জাহাঙ্গীর আলম
পাঁচ জোড়া চোখ, শরীরের ওপরে ঘোড়ার খুরের মতো শক্ত আবরণ, আর ছোট্ট একটি লেজ—যেন এক ভিনগ্রহের প্রাণী! এটিই রাজকাঁকড়া, ইংরেজিতে বলে ‘হর্স হো ক্র্যাব’।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রজাতিটি ৩০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে বিচরণ করছে। এ কারণেই এটিকে বলা হয় ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’।
এক সময় সমুদ্রে ব্যাপক বিচরণ ছিল এই কাঁকড়ার। তবে মানুষের কারণে এরা এখন বিপন্ন। বলতে গেলে, মানুষের জীবন রক্ষা করতে এরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছে!
এটা কিন্তু হেঁয়ালি নয়, সত্যি। মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধকের পেছনে এই কাঁকড়ার অবদান এখনো অবিকল্প।
নতুন আবিষ্কৃত কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক টিকা মানুষের শরীরের জন্য কতটা নিরাপদ, সেটি যাচাই করতে লাগে রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত। অবিশ্বাস্য শোনালেও এই কাঁকড়ার রক্তের রং ফ্যাকাশে নীল। বেশ কয়েক দশক ধরেই ইউরোপ ও আমেরিকার বহু গবেষণাগারে এই নীল রক্তের ব্যবহার হয়ে আসছে।
এই কাজে প্রতি বছর লাখ লাখ রাজকাঁকড়া শিকার করে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণাগারে। সেখানে কাঁকড়াগুলোর হৃৎপিণ্ডের কাছের একটি শিরা কেটে নিংড়ে নেওয়া হয় রক্ত। এরপর সেটিকে আবার সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কোনো রোগের জন্য আবিষ্কৃত ওষুধে বিপজ্জনক কোনো ব্যাকটেরিয়া আছে কি না—সেটি যাচাই করতে দরকার পড়ে রাজকাঁকড়ার নীল রক্তের। এখন পর্যন্ত একমাত্র রাজকাঁকড়ার রক্ত এই যাচাইয়ের কাজটি নিখুঁতভাবে করতে পারে। কারণ, এই রক্ত সামান্য উপাদানগত পরিবর্তনে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড টিকা তৈরিতেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর এভাবে লাখ লাখ রাজকাঁকড়া ধরা হচ্ছে এবং তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ক্ষত তৈরি করে দোহন করা হচ্ছে রক্ত। রক্ত সংগ্রহের এই নিষ্ঠুর প্রক্রিয়াটি তাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে—সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রথম যখন পদ্ধতিটির ব্যবহার শুরু হয় তখন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, রক্ত নেওয়ার পর প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া প্রায় সব কাঁকড়াই অক্ষত থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্ত নিংড়ে নেওয়া রাজকাঁকড়াদের ৩০ শতাংশ আর বাঁচে না। আরও বিপজ্জনক বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া স্ত্রী কাঁকড়াগুলো আর কখনোই প্রজননে ইচ্ছুক হয় না—এমন সম্ভাবনা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক দলের তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ রাজকাঁকড়ার রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত নিয়ে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার পর তাদের জীবনযাপন স্বাভাবিক থাকে কি না তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী বড় বড় সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান বলে, রাজকাঁকড়ার সংখ্যা কয়েক বছর ধরে মোটামুটি একই রকম আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজকাঁকড়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায়-বিপন্ন প্রজাতির কাছাকাছি হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাহলে এর বিকল্প কি কখনোই আসবে না! মানুষের জীবন রক্ষার অজুহাতে এই নিষ্ঠুরতা অনন্তকাল চলতে থাকবে?
আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিকল্প রাসায়নিক ইউরোপে ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সেটি এখনো ততটা আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তা ছাড়া রাজকাঁকড়া পৃথিবীর প্রায় সবখানে পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতার কারণেই ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বিকল্প খোঁজার গরজ করছে না। অবশ্য একটি বিকল্প ইউরোপে ২০১৬ সালে অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংস্থাও এতে যুক্ত হয়েছে।
পরিবেশবিদদের এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় রাজকাঁকড়ার সংখ্যা। কারণ এরা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মানুষের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতেই হবে।
সূত্র: বিবিসি
পাঁচ জোড়া চোখ, শরীরের ওপরে ঘোড়ার খুরের মতো শক্ত আবরণ, আর ছোট্ট একটি লেজ—যেন এক ভিনগ্রহের প্রাণী! এটিই রাজকাঁকড়া, ইংরেজিতে বলে ‘হর্স হো ক্র্যাব’।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রজাতিটি ৩০ কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে বিচরণ করছে। এ কারণেই এটিকে বলা হয় ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’।
এক সময় সমুদ্রে ব্যাপক বিচরণ ছিল এই কাঁকড়ার। তবে মানুষের কারণে এরা এখন বিপন্ন। বলতে গেলে, মানুষের জীবন রক্ষা করতে এরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছে!
এটা কিন্তু হেঁয়ালি নয়, সত্যি। মানুষের জীবন রক্ষাকারী প্রতিষেধকের পেছনে এই কাঁকড়ার অবদান এখনো অবিকল্প।
নতুন আবিষ্কৃত কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক টিকা মানুষের শরীরের জন্য কতটা নিরাপদ, সেটি যাচাই করতে লাগে রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত। অবিশ্বাস্য শোনালেও এই কাঁকড়ার রক্তের রং ফ্যাকাশে নীল। বেশ কয়েক দশক ধরেই ইউরোপ ও আমেরিকার বহু গবেষণাগারে এই নীল রক্তের ব্যবহার হয়ে আসছে।
এই কাজে প্রতি বছর লাখ লাখ রাজকাঁকড়া শিকার করে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণাগারে। সেখানে কাঁকড়াগুলোর হৃৎপিণ্ডের কাছের একটি শিরা কেটে নিংড়ে নেওয়া হয় রক্ত। এরপর সেটিকে আবার সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কোনো রোগের জন্য আবিষ্কৃত ওষুধে বিপজ্জনক কোনো ব্যাকটেরিয়া আছে কি না—সেটি যাচাই করতে দরকার পড়ে রাজকাঁকড়ার নীল রক্তের। এখন পর্যন্ত একমাত্র রাজকাঁকড়ার রক্ত এই যাচাইয়ের কাজটি নিখুঁতভাবে করতে পারে। কারণ, এই রক্ত সামান্য উপাদানগত পরিবর্তনে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখায়। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড টিকা তৈরিতেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রতি বছর এভাবে লাখ লাখ রাজকাঁকড়া ধরা হচ্ছে এবং তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ক্ষত তৈরি করে দোহন করা হচ্ছে রক্ত। রক্ত সংগ্রহের এই নিষ্ঠুর প্রক্রিয়াটি তাদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে—সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রথম যখন পদ্ধতিটির ব্যবহার শুরু হয় তখন বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন, রক্ত নেওয়ার পর প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া প্রায় সব কাঁকড়াই অক্ষত থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্ত নিংড়ে নেওয়া রাজকাঁকড়াদের ৩০ শতাংশ আর বাঁচে না। আরও বিপজ্জনক বিষয় হলো, এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া স্ত্রী কাঁকড়াগুলো আর কখনোই প্রজননে ইচ্ছুক হয় না—এমন সম্ভাবনা বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক দলের তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ রাজকাঁকড়ার রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্ত নিয়ে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার পর তাদের জীবনযাপন স্বাভাবিক থাকে কি না তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
যদিও ওষুধ প্রস্তুতকারী বড় বড় সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান বলে, রাজকাঁকড়ার সংখ্যা কয়েক বছর ধরে মোটামুটি একই রকম আছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রাজকাঁকড়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায়-বিপন্ন প্রজাতির কাছাকাছি হিসেবে গণ্য করা হয়।
তাহলে এর বিকল্প কি কখনোই আসবে না! মানুষের জীবন রক্ষার অজুহাতে এই নিষ্ঠুরতা অনন্তকাল চলতে থাকবে?
আশার কথা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিকল্প রাসায়নিক ইউরোপে ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে সেটি এখনো ততটা আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তা ছাড়া রাজকাঁকড়া পৃথিবীর প্রায় সবখানে পাওয়া যায়। এই সহজলভ্যতার কারণেই ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো বিকল্প খোঁজার গরজ করছে না। অবশ্য একটি বিকল্প ইউরোপে ২০১৬ সালে অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংস্থাও এতে যুক্ত হয়েছে।
পরিবেশবিদদের এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় রাজকাঁকড়ার সংখ্যা। কারণ এরা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মানুষের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতেই হবে।
সূত্র: বিবিসি
চাঁদে মরিচা ধরছে। আর এর জন্য দায়ী আমাদের পৃথিবী। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমনই এক চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাঁদের গবেষণায় দেখা , পৃথিবী থেকে চাঁদের দিকে ছুটে যাওয়া অক্সিজেন কণার প্রভাবে চাঁদের খনিজ পদার্থ হেমাটাইটে (haematite) রূপান্তরিত হচ্ছে।
১৬ ঘণ্টা আগেঅর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় (৫৩ বছর) পর আবারও চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করতে চলেছে মানবজাতি। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে আর্টেমিস ২ নামের এই মিশনে চারজন নভোচারী চাঁদকে ঘিরে ১০ দিনের মিশনে অংশ নেবেন। ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭-এর পর এই প্রথম কোনো নভোচারী পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের বাইরে পা রাখবেন।
২ দিন আগেপ্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের রাজত্বের অবসান হয় এক ভয়ংকর গ্রহাণু আছড়ে পড়ার মাধ্যমে। প্রায় ১২ কিলোমিটার প্রস্থের একটি গ্রহাণু ঘণ্টায় প্রায় ৪৩ হাজার কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীতে আঘাত হানে। এই সংঘর্ষের ফলে একের পর এক প্রাণঘাতী ঘটনা শুরু হয়। এটি শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রজ
৩ দিন আগেপ্রাচীন মিসরীয়রা তাদের পিরামিডগুলোকে সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে অনেকেই মনে করেন বহিরাগতদের ঠেকাতে তারা পিরামিডের ভেতর ফাঁদ তৈরি করে রাখতেন। এই তথ্য কতটুকু সত্য তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্স।
৪ দিন আগে