Ajker Patrika

অসহায় পিতার নিরুপায় আত্মবিসর্জন

সম্পাদকীয়
অসহায় পিতার নিরুপায় আত্মবিসর্জন

সন্তানের জন্য, তা বাইরে থেকে বোঝার সুযোগ নেই। বাবারা কখনো কখনো নিজের অক্ষমতার লজ্জা ঢাকতে জীবনটিও বিসর্জন দেন সন্তানের জন্য! তবে এমন কিছু বাবা আছেন, যাঁদের অসহায় আত্মবিসর্জন সমাজ ও রাষ্ট্রের যাবতীয় অনিয়মের গালে শক্ত এক চপেটাঘাত হয়ে প্রতিবাদের  স্বাক্ষর রেখে যায়। এমনই এক বাবা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পাঁচআনি গ্রামের এমদাদুল হক, যিনি নিজের সন্তানের চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও তার ব্যবস্থা না হওয়ায় হতাশায় আত্মহত্যা করেছেন। চাকরি হয়নি আবার ধারকর্জ করে দেওয়া টাকা ফেরতও পাননি, এমন হতাশ জীবনের তিক্ততা প্রকাশ করলেন অভিমানী আত্মহত্যায়!

আজকের পত্রিকার খবরে জানা যায়, স্থানীয় হালিমপুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক এমদাদুল হকের চাকরির সুবাদে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো. ছারওয়ার জাহানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ বিশ্বাসে ২০১৮ সালে তিনি নিজের ঊর্ধ্বতন বস মো. ছারওয়ার জাহানকে ১০ লাখ টাকা দেন ছেলেকে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার জন্য। টাকা দেওয়ার প্রায় তিন বছরে চাকরি না হওয়ায় এবং টাকা ফেরত না পাওয়ায় হতাশায় আত্মহত্যা করেন অসহায় এমদাদুল হক। অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা বর্তমানে অবসরে। তাঁর বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের টুপকারচর পুরান গ্রামে। বাবার নাম মো. হজরত আলী।

এ ঘটনার পর বাজিতপুর থানায় ভুক্তভোগীর ছেলে মোহাম্মদ রাজিবুল হক বাদী হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করার প্রায় ২০ দিন পরও ধরা পড়েনি আসামি ছারওয়ার জাহান। আমরা অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

জানা যায়, ভুক্তভোগীর ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন। উদ্বিগ্ন বাবা টাকা দিয়ে চাকরির চেষ্টা করলে ছেলে আপত্তি করেন। কিন্তু বাবার মন বলে কথা! ছেলেকে বেকার দেখতে চাননি বলেই আপত্তির মুখেও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করে ১০ লাখ টাকা জোগাড় করে অভিযুক্ত ছারওয়ার জাহানের হাতে তুলে দেন। বিশ্বাস করেন, দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহকর্মী ঠিকই তাঁর ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করবেন।

যা ভাবেন তা কী আর সব সময় হয়? তিন বছর ঘুরেও যখন কিছু হলো না, তখন  লজ্জা, গ্লানি আর অপমানে নিজের মুখ আর কাউকে দেখাতে চাননি এমদাদুল হক। তাই চিরকুটে ছেলের চাকরির চেষ্টা আর হতাশার কথা লিখে রেখে বিসর্জন দেন নিজের জীবন।

এটি হয়তো একটি ঘটনা। কিন্তু এটি চোখে আঙুল দিয়ে দেশের ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের ভয়ংকর ছবিটিই সবার সামনে তুলে ধরে। ঘুষ, দুর্নীতি এখন আর রাখঢাকের পর্যায়ে নেই। প্রভাবশালী, সুযোগসন্ধানীরা অসহায় মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতিনিয়ত এই অপকর্ম করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এর একটি শক্ত সুরাহা হওয়া দরকার। দুর্নীতিবাজ যেই হোক, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত