Ajker Patrika

পবিত্র আশুরা

সম্পাদকীয়
পবিত্র আশুরা

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণ করেন। অন্যায় ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। কারবালা প্রান্তরে তাঁর এই ত্যাগের ইতিহাস গোটা বিশ্বের মুসলমান সম্প্রদায়কে একাত্ম করে।

ইতিহাস বলছে, কারবালা ছিল মুয়াবিয়ার ছেলে ইয়াজিদের অবৈধ ক্ষমতা দখল ও তা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করার ফল। ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর ইয়াজিদ ক্ষমতা ধরে রাখে। মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসানও (রা.) রেহাই পাননি ইয়াজিদ বাহিনীর হাত থেকে। তাঁকেও বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) পরিবার-পরিজন, ৭২ জন সঙ্গীসহ ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। নিষ্ঠুর ইয়াজিদ বাহিনী নারী ও শিশুদেরও পানি পান করতে দেয়নি। ইয়াজিদ বাহিনীর এই নিষ্ঠুরতায় শাহাদতবরণ করেন তাঁরা। তাঁদের এই আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

ইসলামে সুন্নি ও শিয়া দুই মতের মুসলমানের কাছেই আশুরার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কারবালার ইতিহাসের জন্যই নয়, নানা কারণেই দিনটি মুসলমানদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আশুরা বা ১০ মহররম দিনটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকেই পালন করা হয়ে থাকে। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এই দিনে এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। অর্থাৎ, এই দিনটিই হবে কেয়ামতের দিন। মহররমের ১০ তারিখসংশ্লিষ্ট অনেক ঘটনা আছে, যা দিনটিকে মহিমান্বিত করেছে।

প্রতিবছরই এই শোকাবহ দিনটি সারা বিশ্বের মুসলমানরা পালন করেন। ঐতিহ্যগতভাবে শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া মিছিল বের করে দিনটিকে স্মরণ করে থাকে। যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আশুরা পালন করা হয়ে থাকে। শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে সুন্নি সম্প্রদায়ের অনেকেই যোগ দেন। ঢাকায় বের হওয়ার আগে প্রস্তুতিকালে এই ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিলও ২০১৫ সালের এই দিনে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছিল। কয়েকজন হয়েছিলেন হত্যার শিকার। বগুড়ায়ও শিয়া মসজিদে নামাজরত একজন মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছিল। এর পর থেকে সরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আশুরায় যে ত্যাগের চেতনা, সেটাই ধারণ করতে হয় হৃদয়ে। আর সেই ত্যাগই পৃথিবীকে হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত করতে পারে।

সারা বিশ্বই এখন পার করছে সংকটকাল। করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব। সরকার সংক্রমণের আশঙ্কায় এ বছরও তাজিয়া মিছিল বের করার অনুমতি দেয়নি। এটা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলেই আমাদের মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোসেনি দালানের ইমামবাড়া চত্বরে যদি কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখা যায়, তাহলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে না।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামই আশুরার মূল চেতনা। সে সংগ্রাম যেকোনো প্রতিকূল মুহূর্তেও চালিয়ে যেতে হয়। এটাই আশুরার শিক্ষা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায়ও তো আমরা পাই, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া, ক্রন্দন চাহি না।’ ত্যাগই  ন্যায়ের সংগ্রামকে সার্থক করে তুলতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবার পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

পাবনায় বজ্রপাতে ফেটে চিরে গেল মেহগনিগাছ

ঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন

এনসিপি নেতা সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি: শহিদুল আলম

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত