Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

নেপালে নারীর ক্ষমতায়ন সংবিধানে অধিকার, বাস্তবে বাধা

ফিচার ডেস্ক
সুশীলা কারকি। ছবি: সংগৃহীত
সুশীলা কারকি। ছবি: সংগৃহীত

১২ সেপ্টেম্বর নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুশীলা কারকি। হিসাব বলছে, নেপালে বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি তিনি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে সে সময়কালটা আরও বেশি। দেশটির ৭৫ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে আনুষ্ঠানিক নিয়োগের মাধ্যমে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীও হলেন তিনি। সেদিকে তাকালে সুশীলা কারকি নেপালে নারীদের জন্য একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছেন বলে ভাবা যায়।

১৯৫২ সালের ৭ জুন নেপালের বিরাটনগরে জন্ম সুশীলার। পড়াশোনা শেষ করেছেন ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরই যোগ দেন আইন পেশায়। নেপালের প্রেক্ষাপট হিসাব করলে, সুশীলা যখন পড়াশোনা শেষ করে পেশাগত কাজে যোগ দিয়েছিলেন, সে সময় দেশটিতে একজন নারীর পক্ষে আইন পড়া কিংবা আইন অনুশীলন করা ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে সক্রিয়ভাবে ওকালতি করার পর তিনি সরাসরি বিচারক হিসেবে প্রবেশ করেন সুপ্রিম কোর্টে। ধীরে ধীরে সুশীলা পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতির চেয়ারে। তবে তাঁকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

সব বাধা পেরিয়ে সুশীলা তাঁর কাজটা করে গেছেন নিজের মতো করে। তাঁর দক্ষতা তাঁকে এ পর্যন্ত এনে পৌঁছে দিলেও এখনো তাঁর পদের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে দেশের নাগরিকদের ওপর। যদিও জেন-জি আবার পথে নেমেছে এই বলে যে, তারা এই সরকারপ্রধানকে চায় না। সদ্য সংকটের মুখে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া এই প্রধানমন্ত্রীকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার পাশাপাশি তাই টিকে থাকার লড়াইও লড়ে যেতে হবে।

নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সুশীলা কারকির অবস্থান এক অর্থে বড় অর্জন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তবে নেপালের সাধারণ নারীদের অধিকার ও সুযোগের অনেক কিছু এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হলেও, বাস্তবে নারীরা এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন। আইনি সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সেখানে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে নারীরা এখনো লৈঙ্গিকভিত্তিক বৈষম্যের শিকার। দেশটিতে শিক্ষার অভাব আজও একটি বড় বাধা। দলিত নারীরা দ্বিগুণ বৈষম্যের শিকার। তাঁদের জন্য একদিকে লিঙ্গ, অন্যদিকে জাত একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান—সব ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত।

কাঠমান্ডু এবং পোখারার মতো শহরগুলোতে নারীদের কর্মসংস্থান এবং রাজনীতিতে তাঁদের অংশ নেওয়ার মাত্রা বেড়েছে। নারীরা এখন বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। লৈঙ্গিক অধিকারের পক্ষে তাঁদের সোচ্চার আন্দোলনও দৃশ্যমান। কিন্তু সমাজ এখনো আশা করে, নারীরা ক্যারিয়ারের চেয়ে পরিবারকেই অগ্রাধিকার দেবে। এ বিষয়গুলো মূলত প্রকৃত সমতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌন হয়রানি এখনো সেখানে গুরুতর সমস্যা। পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনগত সুরক্ষা থাকলেও এর প্রয়োগ খুবই দুর্বল।

নারীর অধিকার সেখানে আইনগতভাবে স্বীকৃত হলেও সামাজিকভাবে সীমাবদ্ধ। নেপালের সংবিধান একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে বটে। কিন্তু গ্রামীণ এলাকার সামাজিক মানসিকতা এখনো অগ্রগতির পথে বাধা। এমনকি শহর এলাকায়ও লৈঙ্গিকভিত্তিক পক্ষপাত টিকে রয়েছে। এই অবস্থায় নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কারকির টিকে যাওয়া নেপালি নারীদের জন্য একটি অনন্য বিজয় বয়ে আনবে।

সূত্র: দ্য অন্নপূর্ণা এক্সপ্রেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত