Ajker Patrika

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

আরিফ রহমান, ঝালকাঠি 
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ১৯: ৫৫
তাল গাছটি কেটে ফেলায় বাসা ও ছানা হারাল অসংখ্য বাবুই পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাল গাছটি কেটে ফেলায় বাসা ও ছানা হারাল অসংখ্য বাবুই পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠির সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন গ্রামে একটি তালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই তালগাছে বাসা বেঁধেছিল বেশ কয়েক জোড়া বাবুই পাখি। গাছটি কেটে ফেলে বাবুই পাখির ছানা, ডিম ও বাসা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। গাছটি যারা কেটেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

পূর্ব গুয়াটনের যে তালগাছটি কাটা হয়েছে, সেটি বহু বছর ধরে এলাকায় বাবুই পাখিদের প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। গাছটি কেটে ফেলার ফলে অসংখ্য বাবুইছানা, ডিম ও বাসা মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়। কেটে ফেলা গাছের নিচে পড়ে থাকে আহত ও মৃত পাখির ছানা ও ভাঙা বাসাগুলো।

কবি রজনীকান্ত সেন তার ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় বাবুই পাখির আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়...নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’ কিন্তু আজ মানুষই তাদের সেই স্বাধীনতার ও স্বতঃস্ফূর্ততার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে! মানুষের লোভ ও অসচেতনতার বলি হলো তালগাছটিতে বাসা বাঁধা বাবুই পাখিরা।

তালগাছটি কেটে ফেলায় মারা গেছে অসংখ্য ছানা, ভেঙে গেছে ডিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালগাছটি কেটে ফেলায় মারা গেছে অসংখ্য ছানা, ভেঙে গেছে ডিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী ফকির তাঁর বাড়ির পাশের তালগাছটি ফারুক ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেন। ফারুক ব্যাপারী কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে গাছটি কেটে ফেলেন। স্থানীয় কয়েকজন যুবক ছুটে গিয়ে গাছটি না কাটার অনুরোধ করেছিলেন। এমনকি গাছের মূল্য পরিশোধ করে সেটি সংরক্ষণ করতে চাইলেও তাঁরা কর্ণপাত করেননি।

স্থানীয় সাব্বির ও জাহিদুল বলেন, এই গাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি একটি প্রাণবৈচিত্র্যের কেন্দ্র ছিল। গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির, ডিম, ছানা—সব মিলে এটি ছিল প্রাণের উৎস। যারা এটি কেটেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

তাঁরা জানান, গাছ কাটার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা শুধু কথা অমান্য করেই ক্ষান্ত হননি, বরং চরম দুর্ব্যবহার করেছেন প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে। একপর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে আনা হলেও ততক্ষণে সব শেষ।

তালগাছটি কেটে ফেলায় মারা গেছে অসংখ্য ছানা, ভেঙে গেছে ডিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
তালগাছটি কেটে ফেলায় মারা গেছে অসংখ্য ছানা, ভেঙে গেছে ডিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ শনিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। শেখেরহাট ইউনিয়নের গুয়াটন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি গাছ কাটার পর ঘটনাটি জানতে পারি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বহু পাখির বাসা নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি ইউএনও ম্যাডামকে জানানো হয়েছে এবং তাঁর নির্দেশে গাছটি জব্দ করা হয়েছে।’

ঝালকাঠির সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা) ফরেস্টার মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি একটি বিশাল তালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যার ডালে শত শত বাবুই পাখির বাসা ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ইউএনও ফারহানা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গাছ কাটার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পৃথক মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’

এদিকে গাছ কাটায় জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত