Ajker Patrika

তবুও শিথিল!

সম্পাদকীয়
তবুও শিথিল!

দেশে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সত্ত্বেও ‘কঠোর’ লকডাউন আট দিনের জন্য শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৫ থেকে ২২ জুলাই এই শিথিলতা চলবে। ২৩ জুলাই থেকে আবার কঠোর লকডাউনের কথা জানানো হয়েছে। লকডাউন নিয়ে একধরনের চোর-পুলিশ খেলা আমাদের দেশে প্রায় দেড় বছর ধরেই চলছে। আংশিক লকডাউন, পূর্ণ লকডাউন, কঠোর লকডাউন, শিথিল লকডাউন–কোনোটিতেই মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হয়নি। হ্যাঁ, কিছু মানুষ অবশ্যই আইন ও বিধিবিধান মেনেছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। দিনের পর দিন একধরনের বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। এঁরা জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলেও মাস্ক পরেছেন, ভিড় এড়িয়ে চলেছেন, ঘনঘন সাবান-পানিতে হাত ধুয়েছেন বা হাত স্যানিটাইজ করেছেন। মোটকথা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছেন।

আবার অনেক মানুষই এসব মেনে চলতে একধরনের উদাসীনতা দেখিয়েছেন। তাঁরা কোনো কিছু তোয়াক্কা করেননি, করেন না। বলা হয়, জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষকে বাইরে বের হতে হয়েছে। আমাদের মতো ঘনবসতির দেশে পরিপূর্ণভাবে লকডাউন, আইসোলেশন বা সংগনিরোধ কার্যকর করা সম্ভব নয়।

এর ফল ভালো হয়নি। করোনার প্রথম ঢেউয়ে আমাদের দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় ঢেউ বেশি আগ্রাসী চরিত্রের হয়ে উঠেছে। গত এক মাসে মৃত্যু এবং সংক্রমণ দুটোই বেড়েছে। শুরুতে করোনা দাপট দেখিয়েছে বড় বড় শহরে। এবার ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ জুলাই জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে বলেছেন, ‘সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ঈদুল ফিতরের সময় বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল: কেউ যাতে নিজের জায়গা ছেড়ে না যান। কিন্তু অনেকেই সে কথা না শুনে ছুটে চলে গেছেন। যার ফল হয়েছে সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। তখন সবাই কথা শুনলে করোনা এভাবে ছড়িয়ে পড়ত না–এটাই বাস্তবতা।’

 ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। সরকার জানে, কোনো কঠোরতা দিয়েই মানুষকে নিবৃত্ত করা যাবে না। তাই আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করে গণপরিবহন, ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট, শপিং মল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও খোলা থাকবে। গত দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাউনের সময় জেল-জরিমানা করেও মানুষকে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়নি। সরকার পড়েছে উভয়সংকটে। একসময় বলা হতো: ‘হাকিম নড়বে, তবু হুকুম নড়বে না।’ এখন হাকিম-হুকুম দুটোই নড়ে!

ঈদের আনন্দ মাটি না করার জন্য যে শিথিলতা দেখানো হলো, তার পরিণতি কী হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। শুধু নিজের নয়, আরও অনেক মানুষের জীবন যে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে–সেটা আর কত মৃত্যুর পর আমরা বুঝতে পারব? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত