Ajker Patrika

রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত এক শিক্ষক

সম্পাদকীয়
রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত এক শিক্ষক

কোনটা যে তাঁর কাজ, সেটাই বড় রহস্য। তিনি শিক্ষক নাকি রাজনৈতিক নেতা? দেড় বছর পর যখন স্কুল খুলেছে, তখন শিক্ষার্থীদের দেখার জন্য প্রধান শিক্ষকের মন আনচান করবে না? তিনি কি ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিন স্কুলে উপস্থিত থেকে স্কুলের সব কাজে নেতৃত্ব দেবেন না? সেটাই তো হওয়ার কথা।

তবে জনাব নাসির উদ্দিনের জন্য বিষয়টা ভিন্ন। তিনি একজন প্রধান শিক্ষক, কিন্তু ব্যস্ত থাকেন রাজনীতি নিয়ে। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দুধবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন একই সঙ্গে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিও। শিক্ষকতা আর রাজনীতিকে পাল্লায় রাখলে কোন পাল্লাটা ভারী হবে, সেটা অবশ্য তিনি লুকিয়ে রাখেননি। দেড় বছর বন্ধ থাকার পর স্কুলে না গিয়ে তিনি ব্যস্ত আছেন আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করতে। কচি কচি শিক্ষার্থী যদি তাদের প্রধান শিক্ষককে কাছে পেতে চায়, তাহলে স্কুলে না গিয়ে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যাওয়াই উত্তম। তাতে পড়াশোনার প্রশ্নোত্তরের পাশাপাশি রাজনীতির প্রথম পাঠও নেওয়া হয়ে যাবে।

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব কীভাবে তিনি পালন করছেন, সে প্রশ্ন এড়ানো যাবে না। একই সঙ্গে সরকারি চাকরি এবং রাজনীতি করার ক্ষেত্রে তিনি যে কোনো নৈতিক সমস্যা বোধ মনে করেন না, সেটা তো তাঁর কাজের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আর এ কারণেই বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকার চেয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে আনন্দ পাচ্ছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর এই দুই নৌকায় পা দেওয়ার বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নাসির উদ্দিন পাথরঘাটা রোকনপুর রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। কিন্তু নাসির উদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ ছাড়েননি। রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হওয়ায় এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে দুধবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। এরপরও রাজনীতি নিয়ে তাঁর ব্যস্ততা কমেনি। তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত যান না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হলেও নাসির উদ্দিন এসবের কোনো তোয়াক্কা করেন না। কারণ তিনি ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ বিধি ২৫-এ উল্লেখ রয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে বা কোনোভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না।

প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনকে একজন অতিমানব বলে মনে হচ্ছে। চলন্ত দুই নৌকায় পা দিয়ে দিব্যি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন! শাস্তি পাচ্ছেন না। জানা দরকার, কারও মদদ কি পাচ্ছেন?

এমন শিক্ষক যদি দেশে আরও থাকেন তাহলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশা কি দুরাশায় পর্যবসিত হবে না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত