Ajker Patrika

কঠিন সময়ে স্বাভাবিক থাকার সাকিবীয় মন্ত্র

রানা আব্বাস, কলকাতা থেকে
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ১৩
কঠিন সময়ে স্বাভাবিক থাকার সাকিবীয় মন্ত্র

কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনারের বাসভবনে এক নৈশভোজে গত পরশু বাংলাদেশ দল, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ একাধিক পরিচালক, শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকদের এক প্রীতিসম্মেলনই হয়ে গেল। সেখানে স্বাভাবিকভাবে বেশির ভাগের চোখ সাকিব আল হাসানের দিকেই ছিল। 

অধিনায়ক সাকিবকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, বাংলাদেশ দল আগের রাতে ইডেন গার্ডেনসে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে। সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন, হাসি-রসিকতা করছেন। আড্ডা মারতে মারতে টেবিল থেকে অদ্ভুত কায়দায় বিস্কুট মুখে পুরলেন সাকিব, যেন সার্কাসের খেলা দেখাচ্ছেন! বোঝা গেল, ঘোর দুঃসময়ে খুব স্বাভাবিক থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন সাকিব।

সতীর্থদেরও হয়তো সেই বুদ্ধিই দিয়েছেন। স্বাভাবিক থাকাই শুধু নয়, সাকিব বেশ হাসিখুশি, প্রাণবন্ত থাকারও চেষ্টা করছেন। যেন কিচ্ছু হয়নি, কিচ্ছু ঘটেনি—অনেকটা হাঁস যেভাবে পানি থেকে উঠে গা ঝাড়া দেয়, সাকিবও যেন চারদিকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গায়ে মাখতে চাইছেন না। তবে সেদিন নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচে হারের পর ক্রিকেটাররা কতটা ভেঙে পড়েছিলেন, সেটি অস্বীকার করেননি সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই ওদিন সবাই অনেক খারাপ অনুভব করেছে। আসলে খারাপ বোধ করতে থাকলে তো চলবে না। আমরা সবাই বসেছি। যার যার মতো আলোচনা করেছি। যেটা করলে আমাদের ভালো কিছু হতে পারে, সেটা করার চেষ্টা করছি।’ 

গতকাল সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই গুনগুনিয়ে গান গাইলেন সাকিব। আর সিরিয়াস সিরিয়াস সব প্রশ্নে দিলেন সরস উত্তর। এক প্রশ্নকর্তা জানতে চাইলেন, নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে অনেক ভেঙে পড়েছেন মনে হলো। প্রশ্নের উত্তরও দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। সাকিব তাঁর কাছে পাল্টা জানতে চাইলেন, ‘আমার কণ্ঠস্বর কি বদলে গেছে? অন্য রকম মনে হচ্ছে?’ বাংলাদেশ অধিনায়ক পরে যোগ করলেন, ‘এই পরিস্থিতি আমাদের অ্যাকশন (পারফরম্যান্স) দিয়েই বদলানো সম্ভব। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’ 

যে সাকিব বিশ্বকাপ শুরুর পর মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগপর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনে আসেননি, সেই তিনি গত দুই ম্যাচের মধ্যে তিনবার এলেন। আর সাকিবের কথা মানেই সেখানে থাকবে উল্লেখযোগ্য ‘বাইট’ কিংবা ‘অ্যাঙ্গেল’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগে যাকে বলে ‘ভাইরাল আইটেম’! সাকিবের গতকালকের সংবাদ সম্মেলনেও থাকল এমন কিছু উপাদান। 

সাকিব যে কঠিন সময়ে হাসিখুশি থেকে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন, সেটির আরেকটি উদাহরণ সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্নটা। পাকিস্তানও একাধিক হারে বাংলাদেশের মতো বেশ চাপে আছে। মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে বাংলাদেশ এখানে পাকিস্তানের কাছাকাছি থাকছে। প্রসঙ্গটা আসতেই সহাস্যে সাকিবের উত্তর, ‘একই কথা ওরাও বলতে পারে, আমরা (বাংলাদেশ) ৫টা ম্যাচ হেরে আছি, এটা ওদের সুবিধা কি না।’ ইডেনের সংবাদ সম্মেলনকক্ষে যখন হাসির রোল পড়েছে, সাকিব তখন বললেন, ‘মাঝে মাঝে হাসির দরকার আছে।’ 

হাসির দরকার আছে বটে, কিন্তু বাংলাদেশের দর্শকদের হাসির আসল উপলক্ষই তো এনে দিতে পারছেন না সাকিবরা। বাকি তিন ম্যাচে জয়ের হাসি এনে দিতে কী করণীয়, সেটি নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘যার যার জায়গা থেকে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, কীভাবে ফর্মে ফিরতে পারে। প্রত্যেকে নিজেই পারে নিজেকে ফর্মে ফেরাতে। ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং—যেটাই বলুন। ক্রিকেট যদিও দলীয় খেলা, তবু যার যার মতো পারফর্ম করতে হয়, তারপর দল হিসেবে সমষ্টিগতভাবে পারফর্ম করে। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব কীভাবে নিজেদের মোটিভেট করব। এটা শুধু আমরাই পারি এবং আমাদেরই সেটা করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত