Ajker Patrika

৩০০ টাকায় শুরু, এখন মাসে আয় প্রায় ৪ লাখ

করোনার সময় চারদিক অচল হয়ে পড়ে। সেই সময় বগুড়ার মাসুমা ইসলাম নামের ছাব্বিশ বছরের এই গৃহিণী ঘরে বসে শুরু করলেন এক নতুন উদ্যোগ। এর মধ্যে চাকরি হারালেন তাঁর স্বামী, থমকে গেল সংসার। কিন্তু হাল ছাড়লেন না মাসুমা। মাত্র ৩০০ টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করে এখন তিনি হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
মাসুমা ইসলাম
মাসুমা ইসলাম

উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

২০২০ সালে করোনার কারণে হোটেলের চাকরি হারান স্বামী রাজিবুল ইসলাম। সংসারে নেমে আসে দুঃসময়।

ঘরে দুই সন্তান, বৃদ্ধ মা—কোনো রোজগার নেই। হতাশার মধ্যে ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের গ্রুপ ‘উই’ দেখে অনুপ্রাণিত হন মাসুমা। মেয়ের মাটির ব্যাংক ভেঙে পাওয়া ৩০০ টাকা দিয়ে তৈরি শুরু করেন আলুর চিপস। অনলাইনে ছবি দিয়ে বিক্রি শুরু হলো। অল্প সময়ে হাতে এল লাভের টাকা। সাহস পেলেন মাসুমা। এরপর বানালেন চানাচুর, বিক্রি করলেন শাড়ি। কিন্তু বড় সাফল্য এল গরুর মাংসের আচারে।

পরিবারে কারা আছেন

স্বামী রাজিবুল ইসলাম, দুই সন্তান ও বয়স্ক শাশুড়ি নিয়ে মাসুমার পরিবার। থাকেন বগুড়া শহরের কইগাড়ি এলাকায়। মাসুমা ইসলামের জন্ম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার হায়াত খানচালা গ্রামে। তিন বোন আর দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। এসএসসি পাসের পর ২০১০ সালে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পড়াশোনা আর এগোয়নি। বিয়ে হয় তখনই। ২০১২ সালে বড় মেয়ে রিসার জন্ম।

গত সেপ্টেম্বরে তিনি আরেক সন্তানের মা হন।

যা বিক্রি করেন

শুরুতে আম, জলপাই, বরই, আমলকী, রসুন ও মরিচের আচার তৈরি করতেন। পরে যোগ হলো ঘি, দই, লাচ্ছা সেমাই, সরিষার তেল। পাশাপাশি কিছু সময় পোশাকও বিক্রি করেছেন। তবে তাঁর জনপ্রিয় পণ্য হলো গরুর মাংসের আচার। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কেজি আচার বিক্রি করেন তিনি। দাম প্রতি কেজি এক হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রায় ৫০ কেজি রসুনের আচার ও ১০০ কেজি ঘি বিক্রি হয় নিয়মিত।

গরুর মাংসের আচার

একদিন ইউটিউবে গরুর মাংসের আচার তৈরির রেসিপি দেখে বাড়িতে বানিয়ে ফেলেন মাসুমা ইসলাম। অনলাইনে ছবি দেওয়ার পর ব্যাপক সাড়া পান। এরপর নিয়মিত তৈরি করা শুরু করেন। এখন বগুড়া, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসে নিয়মিত। শুধু তা-ই নয়, গরুর মাংসের এই আচার তিনি আমেরিকা, লন্ডন, দুবাই, মালয়েশিয়া, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছেন। বেশি বিক্রি হয় উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের মাধ্যমে, পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপেও বিক্রি করেন তিনি।

শিখেছেন যেভাবে

মাসুমা ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকে আচারের প্রতি তাঁর বিশেষ টান ছিল। মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন আচার বানানো শিখেছেন, পরে শাশুড়ির কাছ থেকেও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন ইউটিউব দেখে আচারের স্বাদে বৈচিত্র্য আনার কৌশল শিখছেন। সরিষার তেলে তৈরি আচারে একধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। এ ছাড়া অলিভ অয়েলে বানানো একই আচারের স্বাদ ভিন্ন হয়ে যায়।

আয়ের গল্প

দেশের ৬৪টি জেলায় এবং পৃথিবীর ৪৭টি দেশে পৌঁছে গেছে মাসুমার গরুর মাংসের আচার ও ঘি। এখন প্রতি মাসে তিনি আয় করেন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাঁর সঙ্গে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন ১৫ জন কর্মচারী। ৩০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা ব্যবসার বর্তমানে মূলধন দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ টাকায়।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন

মাসুমা চান নিজের ব্যবসা আরও বড় করতে। শুধু আচার বা ঘি নয়, নানা ভোগ্যপণ্য নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্র্যান্ড গড়তে চান তিনি। তাঁর লক্ষ্য, দেশীয় পণ্যকে বিশ্ববাজারে পরিচিত করা। মাসুমা প্রযুক্তি আর অধ্যবসায়ের জোরে গড়েছেন নিজের পরিচয়। তাঁর গল্প শুধু অনুপ্রেরণাই নয়, প্রমাণ করে—চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছুই নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত