রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা
গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে দেশের রাজনীতির। বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কও। ক্ষমতায় যাওয়ার মিশনে হিসাব-নিকাশের পাল্লায় শত্রু হয়ে যাচ্ছে মিত্র, আবার পরীক্ষিত মিত্রও আবির্ভূত হচ্ছে শত্রুর ভূমিকায়। আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে দেশের প্রধান দুই শক্তি বিএনপি ও জামায়াতের বর্তমান সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল দুটির মুখোমুখি অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থান সংঘাতময় পরিবেশের জন্ম দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর থেকে রাজনীতিতে সমানতালে সরব রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল দুটির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় সব ইস্যুতেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এবং জড়াচ্ছে তারা। কোনো বিষয়েই এতটুকু ছাড় দিচ্ছে না কেউ কাউকে। সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগের পর থেকে এই দ্বন্দ্ব আরও খোলামেলা হয়। দুই দলের দ্বন্দ্ব এখন আলোচনার টেবিল থেকে মাঠের কর্মসূচিতে গড়িয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মধ্যেই জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ পাঁচ দাবিতে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি দলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় আলোচনার টেবিলে সম্ভব নয় বলেই দাবি আদায়ে তারা রাস্তায় নেমেছে।
জামায়াতের কর্মসূচি পালন নিয়েও কথার লড়াই চলছে। সরকারের ঘোষিত সময় অনুযায়ী নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই লড়াই আরও জমে উঠছে। এত দিন ধরে বিএনপিকে ক্ষমতার দাবিদার মনে করা হলেও এখন জামায়াতও নিজেদের সেই অবস্থানে ভাবতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে জামায়াতের সমাবেশে দলটির আঞ্চলিক পরিচালক মুহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে, বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে।
জামায়াত নেতার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা হচ্ছে এই মুহূর্তে। জামায়াতের এমন আত্মবিশ্বাসের পেছনে কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, পটপরিবর্তনের পর জামায়াত নিজেদের নানাভাবে গুছিয়ে নিয়েছে, তারা ধীরে ধীরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়ের ধারাবাহিকতা দলটিকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
অন্যদিকে গত এক বছরে নানা অপকর্মের অভিযোগে ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নানাভাবে তাদের ভাবমূর্তি খুইয়েছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে।
এতে জামায়াতের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
তবে এমনটা মানতে নারাজ বিএনপির নেতারা। তাঁরা বলছেন, বিএনপিকে নিয়ে জামায়াতসহ তাদের বলয়ের দল ও সংগঠনগুলো অপপ্রচার করছে। বিএনপির বিপুল জনসমর্থনের বিপরীতে তারা ভোটের মাঠে ভালো করতে পারবে না বলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি চাচ্ছে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির মতো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। শেষ বিচারে জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে পা না দিয়ে জনগণ বিএনপিকেই রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে বেছে নেবে বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা। এ অবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আত্মবিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিএনপিও। একই সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মধ্যে রাজপথের কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।
গত শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় জামায়াতের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তো ভাইসব, আপনারা কি নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিএনপি বিরোধী দলে যাবে, নাকি জনগণ করবে? আমার জবাব হলো, আপনারা যখন এত বেশি আত্মবিশ্বাসী হলেন যে সরকারি দল হবেন, তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে এই বাহানা, পরশু এই বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কী, সেটা তো আমরা জানি...আরও কিছুদিন পরে বলব।’
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক এমপি নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ছাত্রশিবিরের ‘হেলমেট বাহিনী’ ছিল। একই সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকেও তারা হত্যা করেছে।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপি নেত্রীর এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী এমন অবস্থান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। তাঁদের অনেকে বলছেন, বিএনপি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল। জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ডানপন্থী। এখানে আদর্শিক মেরুকরণ আছে; যার হাত ধরে পরস্পরবিরোধী পাল্টাপাল্টি অবস্থান বা জনগণকে হিংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শারমীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মাঠ আরও কিছুদিন অস্থিতিশীল থাকবে। দলগুলো নিজ আদর্শকে মাথায় রেখে যে কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক মাঠ এখন উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি উত্তপ্ত হবে।
আবার বিশ্লেষকদের কারও কারও অভিমত, রাজনীতিতে চিরবন্ধু বা চিরশত্রু বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক আদর্শের ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্নতা রয়েছে। রাজনৈতিক গাঁটছড়া থাকলে যে দুজন সব সময় একসঙ্গে থাকবে, তা নয়। কারণ, দুটি দলেরই লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে যার মতো চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে রাজনৈতিক বৈরিতা বলতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, এটা তাদের পরস্পরের স্বতন্ত্র অবস্থান। এখানে জামায়াতের রাজনীতি জামায়াত করছে, বিএনপির রাজনীতি বিএনপি। সেটা করতে একপক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ (কথার) করতেই পারে। এর মধ্যে রাজনৈতিক ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। বিএনপির নীতির সমালোচনা জামায়াত করতেই পারে, পক্ষান্তরে জামায়াতের নীতির সমালোচনাও বিএনপি করতেই পারে।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল রোববার নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াত ও এনসিপির আরও দুই নেতা যুক্ত হবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, সফরকালে তিন দলের নেতারা দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকবেন। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এতে রাজনৈতিক জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজও থাকবেন। সেখানে তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠক হলেও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে দেশের রাজনীতির। বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কও। ক্ষমতায় যাওয়ার মিশনে হিসাব-নিকাশের পাল্লায় শত্রু হয়ে যাচ্ছে মিত্র, আবার পরীক্ষিত মিত্রও আবির্ভূত হচ্ছে শত্রুর ভূমিকায়। আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে দেশের প্রধান দুই শক্তি বিএনপি ও জামায়াতের বর্তমান সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দল দুটির মুখোমুখি অবস্থানে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থান সংঘাতময় পরিবেশের জন্ম দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর থেকে রাজনীতিতে সমানতালে সরব রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দল দুটির কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় সব ইস্যুতেই দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে এবং জড়াচ্ছে তারা। কোনো বিষয়েই এতটুকু ছাড় দিচ্ছে না কেউ কাউকে। সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগের পর থেকে এই দ্বন্দ্ব আরও খোলামেলা হয়। দুই দলের দ্বন্দ্ব এখন আলোচনার টেবিল থেকে মাঠের কর্মসূচিতে গড়িয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মধ্যেই জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ পাঁচ দাবিতে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি দলকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় আলোচনার টেবিলে সম্ভব নয় বলেই দাবি আদায়ে তারা রাস্তায় নেমেছে।
জামায়াতের কর্মসূচি পালন নিয়েও কথার লড়াই চলছে। সরকারের ঘোষিত সময় অনুযায়ী নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, এই লড়াই আরও জমে উঠছে। এত দিন ধরে বিএনপিকে ক্ষমতার দাবিদার মনে করা হলেও এখন জামায়াতও নিজেদের সেই অবস্থানে ভাবতে শুরু করেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে জামায়াতের সমাবেশে দলটির আঞ্চলিক পরিচালক মুহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে, বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে।
জামায়াত নেতার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চা হচ্ছে এই মুহূর্তে। জামায়াতের এমন আত্মবিশ্বাসের পেছনে কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, পটপরিবর্তনের পর জামায়াত নিজেদের নানাভাবে গুছিয়ে নিয়েছে, তারা ধীরে ধীরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়ের ধারাবাহিকতা দলটিকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।
অন্যদিকে গত এক বছরে নানা অপকর্মের অভিযোগে ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নানাভাবে তাদের ভাবমূর্তি খুইয়েছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে।
এতে জামায়াতের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
তবে এমনটা মানতে নারাজ বিএনপির নেতারা। তাঁরা বলছেন, বিএনপিকে নিয়ে জামায়াতসহ তাদের বলয়ের দল ও সংগঠনগুলো অপপ্রচার করছে। বিএনপির বিপুল জনসমর্থনের বিপরীতে তারা ভোটের মাঠে ভালো করতে পারবে না বলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি চাচ্ছে, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির মতো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। শেষ বিচারে জামায়াত-শিবিরের ফাঁদে পা না দিয়ে জনগণ বিএনপিকেই রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে বেছে নেবে বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা। এ অবস্থায় ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আত্মবিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিএনপিও। একই সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মধ্যে রাজপথের কর্মসূচি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতারা।
গত শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় জামায়াতের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তো ভাইসব, আপনারা কি নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিএনপি বিরোধী দলে যাবে, নাকি জনগণ করবে? আমার জবাব হলো, আপনারা যখন এত বেশি আত্মবিশ্বাসী হলেন যে সরকারি দল হবেন, তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে এই বাহানা, পরশু এই বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কী, সেটা তো আমরা জানি...আরও কিছুদিন পরে বলব।’
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সহসম্পাদক ও সাবেক এমপি নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ছাত্রশিবিরের ‘হেলমেট বাহিনী’ ছিল। একই সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকেও তারা হত্যা করেছে।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিএনপি নেত্রীর এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী এমন অবস্থান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে। তাঁদের অনেকে বলছেন, বিএনপি মধ্যমপন্থী রাজনৈতিক দল। জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ডানপন্থী। এখানে আদর্শিক মেরুকরণ আছে; যার হাত ধরে পরস্পরবিরোধী পাল্টাপাল্টি অবস্থান বা জনগণকে হিংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারম্যান শারমীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মাঠ আরও কিছুদিন অস্থিতিশীল থাকবে। দলগুলো নিজ আদর্শকে মাথায় রেখে যে কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক মাঠ এখন উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি উত্তপ্ত হবে।
আবার বিশ্লেষকদের কারও কারও অভিমত, রাজনীতিতে চিরবন্ধু বা চিরশত্রু বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক আদর্শের ক্ষেত্রে বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্নতা রয়েছে। রাজনৈতিক গাঁটছড়া থাকলে যে দুজন সব সময় একসঙ্গে থাকবে, তা নয়। কারণ, দুটি দলেরই লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে যার মতো চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে রাজনৈতিক বৈরিতা বলতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, এটা তাদের পরস্পরের স্বতন্ত্র অবস্থান। এখানে জামায়াতের রাজনীতি জামায়াত করছে, বিএনপির রাজনীতি বিএনপি। সেটা করতে একপক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ (কথার) করতেই পারে। এর মধ্যে রাজনৈতিক ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। বিএনপির নীতির সমালোচনা জামায়াত করতেই পারে, পক্ষান্তরে জামায়াতের নীতির সমালোচনাও বিএনপি করতেই পারে।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল রোববার নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াত ও এনসিপির আরও দুই নেতা যুক্ত হবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, সফরকালে তিন দলের নেতারা দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকবেন। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। এতে রাজনৈতিক জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজও থাকবেন। সেখানে তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠক হলেও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় শোষণ ও বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি তাদের ত্রয়োদশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক...
১৫ ঘণ্টা আগেপ্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান সামনে রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ স্থগিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
১৫ ঘণ্টা আগেরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল ও শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবির বলছে, পোষ্য কোটা পুনর্বহাল ও শিক্ষক হেনস্তার ঘটনাটি রাকসু নির্বাচন বানচালের একটি ষড়যন্ত্র। আজ রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে দলটির কেন্দ্রীয়
১৭ ঘণ্টা আগেএকটি মহল কিছু দলকে মাঠে নামিয়ে নির্বাচন বানচালের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেছেন, যে মহল নির্বাচন বানচালের সঙ্গে জড়িত, তারাই ২০১৪-এর নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে বাধা দিয়েছিল।
১৮ ঘণ্টা আগে