Ajker Patrika

এই সোহান ছিলেন উপেক্ষিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি খেলে তিনটিতেই অপরাজিত নুরুল হাসান সোহান। ছবি: ক্রিকইনফো
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি খেলে তিনটিতেই অপরাজিত নুরুল হাসান সোহান। ছবি: ক্রিকইনফো

নুরুল হাসান সোহান আপাতত ফেসবুক থেকে দূরে আছেন। খেলায় ব্যর্থ হলে এখন সামাজিক যোগাযোগের প্রতিটি মাধ্যমে এতটাই বিষাক্ত ট্রল হয়, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের। মনোযোগটা শুধু খেলায় রাখতে সোহান নিজেকে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রাখছেন। তাতে ভালো ফলও তিনি পাচ্ছেন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলতি টি-টোয়েন্টি সিরিজে সেই ‘ফিনিশার’ সোহানকে দেখা যাচ্ছে। শারজায় এক ম্যাচ বাকি থাকতে বাংলাদেশ যে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা মুঠোয় পুরে নিয়েছে, তাতে বড় অবদান ৩১ বছর বয়সী উইকেটকিপার ব্যাটারের। সোহানের নামের পাশে ‘উইকেটকিপার ব্যাটার’ ব্যবহারে একটু খটকা লাগবে। এশিয়া কাপ দিয়ে তিনি যে দীর্ঘ তিন বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন শুধু লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে। গত মাসে এশিয়া কাপের দল ঘোষণার সময়েই প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, নিয়মিত উইকেটকিপার ব্যাটার লিটন দাস ও জাকের আলী অনিকের বিকল্প হিসেবে সোহানকে দলে নেওয়া হচ্ছে।

১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ে সোহানের এ রকম ‘বিকল্প’ হিসেবে কেটেছে। বিচলিত না হয়ে বিষয়টি তিনি ‘জীবনের অংশ’ হিসেবে দেখেন। সে কারণে এশিয়া কাপের অধিকাংশ সময় বসে কাটালেও হতাশ হননি; বরং সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছেন। যে যৎসামান্য সুযোগ পেয়েছেন, নিজেকে পুরোটা মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবু পরের ম্যাচে বাদ পড়েছেন। আবুধাবিতে এশিয়া কাপের গ্রুপপর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে ভালোর শুরুর পরও বাংলাদেশের ১৫০ পেরোনো স্কোর পাওয়া কষ্ট হচ্ছিল। সেটি শেষ পর্যন্ত হয়েছিল সোহানের ৬ বলে অপরাজিত ১২ রানের সৌজন্যে।

এশিয়া কাপে সুপার ফোরে প্রথম দুই ম্যাচে বসে থাকলেন সাইড বেঞ্চে। ভারত ম্যাচের আগে বাংলাদেশ যে একদিন অনুশীলন করেছে আইসিসি একাডেমি মাঠে, সেদিন সোহানকে নেটেও ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি। তাতে পরিষ্কার বার্তা মিলছিল, এশিয়া কাপটা ‘শিক্ষা সফর’ই হতে যাচ্ছে অভিজ্ঞ ব্যাটারের কাছে। লিটন দাসের চোট তাঁকে সুযোগ করে দেয় পাকিস্তান ম্যাচে। হুট করে একাদশে ফিরে চাপের ম্যাচে আর দলকে জেতাতে পারেননি।

Sohan

তবে ফিনিশার সোহানকে দেখা গেল এশিয়া কাপের পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে। গত পরশু ১৪৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১২৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলার বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেয়েছে সোহানের অপরাজিত ২১ বলে ৩১ রানের সৌজন্যে। তার আগে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুই ওপেনার উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার পরও বাংলাদেশ পড়ে যায় ব্যাটিং বিপর্যয়ে। ভয় ধরিয়ে দেওয়া সেই ধস সামলে দলকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে গেছে সোহানের অপরাজিত ২৩ রান (১৩ বল)। গত মাসে সিলেটে নেদারল্যান্ডস সিরিজ দিয়ে ফেরার পর সোহান যে ৫ ম্যাচ খেলেছেন, ৪টিতেই অপরাজিত, দুর্দান্ত ফিনিশার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আফগানদের বিপক্ষে এখনো যে ৩ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, কোনোটিতেই রশিদ-মুজিবরা আউট করতে পারেননি তাঁকে।

চাপের মুহূর্তে ভেঙে না পড়ে সোহান যেভাবে ম্যাচ ফিনিশ করে আসছেন, তাতে প্রশংসা ঝরেছে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের কণ্ঠে। আফগানদের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আজ (গত পরশু) সোহান দারুণ খেলেছে। এমন সময় জাকের-শামীম ফিরে গেল। এমন অবস্থা থেকে সে খেলাটা শেষ করে এল। ব্যাটারদের থেকে এমন কিছুই চাই আমি। যখনই সুযোগ আসবে, যেন দায়িত্ব নিয়ে আমাদের ম্যাচ জেতায়।’

সোহানের এই পারফরম্যান্সই একটি বিতর্ক উসকে দিচ্ছে, লিটনের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বে ও উইকেটকিপিংয়ে জাকেরের চেয়ে সোহানই কি সেরা পছন্দ হতে পারত না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত