Ajker Patrika

ছোট স্বৈরাচার

সম্পাদকীয়
ছোট স্বৈরাচার

ছোট মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু সে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। বিয়ে হলে পড়াশোনা করা যাবে না—এ রকম কোনো আইন নেই এই দেশে। কিন্তু বিয়ের পর যখন ঝিনাইদহের মহেশপুরের ভারত সীমান্তসংলগ্ন স্বরুপপুর-কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েটা ক্লাস করতে গেছে, তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে বের করে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি: বিবাহিত মেয়েদের ক্লাস করতে দেওয়া হবে না।

বাল্যবিবাহকে সমর্থন করার প্রশ্নই আসে না। সেটা প্রতিরোধ করা দরকার। কিন্তু কখনো কখনো বাস্তব পরিস্থিতির কাছে হার মানতে হয়। এই মেয়েটির বিধবা মা-ও সে রকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তিনটি কন্যাসন্তানকে নিয়ে জীবনযাপন করা যে কঠিন, সে কথাও তিনি বলেছেন।

অবাক করা ব্যাপার হলো, শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে চাইছে আর শিক্ষক তাকে পড়াশোনা করতে দেবেন না বলে পণ করে বসে আছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘আমাদের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত, বিবাহিত কোনো ছাত্রীকে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না।’ এর পেছনে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, বিবাহিত ছাত্রীদের ক্লাস করতে দিলে দিনে দিনে নারী শিক্ষার্থী কমতে থাকবে। এই যুক্তিটার কোনো মাথামুণ্ডু নেই। বিয়ের পর সাধারণত শিক্ষা গ্রহণে বাদ সাধা হয়। এখানে শিক্ষার্থীই এগিয়ে এসেছে পড়াশোনার জন্য। অথচ শিক্ষকেরাই তাকে ক্লাসে গ্রহণ করছেন না! আমরা কি এই শিক্ষক এবং এই স্কুলের পরিচালনা কমিটিকে ছোট স্বৈরাচার নামে অভিহিত করতে পারি? সারা দেশের আইনের সঙ্গে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক, সেটা কি তাঁরা একেবারেই বুঝতে পারছেন না? তাঁরা যদি সিদ্ধান্ত নেন, এখন থেকে কোনো মেয়েই স্কুলে যেতে পারবে না, তাহলেও কি তা মেনে নিতে হবে?

আমাদের দেশটি গণপ্রজাতন্ত্রী। রাষ্ট্র পরিচালনার আইন রয়েছে। সেটা মেনে নিয়েই তো চলবে স্কুলের কাজ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যখন মেয়েটিকে ক্লাস করতে দিলেন না, তখন স্কুলের কোনো পর্যায় থেকেই প্রতিবাদ হলো না কেন? সবাই কি একই রকম যান্ত্রিক সংকীর্ণ ভাবনায় সায় দিয়েছেন?

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্কুলের পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অবশ্য প্রধান শিক্ষককে বলে দিয়েছেন, এমনটা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে। এই ছাত্রীর বিষয়টিও সমাধান করতে বলেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও অবাক হয়ে বলেছেন, ‘বিয়ে হয়েছে, আর এ কারণে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেওয়া হবে না—এমন কোনো বিধান বা নিয়ম সরকারের নেই।’

প্রধান শিক্ষক নামক ছোট স্বৈরাচারটি কি নিজের ভুল বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন নাকি একমত না হয়ে মনে দুঃখ পুষে সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন—এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, নারী শিক্ষার্থী সম্পর্কে শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মনস্তত্ত্বে গোলমাল থাকলে এ রকম শিক্ষকেরা বারবার ঔদ্ধত্য দেখাতেই থাকবেন। নারীকে অবজ্ঞা করতেই থাকবেন। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত