Ajker Patrika

শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করল দক্ষিণ কোরিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৪৭
প্রতীকী  ছবি
প্রতীকী ছবি

স্কুলের শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ও স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি বিল পাস করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ আইন কার্যকর হবে ২০২৬ সালের মার্চ থেকে। স্মার্টফোন আসক্তি কমাতে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শিক্ষাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বুধবার জাতীয় পরিষদে ১৬৩ জন সদস্যের মধ্যে ১১৫ জন বিলটির পক্ষে ভোট দেন।

আইনটি দুই দলের ঐকমত্যে পাস হয়েছে। আইনপ্রণেতা, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা বলছেন, স্মার্টফোন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে এবং শিক্ষাজনিত কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

বিলটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল পিপল পাওয়ার পার্টির এমপি চো জুং-হুন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক উন্নয়নে স্মার্টফোন আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাবের যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে।’

২০২৪ সালের এক সরকারি জরিপ অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ স্মার্টফোনে অতিরিক্ত নির্ভরশীল। তবে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ৪৩ শতাংশ এবং সংখ্যাটি দিনে দিনে বাড়ছে।

১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী জানান, সে ফোনে আসক্ত নয়, বরং প্রাইভেট টিউশন ও হোমওয়ার্কের কারণে প্রতিদিনই মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়।

১৪ বছর বয়সী ছেলের মা চোই ইউন-ইয়ং বলেন, ‘ছাত্ররা এখন স্কুলে শুধু পড়ালেখা করতে যায় না, বন্ধুত্ব গড়তেও যায়। তবে ফোনের কারণে তারা কোনো কিছুর প্রতিই মনোযোগ দিতে পারে না।’

প্রাইমারি স্কুলপড়ুয়া দুই কন্যাসন্তানের মা কিম সান বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে চলা বুলিং এবং অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার নিয়েও তিনি চিন্তিত।

এই আইন শুধু শ্রেণিকক্ষের সময়েই ফোন নিষিদ্ধ করেছে, তবে শিক্ষকদের পুরো স্কুল প্রাঙ্গণে ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক ডিভাইস ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম বা জরুরি অবস্থায়ও ফোন ব্যবহার করা যাবে।

আইনে বলা হয়েছে, স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার শেখাতে হবে।

দেশটির দুটি বড় শিক্ষক সংগঠনের মধ্যে কেবল কনজারভেটিভ কোরিয়ান ফেডারেশন অব টিচারস অ্যাসোসিয়েশন বিলটির পক্ষে মত দিয়েছে। সংগঠনটির এক মুখপাত্র জানান, শিক্ষক সমীক্ষায় ৭০ শতাংশ বলেছেন, স্মার্টফোনের কারণে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ফোন বাজেয়াপ্ত করায় শিক্ষককে গালাগালি, এমনকি আক্রমণ করে বসে।’

অন্যদিকে, কোরিয়ান টিচারস অ্যান্ড এডুকেশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান নেয়নি। তবে সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, এটি শিক্ষার্থীদের ফোন ব্যবহারের অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।

শিক্ষক চো ইয়ং-সান বলেন, ‘ছাত্রদের মূল সমস্যা ফোন নয়, বরং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ, বিশেষ করে সুনুং (কলেজ অ্যাডমিশন পরীক্ষা)।’

সুনুং নামের এই পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ায় ভবিষ্যতের চাকরি ও জীবনমান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। এ জন্য ছাত্ররা প্রাথমিক থেকেই কঠোর প্রস্তুতির মধ্যে থাকে।

১৮ বছর বয়সী সিও মিন-জুন বলেন, ‘শুধু শ্রেণিকক্ষে ফোন নিষিদ্ধ করলেই হবে না, আমাদের শেখাতে হবে ফোন ছাড়া কীভাবে সময় কাটানো যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শুধু ফোন কাড়াই হয়েছে, তবে কখনোই সঠিক ব্যবহারের শিক্ষা দেওয়া হয়নি।’

ফিনল্যান্ড ও ফ্রান্সের মতো কিছু দেশ তুলনামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ফোন নিষিদ্ধ করেছে, যা কেবল ছোটদের স্কুলে প্রয়োগ হয়। অন্যদিকে ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও চীনের মতো দেশগুলো সব ধরনের স্কুলেই ফোন ব্যবহারে বিধিনিষেধ দিয়েছে।

চো জুং-হুন বলেন, তিনি পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হয়েছেন, কারণ অন্যান্য দেশও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, স্মার্টফোন আসক্তি শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও মানসিক বৃদ্ধির ওপর চরম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে—এমন উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

১টা বাজলেই আর স্কুলে থাকে না শিক্ষার্থীরা, ফটকে তালা দিয়েও ঠেকানো গেল না

আসামে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বহাল থাকবে দুর্গাপূজা পর্যন্ত

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

ভিকারুননিসায় হিজাব বিতর্ক: বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত