Ajker Patrika

বাহবা দিতে হলে

সম্পাদকীয়
বাহবা দিতে হলে

খবরটা এরই মধ্যে পড়েছেন অনেকেই। তবু বলি। মহেশখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রীকে তার বাবা-মা সৌদিপ্রবাসী এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। মেয়েটি এই বিয়েতে রাজি ছিল না। সে ভালো ছাত্রী, প্রতি পরীক্ষায় ক্লাসে প্রথম হয়। বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা তার স্বাভাবিক। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে বিয়েতে অনাগ্রহী মেয়েটি বাবা-মাকে বোঝাতে পারেনি। ফলে শেষ ভরসা হিসেবে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলে। ইউএনও মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তার অভিভাবকদের বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হন। মেয়েটি আপাতত বাল্যবিবাহের কবল থেকে রেহাই পেয়েছে, তবে সে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত—এমনটা বলা যাবে না।

বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা অনেক হয়েছে; কিন্তু এই ব্যাধির প্রকোপ কমছে না। একটি মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার আগেই বিয়ে করে স্বামীর সংসারে গিয়ে নিজেই সন্তানের মা হয়ে পড়ে। শিশুর কোলে শিশু! ফলে অপুষ্টি এবং রোগবালাই অনেকের নিত্যসঙ্গী। নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের কারণে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও বাল্যবিবাহ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ঘটেছে—এমন দাবি করা যাবে না। বিভিন্ন নারী ও মানবাধিকার সংগঠন জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ, সরকারের নারীশিক্ষা প্রসারে ইতিবাচক উদ্যোগ, মেয়েদের প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া, দাতা সংস্থাগুলোর এ বিষয়ে অর্থায়ন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ পাস—এত সব উদ্যোগ-আয়োজন সত্ত্বেও বাল্যবিবাহের মাত্রা আশানুরূপ হ্রাস পাওয়ার খবর পাওয়া যায় না। মেয়েশিশুর প্রতি সামাজিক-পারিবারিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অবহেলা-অনাদরের বিষয়টি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বাস্তব কারণে কিছুটা পরিবর্তন এলেও ছেলে আর মেয়ের জগৎ আলাদা করে যে ভেদরেখা আঁকার মানসিক অবস্থান, তার অবসান হয়নি। এটা একটি অব্যাহত সংগ্রাম।

বাল্যবিবাহ কেন দেওয়া হয়? বিভিন্ন গবেষণায় যেসব কারণ সামনে আসে তার মধ্যে অন্যতম হলো দারিদ্র্য এবং নিরাপত্তার অভাব। এ ছাড়া বয়স বাড়লে বেশি যৌতুক লাগার শঙ্কা, পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক চাপ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেও অনেক অভিভাবক কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চান।

মহেশখালীর এই ঘটনা হয়তো বাহবা পাবে সব জায়গায়। বলা হবে, দারুণ একটা কাজ হয়েছে। প্রশংসায় ভরে যাবে মেয়েটির এই পদক্ষেপ। কিছুদিনের জন্য আমরা খতিয়ে দেখব না, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মেয়েদের সম্পর্কে কিংবা মেয়েদের বিয়ের বয়স সম্পর্কে প্রচলিত যে ধারণাগুলো রয়েছে, তা এতটাই পুরুষতান্ত্রিক যে এই ভাবধারা থেকে বের হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি এখনো। এমনকি নারীদের অনেকের মধ্যেও এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা রয়েছে। তাই মহেশখালীর এই সাহসী মেয়েটিকে বাহবা দেওয়ার সময় সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, নারী সম্পর্কে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার যেন অবসান ঘটে। নইলে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত