Ajker Patrika

সাংসদের উদ্ভট প্রস্তাব

সম্পাদকীয়
সাংসদের উদ্ভট প্রস্তাব

৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বেকারত্ব লাঘব এবং শিশু নির্যাতন কমানোর লক্ষ্যে একটি উদ্ভট প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বগুড়া থেকে নির্বাচিত সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু, যিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে হেরে গেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঠিকই জিতেছেন। তিনি কোনো দলের প্রার্থী না হয়েও নির্বাচনে জিতে এক অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। এলাকার মানুষ হয়তো তাঁকে খুবই পছন্দ করেন। না হলে তিনি ভোটে জিতলেন কীভাবে? যে নির্বাচনে ডাকসাইটে সব প্রার্থী ধরাশায়ী হয়েছেন, সেই নির্বাচনে জিতে রেজাউল করিম বাবলু জনপ্রিয়তার অনন্য নজির রেখেছেন। এই অতি ‘জনপ্রিয়’ সাংসদ কোনো চাকরিজীবী ছেলে যাতে কোনো চাকরিজীবী মেয়েকে অথবা চাকরিজীবী মেয়ে চাকরিজীবী ছেলেকে বিয়ে করতে না পারেন, তার জন্য আইন পাসের প্রস্তাব করেছেন। এতে নাকি দেশে বেকারত্ব কমবে এবং গৃহকর্মীদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে।

এমন উদ্ভট ও অভিনব চিন্তা একজন সাংসদের মাথায় কী করে আসে, এটা একটি ভাবনার বিষয়। দেশে বেকার সমস্যা আছে। অনেক শিক্ষিত ছেলে ও মেয়ে কাজ না পেয়ে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। এ সমস্যাটি নতুন নয়। সব সক্ষম নারী-পুরুষের জন্য যাঁর যাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরিবর্তে বেকার সমস্যা সমাধানে শিক্ষিত নারী ও পুরুষের বিয়ে বন্ধের বিষয়টি দুনিয়ার আর কোনো দেশের কোনো সাংসদ বা জনপ্রতিনিধি ভেবেছেন বা এমন কথা বলেছেন বলে আগে কখনো শোনা যায়নি। এমনকি আফগানিস্তানের পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচিত তালেবানের মুখ থেকেও এমন কথা বের হয়নি। এমন একটি দূরদর্শী উদ্ভাবনী চিন্তার জন্য সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুকে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা পুরস্কৃত করে বসে কি না, সেটাই এক দুর্ভাবনার বিষয়।

গণতন্ত্রচর্চার প্রাণকেন্দ্র হওয়ার কথা জাতীয় সংসদ। সংসদে জাতীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা, তর্কবিতর্ক হবে এবং ব্যাপক জনগণের স্বার্থে আইন বা নীতি নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সংসদে হয় তোয়াজ-তোষামোদ, না হলে গালাগালি কিংবা হাস্যকর বিষয় নিয়ে আলোচনা। শুধু সরকারি দল নয়, শক্তিশালী বিরোধী দলও একটি কার্যকর সংসদের জন্য জরুরি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল প্রায় নেই হয়ে গেছে। সরকারি দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। তা ছাড়া যাঁরা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের যোগ্যতা, জ্ঞানবুদ্ধি, জনবিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে যাঁরা সাংসদ, তাঁদের মনে রাখা দরকার যে সংসদ অধিবেশন তামাশা করার জায়গা নয়।

সাংসদ বাবলুর প্রস্তাবের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এটা অসাংবিধানিক প্রস্তাব। কীভাবে এই প্রস্তাব এখানে এল বুঝতে পারছি না।’ আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। উনি যা খুশি তা-ই বলতে পারেন।

কিন্তু আমি যা খুশি তা-ই গ্রহণ করতে পারব না।’

আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকায় যে সংসদ অধিবেশন চলে, সেখানে যাচ্ছেতাই কথা বলে লোক হাসানো বন্ধ করে সবারই দায়িত্বশীল কথাবার্তা বলা ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত