Ajker Patrika

স্রেফ দুই কিলোমিটার

সম্পাদকীয়
স্রেফ দুই কিলোমিটার

সমুদ্রসৈকতে হলে ভাবা যেত, বিচ-ভলিবলের এক নতুন সংস্করণ বুঝি ঝিনাইদহের এই সড়ক। মাত্র দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তাকে হাঁটুকাদার রাস্তায় পরিণত করা হয়েছে! বোঝা যায়, ভালো কিছুকে খারাপ করার জন্য যতটা মুনশিয়ানা দরকার, তার সবটাই আছে রাস্তা দেখভালকারীদের।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ও শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামের মাঝের রাস্তাটি যদি এখন কেউ দেখতে যান, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তিনি মনে করবেন, এটা সেই আদিকালের মাটির রাস্তা, যে রাস্তায় কোনো এক সময় ঘোড়ার গাড়ি বা গরুর গাড়ি চলত। মনে হতে পারে, প্রবল বর্ষণের কারণে শক্ত রাস্তাটি নরম হয়েছে এবং তা পরিণত হয়েছে কাদার রাজত্বে। একটু খোঁজ করলেই তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করবেন, এই কাদার রাজত্ব আসলে পিচঢালা রাস্তার ছদ্মবেশ। কোনো এককালে খুবই যত্ন করে এই পিচঢালা রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু ১০ বছর ধরে তার কোনো সংস্কার হয়নি। এই সংস্কারহীনতার বলি হয়েছে প্রান্তের দুই মাইল রাস্তা। রাস্তার অন্যান্য অংশ দিব্যি ভালো আছে, এ দুই কিলোমিটার সংস্কার করা হলে চলাচলের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখন দুর্গাপুর ও পিড়াগাতি গ্রামের মাঝের দুই কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে চলতে পারছে না কোনো বাহন! ভাঙাচোরা রাস্তায় রয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। ভারী যানবাহনের কথা বাদই দিলাম, ভ্যান-রিকশাও তো চলতে পারে না এই রাস্তা দিয়ে। এমনকি কেউ যদি হেঁটে পাড়ি দিতে চায় পথটি, তাহলেও সম্ভবত প্রাণটা হাতে করে নিয়ে বের হতে হয়।

গ্রামের মানুষের সহনশীলতা বেশি। চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না, সে কথা তাঁরা জানেন। কিন্তু একেবারেই রদ্দি হয়ে যাওয়া রাস্তার এই অংশ সংস্কার করার ব্যাপারটি তো তাঁদের ‘চাওয়া না-চাওয়া’র ওপর নির্ভর করার কথা নয়। সরকারের এলজিইডি বলে যে একটি দপ্তর আছে, তাদের কাজ নিশ্চয় বসে বসে এই তামাসা দেখা নয়। রাস্তাঘাটের এই হাল হলে তা সারিয়ে তোলার গরজ তো থাকতে হবে এখানকার এলজিইডি দপ্তরের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, কাজ হচ্ছে না—এ রকম কথা চাইলেই বলা যায়। সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যদি ঠিকভাবে বোঝানোই হয়ে থাকে, তাহলে তারা এত দিন ধরে দিবানিদ্রা যাচ্ছে কেন? সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ পাওয়ার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চল কি নেই তাদের? সঙ্গে আরও একটি কথা সংকোচের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই: বরাদ্দ পাওয়ার পর যে ঠিকাদার রাস্তা সংস্কারের কাজ করবেন, তিনি কি বরাদ্দ অর্থের যথার্থ ব্যবহার করবেন? এখানেই একটা শুভংকরের ফাঁকি থাকে, যার শিকার হন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

স্রেফ দুই কিলোমিটার রাস্তার ফেরে পড়ে শৈলকুপা উপজেলার শেষ প্রান্তের মানুষের ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ঝিনাইদহ শহরে যেতে হয়, এটা কোনো কাজের কথা নয়। সরকারি দপ্তরগুলো একটু নড়েচড়ে বসলেই এই সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু তাদের ‘নড়েচড়ে’ বসানোর জন্য যদি বাইরের চাপ লাগে, তাহলে বুঝতে হবে এলজিইডি নামক সরকারি ‘গাড়িটা’ ঠিকভাবে চলছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত