সম্পাদকীয়
রাজিয়া খাতুনকে আপনি চিনবেন না। পাবনার আটঘরিয়ায় বসবাসরত এই নারীর এমন কোনো গুণ নেই, যার কারণে আপনি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবেন। আজকের পত্রিকার রাজশাহী সংস্করণের ছোট্ট একটি খবরে দেখা যায় তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখ। সেই সঙ্গে একটি কর্তিত হাত দেখার পর সে খবর না পড়ে উপায় থাকে না।
হ্যাঁ, গ্রাম-বাংলার যেকোনো অসচ্ছল পরিবারের মতোই উত্তরাধিকারসূত্রে রাজিয়া পেয়েছেন এক পেট খিদা। খিদার ভয়াবহতা কাকে বলে, সেটা সচ্ছল মানুষদের পক্ষে বোঝা কঠিন। শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ মূলত সাহিত্যের বই থেকে খিদা বা দারিদ্র্যের সংজ্ঞা জেনে নেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ কিংবা চার্লস ডিকেন্সের ‘অলিভার টুইস্ট’ পড়ে দারিদ্র্য নিয়ে হাহাকার করেন।
লিখেও ফেলেন অনবদ্য কোনো গবেষণাপত্র কিংবা সাহিত্য-আলোচনা। এসব নিয়ে রাজিয়ার কোনো খেদ থাকার কথা নয়। নিত্যদিন জীবনের সঙ্গে যে বোঝাপড়া তাঁকে করতে হয়, তাতে বাহুল্য ভাবনার প্রশ্নই আসে না তাঁর।
প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে কোনো কষ্ট ছিল না মনে। স্বামী রিহাজুল ইসলামের পাশে নির্ভীকচিত্তে দাঁড়িয়েছিলেন রাজিয়া। বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহযোগিতার হাত। কিন্তু ২০০৬ সালে স্বামীকে সাহায্য করতে গিয়েই ধানমাড়াইয়ের সময় চলন্ত মেশিনে জড়িয়ে যায় রাজিয়ার বাঁ হাতটা। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তা।
এরপর একটা ট্র্যাজিক গল্প শোনার জন্য মনকে প্রস্তুত করলে কেউ বাধা দেবে না, একমাত্র রাজিয়া ছাড়া। শরীর ও জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়কে অবলীলায় হটিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক হাত সম্বল করেই তিনি নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। পাটচাষিদের কাছ থেকে আনা পাট থেকে এক পা এবং এক হাত দিয়েই পাটের আঁশ ছাড়িয়ে যে পাটকাঠি পান, তা বিক্রি করে সংসার চালান। পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
কোথায়, কীভাবে সুখ পাওয়া যায়, এ প্রশ্নটির উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। সরকারি হাজার কোটি টাকা লোপাট করে যাঁরা তা পাচার করেছেন, তাঁদের কাছে সুখের সংজ্ঞা এক রকম, নিত্যদিন যাঁরা প্রার্থনালয়ে সৎ জীবনযাপনের অঙ্গীকার করে পকেটে ভরছেন ঘুষের টাকা, তাঁদের কাছে সুখের সংজ্ঞা অন্য রকম। অন্যায়কারীদের তালিকা রাবারের মতো টেনে বড় করা যাবে, তা ছিঁড়ে যাবে না। কিন্তু রাজিয়ার মুখভরা হাসি জানিয়ে দিচ্ছে, কায়িক পরিশ্রমের পর নিজ বাড়িতে খানিকটা খেতে পেলে সে সুখ ওই সব কালোবাজারি, ঘুষখোরের সুখকে ছাপিয়ে যায়।
চল্লিশ বছর বয়সী রাজিয়া শুধু এই অমানুষিক পরিশ্রম করেই দিন কাটাবেন কেন? তাঁর জীবনকে একটু আনন্দে ভরে দিতে হলে তো খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র জানিয়েছেন, আগে তিনি এই পরিবারের খবর জানতেন না। খোঁজ নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ও অন্যান্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন তিনি। সেটা করা হলে রাজিয়ার মুখের এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হবে নিশ্চয়ই। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে এ রকম খেটে খাওয়া রাজিয়াদের খোঁজও তো নেওয়া দরকার। দেশটা যে আসলে তাঁরাই গড়ে তুলছেন কোনো ধরনের প্রতিদানের তোয়াক্কা না করে, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।
রাজিয়া খাতুনকে আপনি চিনবেন না। পাবনার আটঘরিয়ায় বসবাসরত এই নারীর এমন কোনো গুণ নেই, যার কারণে আপনি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবেন। আজকের পত্রিকার রাজশাহী সংস্করণের ছোট্ট একটি খবরে দেখা যায় তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখ। সেই সঙ্গে একটি কর্তিত হাত দেখার পর সে খবর না পড়ে উপায় থাকে না।
হ্যাঁ, গ্রাম-বাংলার যেকোনো অসচ্ছল পরিবারের মতোই উত্তরাধিকারসূত্রে রাজিয়া পেয়েছেন এক পেট খিদা। খিদার ভয়াবহতা কাকে বলে, সেটা সচ্ছল মানুষদের পক্ষে বোঝা কঠিন। শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ মূলত সাহিত্যের বই থেকে খিদা বা দারিদ্র্যের সংজ্ঞা জেনে নেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ কিংবা চার্লস ডিকেন্সের ‘অলিভার টুইস্ট’ পড়ে দারিদ্র্য নিয়ে হাহাকার করেন।
লিখেও ফেলেন অনবদ্য কোনো গবেষণাপত্র কিংবা সাহিত্য-আলোচনা। এসব নিয়ে রাজিয়ার কোনো খেদ থাকার কথা নয়। নিত্যদিন জীবনের সঙ্গে যে বোঝাপড়া তাঁকে করতে হয়, তাতে বাহুল্য ভাবনার প্রশ্নই আসে না তাঁর।
প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে কোনো কষ্ট ছিল না মনে। স্বামী রিহাজুল ইসলামের পাশে নির্ভীকচিত্তে দাঁড়িয়েছিলেন রাজিয়া। বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সহযোগিতার হাত। কিন্তু ২০০৬ সালে স্বামীকে সাহায্য করতে গিয়েই ধানমাড়াইয়ের সময় চলন্ত মেশিনে জড়িয়ে যায় রাজিয়ার বাঁ হাতটা। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তা।
এরপর একটা ট্র্যাজিক গল্প শোনার জন্য মনকে প্রস্তুত করলে কেউ বাধা দেবে না, একমাত্র রাজিয়া ছাড়া। শরীর ও জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়কে অবলীলায় হটিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক হাত সম্বল করেই তিনি নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। পাটচাষিদের কাছ থেকে আনা পাট থেকে এক পা এবং এক হাত দিয়েই পাটের আঁশ ছাড়িয়ে যে পাটকাঠি পান, তা বিক্রি করে সংসার চালান। পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।
কোথায়, কীভাবে সুখ পাওয়া যায়, এ প্রশ্নটির উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম। সরকারি হাজার কোটি টাকা লোপাট করে যাঁরা তা পাচার করেছেন, তাঁদের কাছে সুখের সংজ্ঞা এক রকম, নিত্যদিন যাঁরা প্রার্থনালয়ে সৎ জীবনযাপনের অঙ্গীকার করে পকেটে ভরছেন ঘুষের টাকা, তাঁদের কাছে সুখের সংজ্ঞা অন্য রকম। অন্যায়কারীদের তালিকা রাবারের মতো টেনে বড় করা যাবে, তা ছিঁড়ে যাবে না। কিন্তু রাজিয়ার মুখভরা হাসি জানিয়ে দিচ্ছে, কায়িক পরিশ্রমের পর নিজ বাড়িতে খানিকটা খেতে পেলে সে সুখ ওই সব কালোবাজারি, ঘুষখোরের সুখকে ছাপিয়ে যায়।
চল্লিশ বছর বয়সী রাজিয়া শুধু এই অমানুষিক পরিশ্রম করেই দিন কাটাবেন কেন? তাঁর জীবনকে একটু আনন্দে ভরে দিতে হলে তো খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র জানিয়েছেন, আগে তিনি এই পরিবারের খবর জানতেন না। খোঁজ নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড ও অন্যান্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন তিনি। সেটা করা হলে রাজিয়ার মুখের এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হবে নিশ্চয়ই। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে এ রকম খেটে খাওয়া রাজিয়াদের খোঁজও তো নেওয়া দরকার। দেশটা যে আসলে তাঁরাই গড়ে তুলছেন কোনো ধরনের প্রতিদানের তোয়াক্কা না করে, সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।
আশা-নিরাশা নিয়ে যুগে যুগে জ্ঞানী-গুণী, মহাজনদের মুখনিঃসৃত বাণী আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে বিষম-বিভ্রমের মধ্যে ফেলে রেখেছে। কারণ, তাঁদের কেউ বলেছেন ‘ধন্য আশা কুহকিনি/তোমার মায়ায়, অসার সংসারচক্র ঘোরে নিরবধি, দাঁড়াইত স্থিরভাবে, চলিত না হায়; মন্ত্রবলে তুমি চক্র না ঘুরাতে যদি...’।
১৩ ঘণ্টা আগেশিক্ষা শুধু একটি মৌলিক অধিকার নয়, এটি ব্যক্তি ও জাতির ক্ষমতায়নের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো একটি তরুণ ও জনবহুল দেশে, যেখানে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ২৫ বছরের নিচে, সেখানে শিক্ষায় বিনিয়োগ কেবল মানবিক দায়িত্ব নয়, এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
১৩ ঘণ্টা আগেচাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষিপণ্য, সীমান্ত বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য দেশব্যাপী পরিচিত। দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন ধরে এ জনপদ উন্নয়ন-বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের যোগাযোগব্যবস্থায় রেলপথের ক্ষেত্রেও এ জেলা থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা সীমিত।
১৩ ঘণ্টা আগেপ্রতিটি শিশুর আছে ভালোবাসা, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার। তারা যাতে হাসিমুখে, স্বপ্নভরা চোখে পৃথিবীকে চিনতে পারে—সেই অধিকার সুরক্ষিত রাখা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। অথচ বাস্তবতায় ভিন্ন চিত্রই দেখা যায়। আজও সমাজের মধ্যে অসংখ্য শিশু তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
১৩ ঘণ্টা আগে