Ajker Patrika

এনবিআরের তদন্ত

ঘুষে ২৯৯ কোটি টাকার কর কমে ৩৩ কোটি

  • সম্পৃক্ততার অভিযোগ দুই কর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
  • ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য।
  • ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই কর নির্ধারণ।
  • জাহাঙ্গীর ৩০ ও মাসুদুর ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়, আগারগাঁও, ঢাকা। ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়, আগারগাঁও, ঢাকা। ফাইল ছবি

একটি কোম্পানির ২৯৯ কোটি টাকার আয়কর মাত্র ৩৩ কোটি টাকায় কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুই কর কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন। এনবিআরের গোয়েন্দা তদন্তে জানা গেছে, এই অনিয়মের বিনিময়ে কর্মকর্তারা ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এনবিআরের শাস্তি হিসেবে যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে এবং অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা দুজন হলেন নোয়াখালীর কর অঞ্চলের পরিদর্শী রেঞ্জ-৩-এর যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং কর অঞ্চল ফরিদপুরের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান। মো. জাহাঙ্গীর আলম উপ-কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর তিনি কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে কর অঞ্চল-১৮, ঢাকায় যোগ দেন। চলতি বছরের ৭ জুলাই যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে পরিদর্শী রেঞ্জ-৩, নোয়াখালীর দায়িত্বে যান। মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে ২০ আগস্ট ঢাকা কর অঞ্চল-১৮ থেকে ফরিদপুরে বদলি করা হয়।

ঘুষ নেওয়ার এই অনিয়মে জড়িত কোম্পানি হলো জোবাইদা করিম জুট মিলস লিমিটেড। কোম্পানির দুই করবর্ষের আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৯৯ কোটি টাকা। আইন অনুযায়ী, করদাতা প্রতিষ্ঠান যদি ট্যাক্স আপিলাত ট্রাইব্যুনালে যায়, ট্রাইব্যুনাল রিভাইজড কর নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে ফেরত পাঠায়। মো. জাহাঙ্গীর আলম উপ-কর কমিশনার হিসেবে ওই সময় কর্মরত ছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে, তিনিই কোম্পানিকে কর কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। এরপর পদোন্নতির সুবিধা নিয়ে বদলির অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মাসুদকে ব্যবহার করে অর্ডারশিট তৈরি করান। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা অমান্য করে কোম্পানির ২৯৯ কোটি টাকার কর ৩৩ কোটি টাকায় নেমে আসে।

গোয়েন্দা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রেঞ্জ বা কমিশনারের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। মাত্র দুই দিনের মধ্যে ব্যাক ডেটে অর্ডারশিটে সই করে কোম্পানিকে ২৬৬ কোটি টাকার কর কমানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর আলম ৩০ লাখ এবং মাসুদুর রহমান ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেন। তবে মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘জাহাঙ্গীর আলমের অনুরোধে অর্ডারশিট তৈরি করেছি, তার বাইরে কিছু জানি না।’

ঢাকা কর অঞ্চল-১৮-এর রেঞ্জ ও কমিশনার বিষয়টি নজরে আনেন। এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তা যাচাই শেষে উভয় কর্মকর্তার অনিয়ম নিশ্চিত করেন। যুগ্ম কর কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে এবং মেসেজে কোনো সাড়া মেলেনি।

শাস্তি হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারার অধীনে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ১২ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‎ডিভোর্সের পরও জোর করে রাতযাপন, বর্তমান স্বামীকে নিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা ‎

৯ পুলিশ পরিদর্শক বাধ্যতামূলক অবসরে

গণবিক্ষোভ আতঙ্কে মোদি সরকার, ১৯৭৪-পরবর্তী সব আন্দোলন নিয়ে গবেষণার নির্দেশ

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ‘সন্ত্রাসী খেল’ ফাঁস করে দিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী জইশের সদস্য

নিজের বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি কলেজশিক্ষকের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত