Ajker Patrika

বাংলাদেশ দলকে নিয়ে হতাশার চেয়ে বিরক্তিই বেশি

রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা জাগিয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ। ছবি: ক্রিকইনফো
এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা জাগিয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ। ছবি: ক্রিকইনফো

প্রিয় দল খারাপ খেললে দর্শক-সমর্থকদের মন খারাপ হবে। হতাশায় ডুবে যাবেন। হৃদয় ভাঙার যাতনায় পুড়বেন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে দর্শকদের যতটা না মন খারাপ, তার চেয়ে বেশি যেন তাঁরা ‘বিরক্ত’। যেকোনো দলেরই ভালো-খারাপ সময় থাকে। জয়-পরাজয়ের ধরন থাকে। বাংলাদেশ সহজ ম্যাচকে এমন কঠিন করে ফেলে কিংবা জেতা ম্যাচটা যেভাবে হেরে যায়, তাতে হতাশার চেয়ে বিরক্তিই বেশি লাগে।

পরশু দুবাইয়ে অলিখিত সেমিফাইনালে পাকিস্তানের দেওয়া ১৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের বোলারদের একেবারে খেলা যাচ্ছিল না, তা নয়। অহেতুক তাড়াহুড়া, অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার প্রবণতা, টিম ম্যানেজমেন্টের সঠিক পরিকল্পনার অভাব, একাধিক ক্যাচ হাতছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অধিনায়ক লিটন দাসকে না পাওয়া তো আছেই ব্যর্থতার পেছনে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক। বাংলাদেশ দলের পাকিস্তানি স্পিন পরামর্শক মুশতাক আহমেদ যতই ‘বিলিভ’ বা বিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন দলে যে আমরা পারব; মনে হয় না এই টোটকা খুব একটা কাজে দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ২২ গজে মনের বাঘ তাদের এতটা তাড়া করে, উদ্‌ভ্রান্তের মতো তাঁরা লো স্কোরিং ম্যাচে ঘন ঘন খেলতে চান ঝুঁকিপূর্ণ শট। অথচ শুধু মৌলিক ক্রিকেট খেলে ম্যাচটা স্বচ্ছন্দে বের করে আনা যায়।

ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খানের কাঠগড়ায় অবধারিতভাবে উঠবে ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং। গতকাল দুবাইয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলছিলেন, ‘ব্যাটিংয়ের কারণে এই দুর্ঘটনা। ব্যাটারদের একটু শান্ত থাকতে হতো। কেন এত তাড়াহুড়া? আমরা বড় লক্ষ্য তাড়া করছি না। (তাওহীদ) হৃদয় ছন্দে ফিরেছিল। প্রথম চার ব্যাটারের মধ্যে যদি দুজন রান করে, তাহলেই জয়টা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটারদের মাইন্ডসেট আরও ভালো করতে হবে। এই এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তি সাইফ হাসান কিন্তু বেসিক ক্রিকেটই খেলেছে, তাঁর ৬২ শতাংশ শট এসেছে ভি-জোন থেকে। অতিরিক্ত ইম্প্রোভাইজিং শট না খেলেও রান করা যায় টি-টোয়েন্টিতে।’

পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামও প্রায় একই কথা বললেন পরশু ম্যাচ শেষে, ‘ব্যাটিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। বাজে শট খেলেছে তারা। পাশাপাশি অধিনায়ক লিটন দাসকে বাংলাদেশ বেশ মিস করেছে। দারুণ ফর্মে ছিল সে। লিটন যে চোট পেয়েছে, সেটা কারও নিয়ন্ত্রণে ছিল না। বাংলাদেশ হেরে গেছে এখানেই।’

লিটন চোটে পড়ায় যেভাবে জাকের আলীকে অধিনায়ক করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়া নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। আতহার প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রায় প্রতি ম্যাচে বাংলাদেশ পরিবর্তন এনেছে। আতহার মনে করেন, ঘন ঘন এত পরিবর্তন দরকার ছিল না, ‘টিম প্ল্যানিংয়ের কথা বলতে হবে। ৬ ম্যাচে ১৬ পরিবর্তন। এটা কিছুটা ধাক্কা খাওয়ার মতো। পেসারদের একটা করে ম্যাচ খেলিয়েই বিশ্রাম দেয়। সতেজ রাখতে বিশ্রাম নীতি। কিন্তু যখন জানি, তাসকিন একজন ম্যাচজয়ী বোলার, তাকে নিয়মিত খেলানো হয়নি। শেখ মেহেদীকে নিয়মিত খেলানো হয়নি। যখন দল ভালো খেলে, তখন দলকে বেশি নড়াচড়া করা ঠিক না। এক-দুইটা প্রয়োজনে পরিবর্তন করা যায়। নিজের সেরা খেলোয়াড়দেরই নিয়মিত খেলানো উচিত। কারণ, এটা এশিয়া কাপের মঞ্চ। অনেক সময় ডানহাতি, বাঁহাতি, টিম কম্বিনেশনের কারণে গ্রহণযোগ্য হতে পারে পরিবর্তন। তাই বলে ১৬টা পরিবর্তন? এটা মানা কঠিন।’

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বোলাররা অসাধারণ পারফর্ম করেছেন। তাতে আরও অনেকের মতো মুগ্ধ ওয়াসিম। তাসকিন, মোস্তাফিজ ও রিশাদকে নিয়ে স্তুতি ঝরল পাকিস্তানি কিংবদন্তির কণ্ঠে, ‘তাসকিন-মোস্তাফিজ দারুণ করেছে। অবশ্যই রিশাদের কথা বলতে হবে। এ বছর আমি তাকে পিএসএলে লাহোর কালান্দার্সে দেখেছি। দারুণ বোলিং করেছে। খুব ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার। দুর্দান্ত ফিল্ডার। ওর ভালো ভবিষ্যৎ আছে।’

রিশাদের মতো এ রকম প্রতিভা কম আসেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে। কিন্তু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কী মূল্য, যখন দল বড় মঞ্চে পায় না বড় সাফল্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত