Ajker Patrika

অ্যান্টিসেপটিক হলুদ

সম্পাদকীয়
অ্যান্টিসেপটিক হলুদ

কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমানের শরীরজোড়া ছিল প্রাণ–তাঁকে যাঁরা দেখেছেন তাঁদের সবাই এ কথা জানেন। ক্রীতদাসের হাসি লিখে আমির-ওমরাহদের ধন ও মাংসপ্রীতির এমন কটাক্ষ করেছেন, যা পড়লে আজও শরীর শিউরে ওঠে। তাতারির মুখ দিয়ে যে কথাগুলো বলিয়েছেন, তা এখনো পুরোনো হয়ে যায়নি।

আরেক বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবু জাফর শামসুদ্দীনের সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল শওকত ওসমানের। শওকত ওসমান যখন চট্টগ্রামে থাকতেন, তখন ঢাকায় এলে আবু জাফর শামসুদ্দীনের আগামসিহ লেনের ভাড়াবাড়িতেই উঠতেন। এরপর আবু জাফর শামসুদ্দীন ঢাকার রাজারবাগে একটা জমি কেনেন। তাঁরই কথায় শওকত ওসমানও সেখানে জমি কেনেন। পরে দুই বন্ধু পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন।

আশি বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচেছেন শওকত ওসমান, কিন্তু তাঁর ভেতরকার শিশুটি বেঁচে ছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। নিজেকে বুড়ো হয়ে যেতে দেননি।এখন শহরাঞ্চলে গ্যাসের চুলোয় রান্না করতে অভ্যস্ত সবাই। মাটির চুলা, কেরোসিন চুলার যুগ পার হয়েছে অনেক আগেই। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিতাস গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল আবাসিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের চুলায় রান্না করার। গ্যাস কোম্পানি বিনা পয়সায় গ্যাসের চুলা আর গ্যাসের সংযোগ দেবে–এই সিদ্ধান্তও হলো। ঠিক হলো, কোনো সৎব্যক্তির বাসা থেকেই গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হবে। প্যারিসের পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে শওকত ওসমানের নাম প্রস্তাব করা হয়। এরপর ঢাকায় শওকত ওসমানের বাড়িতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়। পত্রপত্রিকায় ছবি বের হয়। এ ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা।

রান্নায় মসলার ব্যবহার নিয়ে তাঁর ছিল নিজের মতো কিছু রসিকতা। তার একটা হলো হলুদ দিয়ে। বলতেন, ‘হলুদ হলো অ্যান্টিসেপটিক। হলুদের বদলে রান্নায় স্যাভলন বা ডেটল ব্যবহার করা যায়!’ 

সূত্র: আহমেদ পারভেজ শামসুদ্দীন, কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ১৪০-১৪১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত