Ajker Patrika

চাই চলাচল উপযোগী রাস্তা

সম্পাদকীয়
চাই চলাচল উপযোগী রাস্তা

টাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে। সে সড়ক বছরের পর বছর খানাখন্দ আর গর্তে ভরে থাকে, অথচ টেকসই সংস্কারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয় না কেন, এ প্রশ্ন তোলা নিশ্চয়ই অন্যায় নয়।

বর্ষা এলেই এ সড়ক ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়। যেখানে ভারী যানবাহন গর্তে আটকে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় কেবল ‘প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে’ জাতীয় আশ্বাস কার্যত উপহাসের মতো শোনায়। নাগরিকদের করের টাকায় পরিচালিত সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কেন বছরের পর বছর এই দুর্ভোগ লঘু করতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর সুনির্দিষ্টভাবে জানা জরুরি।

এই সড়কটি শুধু টাঙ্গাইল নয়, ঘাটাইল, মধুপুর, গারো বাজার, ভালুকা, ময়মনসিংহসহ বিস্তৃত অঞ্চলের কৃষিজ পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। কলা, আনারস, কাঁঠালের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্যের বাজারজাতকরণ পুরোপুরি নির্ভর করে এই রুটের কার্যকারিতার ওপর। অথচ একে কার্যত পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে দীর্ঘ অবহেলায়।

এই সড়ক দিয়েই একসময় অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া হতো। এখন সে পথ আর ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, প্রতিটি গর্তে লুকিয়ে আছে বিপদ, আছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। একটি রাস্তা শুধু ইট-পাথরের সমন্বয় নয়, এটি হলো জীবন রক্ষার মাধ্যম। সেই মাধ্যম যখন ভয়ংকর হয়ে ওঠে, তখন তা উন্নয়নের চিত্র নয়, রাষ্ট্রীয় গাফিলতির দলিল হয়ে ওঠে।

মাঝে মাঝে কিছু ‘জরুরি ভিত্তিতে মেরামত’ হচ্ছে বলেই প্রশাসন দায়মুক্ত হতে পারে না। এমন সংস্কার কার্যত ‘চোখে ধুলা দেওয়া’ ছাড়া কিছু নয়। একটু বৃষ্টি, আর একটি ভারী যান গেলেই সেই মেরামত ‘পিছলে’ যায় আবার পুরোনো গর্তে। টেকসই সংস্কার পরিকল্পনা এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নই একমাত্র সমাধান। এখানে আর কালক্ষেপণের সুযোগ নেই।

আমরা বারবার দেখেছি, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়, প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, নিম্নমানের কাজ এবং জবাবদিহির অভাব জনগণকে শেষ পর্যন্ত ঠকায়। এই চক্রকে ভাঙতে হলে কেবল প্রস্তাব পাঠানো নয়, প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য যথাযথ তদারকি, বাস্তবায়ন পরিকল্পনার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এবং কাজ শেষ হওয়ার পর গুণগত মান যাচাই করার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।

একটি রাস্তা যখন ‘নরকের পথ’ নামে পরিচিত হয়, তখন প্রশাসনের উচিত শুধু মাথা নোয়ানো নয়, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। টাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়ক যেন আর কোনো শিক্ষার্থী, কৃষক, পথচারী বা রোগীর প্রাণঘাতী গর্তে নিপতিত না হয়, সেটাই হোক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রধান অঙ্গীকার। জীবন ও যোগাযোগের এই পথ যেন সত্যিই মানুষের হয়—এটাই এখন সময়ের দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

সখীপুরে সন্তানদের সামনেই ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী পলাতক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত