের সাহসিকতা ও সংগ্রামের জীবন্ত কিংবদন্তি। সে কারণেই গ্রেটা থুনবার্গের প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম ফ্লোটিলা তাদের জাহাজের নাম রেখেছিল ম্যাডলিন।

সূত্র: ফোর্বস, আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত