Ajker Patrika

গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করার আলামত দেখতে পাচ্ছি: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করার আলামত দেখতে পাচ্ছি: তারেক রহমান

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যাতে কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার এজেন্ডা সেটিং—এর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তি নির্ধারণ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্রকারী নানা চক্র সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। এর মধ্যে কিছু কিছু আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি।’ 

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তারেক রহমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে লক্ষ-কোটি জনতার অভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সকলের কাছে সাফল্য হিসেবে হয়তো বিবেচিত নাও হতে পারে। কিন্তু এটি আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা, বাংলাদেশের পক্ষে গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। সুতরাং, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে এবং বিদেশে নানারকম উসকানিতেও জনগণ এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকার যেন নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।’ 
 
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেট হওয়া জরুরি। এ জন্যই আমরা মনে করি, অগ্রাধিকারভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে জবাবদিহিমূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া সংস্কারের কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন, গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনটিতেই টেকসই এবং কার্যকর হয় না।’ 

তিনি বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি ভোটারের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করে তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচিত করার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসনে সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্ষম এবং উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ 

বর্তমান সরকারকে আশ্বস্ত করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা যে কোনো দেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। জনগণ এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে এবং রাখবে।’ 

বিগত সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১৫ বছর বাংলাদেশের মাফিয়ার শাসন চালু করা হয়েছিল। দেশে-বিদেশে সেই সরকারের পরিচয় হয়েছিল গভর্নমেন্ট অব দ্য মাফিয়া, ফর দ্য মাফিয়া, বাই দ্য মাফিয়া। এই মাফিয়াচক্র দেশকে সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর করে দিয়েছিল। এই চক্রের পতন হলেও তাদের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল এখনো দূর হয়নি। এই জঞ্জাল দূর করে জবাবদিহিমূলক সরকারের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। তবে মাফিয়াচক্রের অপশক্তি অন্তর্বর্তী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’ 

তারেক রহমান বলেন, ‘সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যাই থাকুক জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে না। বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক এবং চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং, রাষ্ট্র এবং রাজনীতি সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচির/আরও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন পরিমার্জনকেও বিএনপি স্বাগত জানায়।’ 
 
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এমনকি কেউ যদি মনে করেন, একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না। এ কারণেই, বিএনপি বারবার জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে, একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই, রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব তৈরি হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি—ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধুই রাষ্ট্র ক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মনে রাখা প্রয়োজন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের আচার-আচরণেও গুণগত পরিবর্তন জরুরি। সুতরাং, আমার আহ্বান কোনো প্রলোভন কিংবা উসকানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখুন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘হাজারো শহীদের রক্তস্নাত এই রাজপথে আজ আপনাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির অর্থ/ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রাপথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে/হয়তো আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসার নয়। সেই পথ হবে ধৈর্য-সহনশীলতা এবং সমঝোতার।’ 

তারেক রহমান এ সময় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সবশেষে, বলতে চাই সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে দেশ। সুতরাং, আসুন, আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণের সঙ্গে থাকি। জনগণকে সঙ্গে রাখি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই: তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে, আঙুল বাঁকা করব; ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট করতে আইনি কোনো বাধা নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকার চালাকি শুরু করেছে মন্তব্য করে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আপনাদের চালাকি আমরা বুঝি। আপনাদের চালাকি করলেও আমরাও প্রতিবাদে দাবি আদায়ের পন্থা আবিষ্কার করব। আমরা এখনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।’

আরও বলেন, ‘গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পরেও গণভোটের সময় থাকবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট দেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজপথে এসেছি। প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব। জুলাইয়ের অর্জন সনদকে ব্যর্থ হতে দেব না।’

সময়ক্ষেপণ সরকারকে বিপদে ফেলবে বলে মন্তব্য করেন নায়েবে আমির।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য বললেই হবে না। বড় দলকে বলব, আপনারা আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করুন। দ্রুত বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য আসুন।’

নির্বাচনের আগে গণভোট এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করেন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত আসেন ৮ দলের নেতা-কর্মীরা। পরে সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।

জামায়াত ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

তাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে— জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১১ নভেম্বরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত, অন্যথায় ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে—সরকারকে গোলাম পরওয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২২
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্বাচনের আগে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত আটটি দল।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর পক্ষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আগামী ১১ তারিখ ঢাকায় আমরা মহাসমাবেশ করব। ১১ তারিখ ঢাকায় লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতির আগে আমাদের পাঁচ দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যথায় সেদিন ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান শেষে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনের আগে গণভোট এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত আসেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক স্মারকলিপি গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দেব না। আমাদের দাবি ছিল, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেব। পরে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।’

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা আট দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আদিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়েছি। শিল্প উপদেষ্টা আমাদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেননি। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের পাঁচ দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।’

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘শিল্প উপদেষ্টা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আলোচনার কথা।’

এ সময় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ের পর আজকের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন গোলাম পরওয়ার।

জামায়াত ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

তাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রয়োজনে নির্বাচন দুই মাস পরে করেন, কিন্তু গণভোট ছাড়া হবে না: গাজী আতাউর রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিগগিরই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দ্রুতই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট এক সঙ্গে হবে না। দুইটার তফসিলও এক সঙ্গে হবে না। আমরা নভেম্বরে গণভোটের বিষয় বারংবার বলেছি। যদি নভেম্বর গণভোট করতে না পারেন তাহলে যেদিনই দেন গণভোট আগে হতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, দুই মাস পরে করেন। কিন্তু গণভোট ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে পাঁচ দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের আগে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপি সংস্কারকে বারংবার বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা রাষ্ট্র সংস্কার চায় না, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চায় না। তাদের সিনিয়র নেতাদের কথাবার্তায় এটা বারংবার স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশকে আর কোনো অবস্থায় আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে দেওয়া যাবে না। তাই সংস্কার করতেই হবে। সে জন্য অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দিতে হবে এবং জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিশ্চিত করতে তফসিলের আগেই গণভোট দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের রাজপথে নামতে হবে, দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে তা আমরা ভাবি নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের বাধ্য করেছে। তাদের তিনটা অঙ্গীকার ছিল। আমরা বলব, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করুন। সংস্কারের জন্য কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, জুলাই সনদ হয়েছে, সনদে সাক্ষর হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়েও সকলে একমত হয়েছে; এখন গড়িমসি কীসের? আগামী ১০ তারিখের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি না হলে আমরা ঢাকায় লোকে লোকারণ্য করে সমাবেশ করব ইনশা আল্লাহ।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা আরও বলেন, ‘যারা বলে সংস্কার চায় না, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলেন? যারা দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, যারা পুরোনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলেন? এটা তামাশা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট করা যাবে: তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা করে গণভোটের আয়োজন করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ‘গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোটের সময় থাকবে। এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট দেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজপথে এসেছি। প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব। জুলাইয়ের অর্জন সনদকে ব্যর্থ হতে দেব না।’

সরকার চালাকি শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা চালাকি করলেও আমরা আমাদের দাবি আদায় করব, দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।’

সময়ক্ষেপণ সরকারকে বিপদে ফেলবে বলে মন্তব্য করেন নায়েবে আমির।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য বললেই হবে না। বড় দলকে বলব, আপনারা আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করুন। দ্রুত বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য আসুন।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত