Ajker Patrika

বিপথগামী ব্যবসায়ী

সম্পাদকীয়
বিপথগামী ব্যবসায়ী

মানিকগঞ্জের এক স্বর্ণকারের মাথায় সোনালি বুদ্ধির ঝলক দেখা গেল! স্বর্ণের কারিগর শুভ দাস শুধু গয়নাই গড়ান না, সোনার দোকানের এই মালিক ‘নাটক’ রচনাতেও নাম লেখালেন ‘বুদ্ধি’ করে। নিজ দোকানে গচ্ছিত সোনা কবজা করে নিতে তিনি সাজালেন ডাকাতির এক মহাকাব্য। এই কাব্যের নাম হলেও হতে পারত—‘ডাকাত নিজেই ভিকটিম’! তবে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টে হয়তো এটি ‘অপারেশন বিপথগামী ব্যবসায়ী’ নামে জনপ্রিয়তা পাবে। কারণ, শুভর সোনালি বুদ্ধির পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ধরা পড়েছেন তিনি।

স্বর্ণকার শুভ দাসের নাম শুনে হয়তো কারও মনে হতে পারে—অলংকার গড়া কেবল ভদ্রলোকের কাজ। কিন্তু দেখা গেল, তিনি শুধু নামেই শুভ, কাজে নন। সোনার চেইন বানাতে তিনি পারদর্শী হতে পারেন, কিন্তু ‘চেইন অব ক্রাইম’ গড়তে গিয়ে ধরা পড়ে গেলেন। মাসখানেক ধরে মোটরসাইকেল মেকানিক আমানত হোসেন রানার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিকল্পনা করছিলেন একটা স্বর্ণমণ্ডিত ডাকাতির নাটকের, যেখানে প্রধান চরিত্র এবং ভিকটিম উভয়ই তিনি!

৪ অক্টোবর, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে নিজ দোকানে শুভ দাস ডাকাতির নাটক সাজিয়ে গ্রাহকদের ৩৯ ভরি ৭ আনা সোনা বাগিয়ে নেন। ৫ লাখ টাকার চুক্তিতে তিনি আমানত ও সোহান নামে দুজনকে ভাড়া করে লুটপাটের নাটক সাজান। ডাকাতিটা যেন নাটক মনে না হয়, তাই স্বর্ণ লুট করে চলে যাওয়ার সময় তারা শুভকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিঠে আঘাত করে যায়।

কিন্তু পুলিশের চোখ যে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ না, তা প্রমাণ করে দিল মানিকগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ। শুভ দাসের ‘অভি অলংকার’ নামের দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশের সন্দেহ হয় এই ডাকাতির ঘটনা পুরোপুরি সাজানো। স্বর্ণ লুটের রাতেই অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। এ পর্যন্ত শুভসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর উদ্ধার করেছে লুট হওয়া স্বর্ণালংকার।

বাংলাদেশে মানুষ নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নানা উপায় খোঁজে—কেউ ছাড় দেয়, কেউ মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এবার বোঝা গেল, লোভে পড়ে কেউ কেউ নিজের কর্মস্থলেই ডাকাতির নাটক সাজায়। অর্থনীতি যখন টলমল, তখন স্বর্ণের মালিকও হয়ে যায় নাট্যকার। এটা ‘টেকসই অপরাধ’ কি না কে জানে!

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুভ দাসকে সমিতি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি স্বর্ণকারপট্টিতে তাঁর ব্যবসাও বন্ধ করা হবে। একটুখানি লোভ কাউকে যদি অপরাধ করতে প্ররোচনা দেয়, তাহলে তার এ রকম পতন হওয়াই অবধারিত।

তাই কারও অর্থের লোভ থাকতে নেই, যা তাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে সুশিক্ষা বা জ্ঞানচর্চার লোভ থাকাটা জরুরি, যা তাকে অপরাধ করতে বাধা দিতে পারে। কোন অপরাধের পরিণতি কী, সে সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে হয়তো কারও বেপথু হতে বুক কাঁপবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট আছে, তারাই অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে: আসিফ

ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ ও চার্চের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

পাকিস্তানের ‘জাফর এক্সপ্রেস’ পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ট্রেন!

পটুয়াখালীতে ক্যাম্পে ঘুমন্ত র‍্যাব সদস্যের মৃত্যু

দান ফেরত নেওয়া ব্যক্তির দৃষ্টান্তে যা বলেছেন নবীজি (সা.)

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত