Ajker Patrika

ধরা পড়লেই হইচই

সম্পাদকীয়
ধরা পড়লেই হইচই

বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর খবর হন এবং তারপর বের হতে থাকে তাঁর নানা অপকর্মের কাহিনি। তিনি কত সম্পদের মালিক, তাঁর কয়টি ফ্ল্যাট, কত একর জমির মালিক তিনি, দেশের বাইরে কোথায় বাড়ি বা কোন ব্যবসায় তাঁর কত বিনিয়োগ আছে, তার বিবরণ এখন বিস্তারিত জানা যাচ্ছে। কিন্তু সোহেল রানা নিশ্চয়ই রাতারাতি এত সব সম্পদের মালিক হননি। তিনি কোনো গুপ্তধনও পাননি। তো, এত দিন তাঁর অপকর্মের কথা কেউ জানল না কেন? শোনা যাচ্ছে, তাঁর অপকর্মের কথা জেনেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নীরব ছিলেন কেন?

একজন পুলিশ পরিদর্শক শত শত কোটি টাকার মালিক হলেন, দামি গাড়িতে চড়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসা করতেন। এসব দেখেও কেন কারও মনে কোনো সন্দেহ তৈরি না হওয়ার কারণ বোধগম্য নয়। আমাদের দেশে ‘শর্ষের মধ্যে ভূত’ বলে একটি কথা আছে। ভূত তাড়ানোর জন্য সরিষা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সরিষার মধ্যেই ভূত বাসা বাঁধলে ভূত তাড়ানো কঠিন হওয়ার বিষয়টি বোঝানোর জন্যই এ প্রবাদটির প্রচলন। অপরাধ দমন করা পুলিশের একটি বড় দায়িত্ব। কিন্তু পুলিশের পোশাক পরে কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়লে অপরাধ দমন দুরূহ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে এখন কে অপরাধী আর কে নয়, তা নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ নিয়ে অনেক রকম নেতিবাচক কথা-কাহিনি চালু থাকলেও সব পুলিশ খারাপ নয়। বিপদ-আপদে পুলিশের কাছেই ছুটে যেতে হয়। পুলিশি রাষ্ট্র যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি পুলিশহীন রাষ্ট্রও এখনো কল্পনা করা যায় না।

সোহেল রানাই প্রথম ব্যক্তি নন, যিনি পুলিশ হয়েও অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের পথে হেঁটেছেন। এর আগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের নাম আলোচনায় এসেছে। তারপরও কেন এমন একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে নজরদারি বাড়েনি, কেন কোন পুলিশ কর্মকর্তা কোথায় কীভাবে অনৈতিক বা অবৈধ কাজে জড়িত হচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না—সেটা এক বড় প্রশ্ন। অনেকের হাঁড়ির খবর রাখা হয়, টেলিফোনে আড়ি পাতা হয়, ক্লুবিহীন অঘটনের সুরাহা করতেও পুলিশের সাফল্য দেখা যায় অথচ নিজ বাহিনীর ব্যাপারে এমন উদাসীনতা কেন, সে প্রশ্নের জবাব বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে চাওয়া নিশ্চয়ই গর্হিত হবে না।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ না উঠলে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সোহেল রানার সম্পৃক্ততার বিষয়টি অজানাই থেকে যেত এবং তিনি তাঁর বিত্তবৈভব বাড়িয়েই চলতেন। সোহেল রানা প্রায় ১০ বছর ধরে ঘুরেফিরে গুলশান এলাকাতেই চাকরি করেছেন। তাঁর খুঁটির জোর কোথায়, সেটাও এখন জানা দরকার। কে বা কারা তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নানা সিন্ডিকেট ও ব্যবসায় জড়াতে সহায়তা করেছেন, নাকি তিনি একাই সবকিছু করেছেন—তার তত্ত্ব তালাশ এখন জরুরি। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে–এটা যেন বারবার দেখতে না হয়। পুলিশে আর কতজন সোহেল রানা আছেন, তার খোঁজখবরে বিলম্ব বা গাফিলতি আমরা আর দেখতে চাই না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত