Ajker Patrika

কলা

সম্পাদকীয়
কলা

দুই যুবক এমন এক কাণ্ড ঘটালেন, যা নিয়ে একটা ভালো চিত্রনাট্য লেখাও সম্ভব নয়। মানুষকে বোকা বানিয়ে, জালিয়াতি করে পার পাওয়া নিয়ে কত নাটক-সিনেমা হয়েছে! এমনকি সেই চোর-বাটপারের কাহিনি পড়ে কিংবা সেই কাহিনি নিয়ে সিনেমা তৈরি হলে তাদের প্রতি সহানুভূতিও দেখিয়েছে মানুষ, কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের এ দুই যুবক চাঁদাবাজিটাও ভালোভাবে রপ্ত করতে পারেননি। শিক্ষানবিশ হিসেবেই কলাবোঝাই পিকআপ থামিয়ে টাকা আদায় করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা! ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’ প্রবাদবাক্যটিকে কলা দেখিয়ে তাঁরা কিনা থামালেন কলাবোঝাই পিকআপ ভ্যান! এ বড় লজ্জার কথা!

জালিয়াতদের নিয়ে যেসব বই বা চলচ্চিত্রের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, তার মধ্যে ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’, ‘ক্যান ইউ এভার ফরগিভ মি’, ‘দ্য ক্যাপ্টেন ফ্রম কোপেনিক’, ‘আই লাভ ইউ ফিলিপ মরিস’, ‘বান্টি আওর বাবলি’ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আরও অনেক ছবি আছে, যেগুলোতে প্রতারকদের সূক্ষ্ম প্রতারণা দেখে চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু প্রতারণা বা চাঁদাবাজিতে হাত পাকানোর জন্য তৈরি না হয়েই মো. রাকিব মিয়া আর মো. জাহিদ হাসান কেন মোটরসাইকেল রাজপথে রেখে পিকআপ থামানোর নাটক করতে গেলেন, তা বোধগম্য নয়। আহা!

যদি চৌকস জালিয়াত হতেন, তাহলে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতেন কাজে! রাজপথে আড়াআড়ি মোটরসাইকেল রেখে থামাতে পারতেন চোরাই অস্ত্র বা মোবাইলফোন বোঝাই ট্রাক। তারপর বলতে পারতেন, ‘ট্রাকে অবৈধ মাল আছে!’ বোঝাপড়ার অফার দিতেন। এরপর যা হয় আরকি! ঝামেলা এড়াতে ওই ট্রাকে থাকা দুর্বৃত্তরা ‘পুলিশ–ম্যাজিস্ট্রেট’কে ‘খুশি’ করত। রাজার মতো ফিরে আসতেন ছদ্ম ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব মিয়া আর ছদ্ম পুলিশের সার্জেন্ট জাহিদ হাসান।

এসবের কিছুই হলো না। ভালো হোমওয়ার্ক করেননি বলে ধরা পড়ে গেলেন। সাধারণত রাস্তায় যদি পুলিশ কোনো মালবাহী যান থামায়, তাহলে সেখানে বিভিন্ন রকম নাটক হতে পারে।

অন্যগুলো বাদ দিয়ে একটাই কেবল বলি, হয় নিয়মের বাইরে বেশি পরিমাণ মাল বহন করছেন অথবা যানের কাগজপত্র ঠিক নেই অথবা এমন মাল নিয়ে যাচ্ছেন, যা নিয়ে সন্দেহ থাকতেই পারে। তাই মওকামতো মালবাহী যান আটকাতে পারলে সত্যিই সে নাটক ‘কমেডি’ নাটকে পরিণত হতে পারে। আর গোল বাধলেই তা ট্র্যাজেডি। আর এই প্রক্রিয়ায় যদি রাকিব-জাহিদের মতো অদক্ষ চাঁদাবাজ যুক্ত হয়ে পড়েন, তবে তা সীমাহীন হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে।

রসিকতা পাশে সরিয়ে রেখে এবার বলি, করোনার কারণে কর্মসংস্থানের অভাব কিন্তু প্রকট হয়ে পড়েছে। এখন বাঁচার তাগিদেই মানুষ নানা ধরনের অভিনব সব কায়দাকানুন রপ্ত করার চেষ্টা করছে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এই প্রবণতা রোধ করতে হবে। সমাজে যেন এ ধরনের ব্যাধি ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই নয়, আশপাশের মানুষেরও। চেনাজানা কারও জীবনযাত্রার ধরন পাল্টে গেলে তাঁরা সেটা চিহ্নিত করে পুলিশে খবর দিতে পারেন। তাতে হয়তো প্রতারণা বা চাঁদাবাজি নিয়ে একটা উৎকৃষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাণ হবে না, কিন্তু সমাজ বাঁচবে। সেটা বোধ হয় বেশি জরুরি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত